বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০২৪
ছোটগল্প
ম্যানিকুইন
শুক্রবার, ২১ জুন, ২০২৪
গল্প | প্রদীপ কুমার অধিকারী
ফেস্টুন
এখনও তেমন করে ভোরের আলো ফোটেনিI রিক্সাটাকে শিশুগাছের নিচে দাঁড় করিয়ে জগন্নাথ এসে বসে কালির চায়ের দোকানের বেঞ্চিটাতেI প্রতিদিন আসে এবং প্রতিদিন এই ভাবেই বসেI পিচ রাস্তার ধারে, কুসুমগ্রাম বাস স্ট্যান্ডI পাশ দিয়েই তো পিচ রাস্তা ভোর বেলা থেকেই শুরু হয়ে যায় বাসের যাতায়াত, একদিকে বালাসোর, কটক, পুরি, মেদিনীপুর, মেচেদা, বাঁকুড়াI অন্যদিকে কলকাতা, হাওড়া, হলদিয়া, কোলাঘাটI কালী তার চায়ের দোকান ভোর বেলাতেই খুলে দেয়I বাসের জন্য অপেক্ষমান যাত্রীরা চা বিস্কুট খায়I জনার্দনও কালির দোকানের বেঞ্চিতে বসে চা খায়I চা শেষ হলে একটা বিড়ি ধরায়I বাস যাত্রীরা নামলেই ডাক পড়বে তারI রিক্সা নিয়ে সে পারি দেবে-- বাজারপাড়া, চরদীঘি, বড় ঠাকরুন মায়ের মন্দির, এই রকম নানা জায়গায় যাত্রীদের ফরমাশ অনুযায়ীI শীত-গ্রীষ্ম- বর্ষা বারোমাস এই রুটিন মাফিক জীবনI মাটির ভাঁড়ের চায়ে চুমুক দিয়ে জনার্দন শিশু গাছটার দিকে তাকিয়ে পাতার ফাঁক দিয়ে সূয্যি ঠাকুরের উদয়ের প্রস্তুতি দেখতে পায়I আর তখনই ও দেখে নেয় ফেস্টুনটাকে, এখনও ঠিক আছে হওয়ার দাপটে ছিঁড়ে যায় নিI জনার্দন অবশ্য আগেই দেখে নিয়েছে ফেস্টুনটা শিশুগাছের সঙ্গে এমন ভাবে বাঁধা আছে যাতে সরাসরি হাওয়া ফেস্টুনটার ওপর ঝাপ্টা না দেয় I জগন্নাথ যখন ছোট ছিল তখন দেখেছে, রাজনৈতিক দল গুলো তাদের প্রচার করতো খবরের কাগজের উপর লাল আলতা দিয়ে লিখতো I এখন দিন বদল হয়েছে, এখন উন্নয়নের জোয়ার! যার প্রতিফলন তাদের প্রচার পত্রেও, দল নেতার রঙিন ছবি সহ, ফ্লেক্স পেইন্টিং-এ ব্যানার ফেস্টুন I একদিকে ভালোই তার খড়ের চাল ঢাকতে পলিথিন সিট বেশ উপযুক্ত I
সুযোগ বুঝে ওটাকে বাড়ি নিয়ে যাবে I ভোট অনেক দেরী ততদিন অপেক্ষা করা যাবে না I পার্টি অফিস থেকে অনেক ফেস্টুন ব্যানার পাঠিয়ে ছিল, এরমধ্যে ওই ফেস্টুনটাই সব থেকে মজবুত এবং বড় I মাঝেমধ্যেই খেয়াল রেখেছে আর কারোও নজর পড়েনি তো ফেস্টুনটাতে I
গত বর্ষায় ওর ঘরের খড়ের চাল দিয়ে জল পড়েছিল I খড়ের আর দোষ কি, চার বছর চালে এক আঁটি নতুন খড় গোঁজা হয় নি,পচে গিয়েছে বোধ হয় I এইবারটা না টিকিয়ে রাখলে, মাটির দেয়াল ধসে পড়বে আর মেঝে ভেসে যাবে বর্ষার জলে I বাজারের অবস্থা দিন কে দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে I
জগন্নাথের মনে পড়ে গেলো বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় বৌ বলে ছিল- লতার শরীরটা ভালো নয় একটা ভালো ডাক্তার দেখনো দরকার I বেশ কয়েকদিন হয়ে গেল জ্বরটা ছাড়ছে না I দুঃসময় যেন তার পিছু ছাড়ছে না I
অথচ কিছুদিন আগে পর্যন্ত তার অবস্থা এমন ছিল না, কিছুদিনের মধ্যেই চোখের সামনে ঘটনা ঘটে গেলো! কি একটা ভারী শিল্পের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা করার জন্য এলো, জমিটমি সব দেখে গেলো I তার মত জমির মালিকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো I আজও মনে আছে, যখন প্রথমে বহুজাতিক সংস্থাটি কারখানা গড়ার জন্য জন্য গ্রামে এসে রাস্তার ধারে সমস্ত জমি কিনে নেবার প্রস্তাব রাখলো তখন সে কি উন্মাদনা গোটা এলাকা জুড়ে I কোম্পানিটা বড় উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে I সেই সময় বেশ আলোড়ন পরে গিয়েছিলো এলাকাটায় I রাস্তার ধারের জমিগুলো এক লাফে অনেক দামে বিক্রি হতে শুরু করেছিল I কারখানা যেখানে গড়ে উঠতে উঠতো, সেখানেই এক কথায় ওর জমিটা লিখে দিয়েছিলো জগন্নাথ, ওরা ছেলেটার একটা চাকরি দেবে বলেছিলো আর সঙ্গে কিছু টাকা I তার পর কোম্পানিটা কেন যেন চুপ মেরে বসে গেলো I সব ঠিকঠাক থাকলে ওর আজ এই অবস্থা হতো না I কাজ শুরু হবার কিছুদিনের মধ্যেই কি জানি কোনো এক কারণে গোলমাল আরম্ভ হল, ততদিনে কারখানার পাঁচিল দেওয়া হয়ে গিয়েছে I জগন্নাথ একদিন দেখে এসেছিলো, চেনাই যাচ্ছিলো না জায়গাটা I লরি, পে-লোডার, ট্র্যাক্টর, মাটি কাটার মেশিন এস্কাভেটর, ফ্যাক্টরি শেড তৈরির জন্য বড় বড় করোগেট শেড I তারপর শুরু হলো মহা গণ্ডগোল I দফায় দফায় কত নেতা এলো, মিটিং করলো, মিছিল করলো, অবরোধ হলো I সবই নাকি জমির মালিকের স্বার্থে I
দুপুর বেলায় বাস স্ট্যান্ডটা বেশ নির্জন হয়ে যায়, এক ফাঁকে জনার্দন শিশুগাছ টায় উঠে নামিয়ে নিয়েছিল দশফুট বাই আটফুটের ফ্লেক্সের ফেস্টুন, ভালো করে মুড়িয়ে চার পাঁচ বার ভাঁজ করে, ঢুকিয়ে নিয়েছিল রিকশার সিটের নিচে I মনে মনে খুব খুশি হয়েছিল, মালা দেখলে খুশিই হবে I বেচারা কয়েকবার বলেছে- “খড়ের চালের একটা ব্যবস্থা করো, না হলে এবার বর্ষার জলে ভেসে যাবে ঘরের দেয়াল, ভেঙেও পড়তে পারে I একখানি তো ঘর, ছেলে-মেয়ে কে নিয়ে কোথায় যাবো বলো দেখি”I
সন্ধেবেলায় বাড়ি ফিরে, হাতের ফ্লেক্সটা দেখায় মালাকে, বলে ভোটতো শেষ হতে দেরী আছে তার আগেই কেউ যদি ঝেঁপে দেয় তাই এটা খুলে নিয়ে এলাম I
মালা বলল -খবরদার কাউকে বোলো না, কেউ দেখেনি তো? পাড়ায় গণ্ডগোল শুরু হয়েছে, কোন পার্টির দেয়াল লেখা ছিল কে বা কারা তার ওপর গোবর লেপে দিয়েছে I তোমার হাতের এই ফেস্টুনটা দেখলে আর রক্ষে থাকবে না, এরপর পুলিশ আসবেই তোমাকেই ধরবে I জনার্দন মন থেকে সব দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে বলে - এক গ্লাস জল দাও তো দেখি, তেষ্টায় গলাটা একেবারে শুকিয়ে গিয়েছে I "জনার্দন বাড়ি আছো নাকি" - বাড়ির বাইরে থেকে তার নামের ডাক শুনতে পায়। হঠাৎ বুকের ভিতর ছ্যাঁৎ করে ওঠে অজানা একটা আশঙ্কা মনের ভিতরে উঁকি দেয়।জগন্নাথ মনকে শক্ত করে। কাঁধের গামছা দিয়ে মুখের ঘাম মুছে বাইরে এসে দাঁড়ায়, বাইরে এসে দেখে কানাই। কানাই পার্টির হোলটাইম কার্যকর্তা। আগে রিকশা টানতো এখন টোটো চালায় I কানাই বলে -"আজ বিকেলে বাস স্ট্যান্ডে পার্টির মিটিং আছে, সময় মতো পৌঁছে যাবে কিন্তু"I লড়াইটা এবার শুধু এক জনের নয়, তোমার আমার সবার লড়াই I কথাটা বলে অতি ব্যস্ত ভাবে বলে সাইকেলের সিটে উঠে বসে I জগন্নাথ ভাবে, কথাটার মধ্যে ঝাঁজ আছে, আধপেটা অবস্থায় রক্ত গরম করে দেয় I জনার্দন তো কোন ছাড় গ্রাম প্রধানের আদেশ অমান্য করার সাহস কারোও নেই I বিকেল বেলায় ঠিক সময় জনার্দন হাজির হয় বাস স্ট্যান্ডে I অনেক লোক জড়ো হয়েছে। কানাইয়ের পাশে গিয়ে বসতেই ভক করে মদের গন্ধ পায় I সকলের থেকে আলাদা একটা জায়গা খুঁজে নেয় জগন্নাথ, এবার শুনতে পায় গ্রাম প্রধানের বক্তব্য- এবার জমি ফেরত নয়, কারণ ওই জমি এখন চাষের অযোগ্য হয়ে গিয়েছে, চাষের জন্য ওই জমি তৈরী করতে চাই টাকা I কারখানা আর হবে না তাই জমি ফেরত চাই আর সঙ্গে টাকা এবং প্রাপ্য টাকার ওপর সুদ সমেত প্রাপ্তির আশ্বাস I বহুদিন পর একসঙ্গে এতগুলো টাকার দাবি শুনে সকলেই বেশ চনমনে হয়ে উঠেছিল কিন্তু দেয়াল লিখনের ওপর গোবর লেপে দেবার প্রসঙ্গ আসায় সকলেই কেমন যেন অস্থির হয়ে উঠলো। এই সূত্রে মিটিংয়ে আচমকা ফেস্টুনের প্রসঙ্গটা উঠবে সেটা কল্পনাও করেনি জগন্নাথ I গ্রাম প্রধান বলে – গত কালকেও শিরিষ গাছে আমাদের ফেস্টুন ছিল, আজ নেই I যেই এই কাজ করুক তারা কিন্তু কেউ পার পাবে না I আমাদের দলের ব্যানার ছিঁড়ে আমাদের আন্দোলন বন্ধ করতে চাইছে, সেটা আমরা কিছুতেই হতে দেব না I জগন্নাথের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করে I গামছা দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিয়ে প্রধানের বক্তব্যে মন দেয় I হঠাৎ কানাই টালমাটাল অবস্থায় উঠে দাঁড়িয়ে জগন্নাথের কাছে এলো এবার একেবারে সমানে সমানে চোখে চোখ রেখে বলল – শা...লাআ.... ঘাঘু... ম...আ....ল I ভে,,,বে,,,ছ ডুবে ডুবে জ..অ...ল খাবে, শি..ই..বে..র বাবাও টের পাবে না I জমি ফেরত নেবে, পয়সা ফেরত নেবে সুদ সমেত আর আমাদের পতাকা ছিঁড়র...বে, ভাগ শালা I কানাইয়ের কোমরে গোঁজা পিস্তল দেখতে পায় জগন্নাথ I বক্তব্যের মাঝে আরো কিছু কাঁচা খিস্তি দেয় I মদের গন্ধ সহ্য করতে না পেরে মুখ সরিয়ে নেয় জগন্নাথ I মিটিং যেন আক্রমনাত্বক রূপ নেয়, জগন্নাথ সরে আসে সেখান থেকে I
বাসস্ট্যান্ডের মিটিং শেষ, সন্ধ্যা নেমেছে বেশ কিছুক্ষণ আগেই I শিশু গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে, বিড়ি ধরিয়ে অনেকক্ষন বসে থাকে জগন্নাথ I জগন্নাথ দেখে, দূরে বন্ধ কারখানার মাঠে অনাবিল কুয়াশায় ঢেকে গিয়েছে I কারখানার অর্ধ নির্মিত শেড, যথেচ্ছ ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা ভারী ভারী মেশিন, জায়গায় জায়গায় গজিয়ে ওঠা বুনো ঘাসের জঙ্গল I নির্জন কারখানা চত্তর অন্ধকারে পরে থাকে সারারাতে I এমনটা যে হবে তা কে জানতো I কালির চায়ের দোকানের সামনে অপরিসর তন্দ্রাচ্ছন্ন অন্ধকার, তারপাশে পার্টি অফিস তার মতো শুধুই অতীত I দুধসাদা ফ্রক পড়া ছোট্ট অসুস্থ মেয়েটার মুখখানি মনে পড়ে I মেয়েটাকে ডাক্তার দেখানোর অসহায় বৌয়ের কাতর অনুনয় কানে ভেসে আসে I আর মনে পড়ে ফেস্টুনটার কথা I জগন্নাথ উঠে দাঁড়ায়, আধ পোড়া বিড়ি ফেলে দেয় মাটিতে, পরনের লুঙ্গি কোমরের গামছা শক্ত করে বেঁধে নেয় I রওনা দেয় বাড়ির দিকে I
প্রথমে জমানো কিছু টাকায় সংসারটা টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো, কিন্তু মেয়েটার শরীর খারাপ হয়ে যেতেই ডাক্তারবদ্যি, হাসপাতাল, নানান টেস্ট... সঞ্চয়ের ঘরে টান পড়লো I এইসব রোগ কী জগন্নাথের ঘরে মানায়? যেতিস বাবা অবস্থাপন্ন লোকের ঘরে, তা নয় I জগন্নাথ ভেবে কুল কিনারা পায় না I
চিকিৎসা করাতে মেয়েটার শখের হারমোনিয়ামটা বাজারে 'মডার্ন মিউজিক' দোকানে বিক্রি করেছে। সে আর কত ! মেরে কেটে দু হাজার, তাই নিয়েই সন্তুষ্ট হতে হয়েছিল জগন্নাথকে I
দু বছর আগে চোদ্দোহাজার টাকায় কলকাতা থেকে কিনেছিলো ওটাI বড় কষ্ট হয়েছিল সেদিন I মেয়েটা করুন চোখে তাকিয়ে দেখেছিলো তার বাবার হারমোনিয়াম নিয়ে যাওয়া, বাধা দেয়নি, প্রতিবাদও করেনি, নিস্পলক চোখের কোন দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে দেখে জগন্নাথ মাথায় হাত দিয়ে বলেছিল সুস্থ হয় ওঠ, আবার কিনে দেব I
এসব ভাবনার মাঝে বাড়ির কাছে পৌঁছে যায় জগন্নাথ। কাছাকাছি আসতেই দেখতে পায় বাড়ির সামনে অনেক লোক আর আগুনের লেলিহান শিখা বাড়ির চাল থেকে আকাশে উঠছে I মাচানের বাঁশ আর খড় পট পট আওয়াজ করে ধু ধু করে জ্বলছে I বাড়ির উঠানের একপাশে মালা মেয়েকে নিয়ে অসহায় ভাবে দাঁড়িয়ে আছে যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে I জগন্নাথকে দেখে হা হুতাশ করে কেঁদে উঠলো দুজনেই, ছেলেটা বালতি নিয়ে জল ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে I যদিও আজ মিটিং-এর বক্তব্য অনুযায়ী অনুমান করেছিল এক অশুভ সংকেত I তবে প্রতিঘাতটা যে এমনভাবে আসবে সেটা কল্পনা করেনি I বুকের ভিতরটা যেন খড়ের চালের আগুনের মত হু হু করে জ্বলতে লাগলো I আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না, হাঁটু মুড়ে আঙ্গিনায় বসে পড়ল I তার একমাত্র সম্বল মাটির দোচালা মাটির ঘরখানি সেটাও চোখের সামনে পুড়ে শেষ হয়ে যেতে দেখল I বুকের ভিতরটায় যেন বাইরের আগুনের চেয়েও তপ্ত আগুনের শিখা I চোখ মুখ ফুলে উঠেছে, অভিমানে রাগে দুঃখে ক্ষোভে ভিতরে ভিতরে ফেটে পড়ল I এত কিছুর মধ্যে ফেস্টুনটার কথা মনে ছিল না I হঠাৎ তার মনে পড়ল, এবার উঠে ফেস্টুনটাকে রিকশার সিটের নিচ থেকে বের করে এক টান মেরে ছুঁড়ে দেয় জলন্ত খড়ের চালে I ফ্লেক্স বড় জ্বলনশীল পদার্থ I সামান্য আগুনের ছোঁয়া পেতেই দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল দ্বিগুণভাবে I এইভাবে কতক্ষণ কেটে গেল কে জানে I হঠাৎ স্কুটারের আলো দেখা দেয়, অনিরুদ্ধ মহান্তি, আগে শাসক দলের কর্মী ছিল, কারখানার জমি কেনা বেচার বখরা নিয়ে গোলমাল হয়ে দল ছেড়ে এখন বিরোধী পক্ষের সঙ্গে আঁতাত করেছে I স্কুটারের স্টার্ট বন্ধ করে বলে – "শোন কাল পার্টি অফিসে আসবি, একটা দরখাস্ত করবি, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় নাম লিখিয়ে দেব I"
দেখতে দেখতে ছোট খাটো একটা ভিড় জমে যায় জগন্নাথের বাড়ির সামনে I জগন্নাথের ঘরের আগুন লাগানোর প্রসঙ্গটা ক্রমে উধাও হয়ে গেল সমবেত ভিড়ে I আলোচনার বিষয়বস্তু ঘাঁটিগাড়ে বাংলার বাইরে অন্য দেশে, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, পাঞ্জাবে I আধঘন্টা পর অনিরুদ্ধ মহান্তি বিদায় নেয় যথাচিত সাহাযের আশ্বাস দিয়ে I
তখন অনেক রাত, বাড়ির কারোও আজ কিছু খাওয়া হয়নি, তারও পেটে পড়েনি কিছু I খড়ের চালের আগুন নিভে গেলেও নিভে যাওয়া চাল থেকে সরু সুতোর মত সাদা ধোঁয়া অল্প অল্প বের হচ্ছে আর উঠে যাচ্ছে আকাশে, মিলিয়ে যাচ্ছে I খড় বাঁশ পোড়া গন্ধটা তখনও ছড়িয়ে আছে বাড়ির চার পাশে I বাড়ির চারিপাশে একটা গাঢ় অন্ধকার আর একটা ভয়ংকর অন্ধকারের কথা মনে পড়িয়ে দেয় I
"জিতে জী" না মরার সিদ্ধান্ত নেয় জগন্নাথ I বাংলার গ্রামে গ্রামে ঘরে ঘরে আজ প্রানের চেয়ে ফেস্টুনে-এর দাম অনেক বেশি I জগন্নাথের কিছুটা সময় লাগলো সিদ্ধান্তটা নিতে I মালা আর লতা, বাইরে উঠোনের এক কোনে শুয়ে পড়েছে I বউ আর মেয়ে কে ডাক দেয় I মালা ও মালা...I ছেলে মেয়ে দুটোকে ওঠাও দেখি I
অবাক বিস্ময়ে মালা জগন্নাথে দিকে তাকায়, কিছু বোঝার আগেই জগন্নাথ বলে – চল আমারা এই পোড়া দেশে আর থাক...ব... নি, চলে যাব, আর থাকব নি এখানে I মালা ঘুম চোখে বলে – কোথায় যাবে? জগন্নাথ ধরা গলায় বলে – যে দিকে দুচোখ যায়, সে দিকেই চলে যাব, এখানে আর থাকব নি, আর থাকব নি I
-
প্রচ্ছদ ঋণঃ- দেবদুত মুখোপাধ্যায় সূচীপত্র ----------------------- প্রচ্ছদ ------------------ দেবদুত মুখোপাধ্যায় সম্পাদকীয় কলাম ------------...