মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২৫

Kobitar Alo January Sankhya 2025

   

Kobitar Alo January Sankhya 2025


প্রচ্ছদ ঋণঃ- অদিতি সেনগুপ্ত


সূচীপত্র
-----------------------



প্রচ্ছদ
------------------
অদিতি সেনগুপ্ত


সম্পাদকীয় কলাম
-----------------------------
কৌশিক চক্রবর্ত্তী


কবিতা ভিত্তিক
------------------
পরাণ মাঝি
প্রেম সরকার
অভিজিৎ সুর
তমাল ঘোষ
জীবন সরখেল
অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়
উৎপল গুহ
রহিত ঘোষাল
দয়াময় পোদ্দার
শাশ্বত বোস
প্রিয়াঙ্কা সঞ্জীব দাস
সুমিতা চৌধুরী
সুশান্ত সেন
রাজরুল ইসলাম


সম্মিলন
------------------
অর্ণব সামন্ত
শিশির আজম
শিবালোক দাস
গৌতম কুমার গুপ্ত
রহিত ঘোষাল


গল্পাণু
------------------
ঈপ্সিতা মাইতি
কেয়া নন্দী


স্মৃতির দুয়ারে
------------------
মেনকা সামন্ত


মুক্তপদ্য
------------------
নিমাই জানা


অরাজনৈতিক ভ্রম
------------------------------------
চিরঞ্জীব হালদার


আণুপূর্বিক
------------------------------------
শংকর ব্রহ্ম
নীলম সামন্ত



সম্পাদকীয় কলাম
-----------------------



দেখতে দেখতে আরও একটি একুশ তারিখে আমরা পা ফেলেছি। আর পূর্ব কথামতো আপনাদের সামনে নিয়ে এসেছি কবিতার আলোর আর একটি সংখ্যা। কবিতার আলো একটি মাইলস্টোন। প্রতিদিন একটু একটু করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি এই পত্রিকাটিকে। আমরা যখন পা ফেলেছি সামনে, আপনাদের দৃপ্ত পদক্ষেপও তার সঙ্গে মিলেমিশে গেছে। অন্ধকার থেকেই যেমন আলোর উৎস খুঁজতে হয়, রাতের মধ্যেই যেমন লুকিয়ে থাকে দিনের বীজ, ঠিক তেমন ভাবেই আমরা চেষ্টা করেছি সমস্ত প্রতিবন্ধকতার ভিতর দিয়ে আরও বেশি করে সবুজের সন্ধান করতে। আর এই সবুজটুকু খুঁজে নেওয়ার মুহূর্তে যা সব থেকে বেশি পেয়েছি তা হল আপনাদের সাহচর্য।

কবিতা আর নির্জনতাকে এককে প্রকাশ করলে নির্ভয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন আপনিও। একটি নিরাপদ জায়গায় দাঁড়িয়ে কখনও পা ফেলতে চেষ্টা করেছেন গনগনে আগুনের আঁচে? হয়তো পা সাময়িক পুড়ে যাবে, কিন্তু সেখান থেকেই জন্ম হবে আরও কিছু নতুনের। আসলে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করাই যেকোনো কাজের প্রধান অনুপ্রেরণা। আর আমরা ধীরে ধীরে সেই অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছি নিজেদের। আমরা আপনাদের থেকে প্রতিনিয়ত শিখি। আর সেখান থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে তার সার্থক প্রয়োগ ঘটাতে চেষ্টা করি এই পত্রিকায়।

এখন যেটুকু কথা বলা দরকার তার মূল ভিত্তি হওয়া উচিত উত্তর আধুনিকতা। এই বিষয়টিকে মূল মন্ত্র ধরে নিয়ে আমরা কাঠামো নির্মাণ করে চলেছি এক নির্দিষ্ট ঠিকানায়। যাঁরা এই ঠিকানায় নিজেদের অস্তিত্বের স্থায়ী প্রমাণ দিয়েছেন তাঁদের জন্য অনেক শুভকামনা রইল। উত্তর আধুনিক ভাবধারায় নতুন সৃষ্টিকে যাঁরা রূপদান করেছেন, তাঁদের কলম আমরা রাখতে পেরে গর্বিত। আর যাঁদের লেখা রাখতে পারিনি এই সংখ্যায়, তাঁদের প্রত্যেককে বলি আমাদের সংখ্যাটি পড়ে আবার লেখা পাঠান দপ্তরে। আপনার লেখাটি প্রকাশিত না হওয়ার অর্থ আপনাকে বর্জন করা নয়। লেখার রকমফেরে বদলে যায় অনেক কিছু। তাই আপনারা সকলে আমাদের সাথে থাকবেন এই আর্জি নিয়েই এই জানুয়ারি সংখ্যা আপনাদের সামনে নিয়ে এলাম।

নৈঃশব্দ্য ক্ষণস্থায়ী। আর সেই নির্ভরতার পথে আমাদের পথ চলা আবহমান গতিতে। একটি পত্রিকা চালাতে গেলে অনেক প্রতিবন্ধকতার সামনে পড়তে হয়। কিন্তু লড়াইটা আমাদের একার নয়। যে লিটল ম্যাগাজিন ভাবধারায় বলিয়ান হয়ে আমরা আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি, তা নিজেদের অস্তিত্বকে আরো কঠিন করে তুলবে, এই আমাদের বিশ্বাস। আর তার প্রমাণস্বরূপ আমরা প্রতিনিয়ত প্রচুর পরিমাণে পাচ্ছি আপনাদের লেখা। তাই লেখা বাছাই করতে গিয়ে তুল্যমূল্য বিচারে প্রচুর পরিশ্রম করতে হচ্ছে আমাদের। তবে এ আমাদের পরিশ্রম নয়। এই সমস্ত প্রকাশিত অথবা অপ্রকাশিত লেখার সঙ্গে আমরা নিজেদের এগিয়ে চলাকে অনেক আগেই  এক সুতোয় বেঁধেছি। তাই সবশেষে এটুকুই বলার, যে পথে আর অন্ধকার নেই, সেই পথটাই আমরা বেছে নিলাম আগামীর জন্য। কবিতার আলো পড়ুন এবং অন্যদের পড়ান।


কৌশিক চক্রবর্ত্তী
সম্পাদক
কবিতার আলো



কবিতাভিত্তিক
---------------------



এই পথ তো চলে গেছে

পরাণ মাঝি

মাসি,  চলো এবার হেঁটে আসি; ঘুম তো মৃত্যুর সমান  আবার অমৃতফল তাও জানি 
তবু চলো -- জেগে জেগে অমল কুয়াশার চাদর সরিয়ে ঈশ্বরের প্রসাদ হিমানি  মাখি 

ভোরের হাঁটা করে দেয় সব অ-সুখ কে টাটা 
বাঁটার বাঁটা তস্য বাঁটা; জীবন জুড়ে কেবলই হাঁটা 

ও মা-সি 
ভোর তো হ'য়ে এলো, এবার চলো -- হেঁটে হেঁটে রাধা- কৃষ্ণ নামে ভাসি 
না - না,  আর নয় গড়িমসি  
চলো,  আমার হাত ধরে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে শাপলা রঙে হাসি 

মা- সি, ও মা- সি 
চলো এবার হেঁটে আসি --
এই পথ তো চলে গেছে হয় বৃন্দাবন না হয় কাশী 
রাধে,  রাধে! 
চলো মন বৃন্দাবন; হরেকৃষ্ণ সেধে সেধে... 

------------------ 

ছন্নছাড়া পাখি

প্রেম সরকার

ছিল আমার এক অবুঝ পাখি
            উড়তো নিজের আকাশ জুড়ে,
ধরলে তাকে ফিরতো ফাঁকি
                থাকতো খাঁচার মুখটি মুড়ে;
ভাবতো আমায় দুষ্টু মানুষ
                   চাইতো শুধু আকাশ ছুঁতে
তাইতো দিলাম দুইটি ডানা;
             ভাঙতে পাঁজর আজ প্রভাতে।
যাওয়ার মোড়ে থমকে গিয়ে,
               ফিরলো নজর আমার দিকে
বললাম আমি, চাও কি এবার;
                    চাইলো কথা অশ্রু চোখে,
বললো পাখি, ফুটলো শ্রুতি
                      হঠাৎ তখন এক ঝলকে;
মেয়ে ভেবোনা মানুষ ভেবো
                    কাটাবো জীবন তোমার বুকে।

------------------ 

এমনি এমনি

অভিজিৎ সুর

আমার এখন এমনি এমনি কত কিছু ভালো লাগে, প্রজাপতির উড়ে যাওয়া, ভ্রমরের মধুপান;
ফুলের পাপড়ির ওপর হেমন্তের বাতাসের আলতো ছোঁয়া দেখতে ভালো লাগে, এমনি এমনি ভালো লাগে।

ছেলেরা মেয়েরা সাইকেল চালিয়ে পড়তে যায়
আমার বাড়ির সামনে দিয়েই,
তাদের হাসি দেখি, দু একটি কথা কানে আসে,
তাদের ছায়া পড়ে মাটিতে আমার ভালো লাগে,
এমনি এমনি ভালো লাগে।

ফাঁকা বাড়িতে একা একা ঘুরি,
সমস্ত ঘরগুলোয় জমে থাকা অতীত বাতাস
যেন ছুঁতে পারি, ভালো লাগে;
পায়ে পায়ে ছাদে চলে যাই, ঘুরে বেড়াই মাথায় আকাশ নিয়ে, ভালো লাগে, এমনি এমনি ভালো লাগে।

মাঝে মাঝে গোদরেজ আলমারি খুলি,
মায়ের না পড়া নতুন কয়েকটি শাড়ি -- হাত রাখি,
ভালো লাগে;
ভালো লাগে সেই কাঠের চেয়ার
যেখানে বাবা বসে রোদ পোহাতো,
ভালো লাগে, এমনি এমনি ভাল লাগে।

এমনি এমনি মনে পড়ে তার কথা,
তার সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলি, হলেই বা তা
সামান্য কয়েকদিনের, তবু মনে পড়ে আর
ভালো লাগে, এমনি এমনি ভালো লাগে।
মনে হয় সে যেখানে আছে ভালো আছে,
সে ভালো আছে এই মনে হওয়াটুকুতেই ভালো লাগে,
এমনি এমনি ভালো লাগে।

------------------ 

চলতি পথে কেউ ছিল

তমাল ঘোষ

চলতি পথে কেউ ছিল
তারার কম্বল গায়ে জড়িয়ে,
গেলাস ভর্তি মদিরা নিয়ে
যার দাঁড়াবার সময় ছিল
অহেতুক এই আমার পাশে,
খোলা মাঠের সবুজ ঘাসে।

চলতি পথে কেউ ছিল —
পায়ে পায়ে এই ব্যস্ততায়,
আমার মৃত শহুরে-ক্ষণিকতায়
যত অবসাদ জমা ছিল,
তার সামর্থ্য ছিল ভুলিয়ে দেবার। 
তার সাথে শেষ দেখা সেই সেবার।

------------------ 

পূর্তি

জীবন সরখেল


অচেতন প্রবৃদ্ধ কোণের মতো পড়ে থাকা নিজেরই মৃতদেহ জাগতিক অসারতা ও চেতনার মাঝে রোজ এঁকে ফেলে একটি সম্বুদ্ধীয় সামন্তরিক!

নিজেকেও ঠকানো নিষ্ঠুর উন্নাসিকতা সমান্তরাল রেল লাইনের মতোই বয়ে যায় কেবল দূরূহ জাগতিক ভার.....

প্রবৃত্তি-নিবৃত্তির 'নিয়ন্ত্রণ-শৈথিল্য ডোর'একদিন এই মাটির বুকেই আকাশ-আলো-বাতাস ছোঁয়া নির্লিপ্ত ভৈরবী সুরে একদিন ঠিক ডেকে আনবেই প্রকৃত মুক্তি সকাল।


------------------ 

আত্মকথন

অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়

আত্মকথনে দিন কেটে যায়
মনে হয় কোন বিচ্ছিন্ন দ্বীপে
শুধু অবসন্ন মুহূর্ত গড়াচ্ছি
দূরবর্তী স্থানে প্রবহমান জলধারা
এখানে বিচ্ছুরিত গোধূলি 
ভাঙা আলপথ দিয়ে নেমে যাই
কোন ভূমিপথে, খুঁজতে থাকি...
একদিন এখানে শস্যভূমি ছিল
এখন হারানো গল্পকথা

কতো যুগ আগেও আসতাম
তখন কথার ওপর কথা ঘুরত
হাতের সাথে হাত
বা পা এর সঙ্গে পা ফেলে
যতদূর যাওয়া যেত ঠিক ততটাই
তবুও নীল দিগন্ত দূরেই থেকে যেত

এখন তো ভীষণ একাকী
শুধু তাকিয়ে থাকি ঐ নীল দিগন্তের দিকে
এখন পেরিয়ে যেতে চাই, পেরিয়ে যেতে চাই...

------------------ 

অশ্রু

উৎপল গুহ

হয়তো আজও ,-  তোমার জন্যে-
লিখে উঠতে পারিনি মধুর কোনও গান ,
লেখা হয়ে ওঠেনি কোনও নিটোল কবিতা।
কিন্তু তার মানে কি - এই  যে -
তোমার জন্যে কোনও গানই নেই 
আমার বুকের গহীনে ?
কবিতা নেই এই আপাত -
ধুসর জীবনের পাতায় ?
কে বলতে পারে, হয়তো কিছু কান্না --
একদিন গানের কোকিল হ'য়ে
উড়ে যাবে তোমার মঞ্জরিত আম্রকুঞ্জে ?
বেদনার প্রতিটি বিন্দু 
কবিতার পাপড়ি হ'য়ে
সুগন্ধ ছড়াবে বাতাস-বাড়ির আঙিনায় ?
কিংবা জমবে যখন লোনা জল -
অজান্তেই চোখের আড়ালে,
হয়তো তখন ঝিরি-ঝিরি বৃষ্টির মত
একদিন ঝরবে সেই অলিখিত গানের সুর 
কবিতার বিনম্র আখরে-
ফোঁটা- ফোঁটা অদৃশ্য অশ্রুধারা হ'য়ে।।

------------------ 

অন্ধকার অবসাদ

রহিত ঘোষাল

মহাবিশ্বের সমস্ত অন্ধকার অবসাদ যেখানে একীভূত  

হয় সেখানেই আমি পৌঁছে গেছি, সেখানে কোনওদিন কিছু সৃষ্টি হয়নি, বড় বেশি নিস্তরঙ্গ পরিবেশ সেখানে, উদ্দেশ্য ও স্বার্থ খুব একটা কাজে আসে না, 

এই স্থিতাবস্থায় রাস্তায় ধাঁধা লেগে যায়, চালু থাকা অসম্ভব জটিল কঠিন হয়ে পড়ে, ক্রমে জমে যেতে থাকে অস্তিত্ব, বরফের মতো মন কেটে কেটে এগিয়ে যেতে থাকে জাহাজ,নাবিকের লবণাক্ত চিঠি বন্দর খুঁজে পাবে?

------------------ 

প্রথম শিমুল-৭

দয়াময় পোদ্দার

তুমি এই প্রথম এসেছো শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে কোন পদ হয়ে 
সন্ধ্যা-হাওয়ায় ম ম করছে- নারকোল নাড়ুর আঘ্রান
তিনি আসবেন। ভূমিষ্ঠ হবেন এই মাঝরাতে বৈষ্ণবীয় প্রেমে 
প্রিয় সব খাবারের নৈবেদ্য সাজিয়ে দেওয়া হবে সামনে।

তোমার হাতের কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছি- কখন কি লাগে,
এই অবশিষ্ট আলো-আঁধারের রঙিন কাগজে সাজা 
তোরণের মাথা। পুলক-জোনাকি ধরে কংসকে লুকোই,
চলে গেছি- তমালের তলে ; কোন সাড়া নেই বলে 
তারামন্ডলের সপ্তর্ষিগনেরা কি খোঁজে? বিচলিত?
হাতের মুঠোয় করে লুকিয়ে এনেছো নাড়ু 
তিনিতো আসেননি, এখনও সময় হয়নি ভূমিষ্ঠ হবার,
তবে কেন লুকোনো নৈবেদ্য? চোখে মেলে দিলে চোখ!

------------------ 

এক নির্গুণ প্রেমের ইস্তেহার

শাশ্বত বোস

একটা ভীষণ রকম বিভাজিকা প্রেম চাই।
একটা পুরোনো ভাঙা জলফড়িং সেফটিপিন,
একটা ভীষণ ভালো মানুষের ভেঙে আসা
মুখের গাংচিল জ্যামিতি। একটা ভয়ধরা চোখের
উপবাসী সমীকরণ, একটা বেড়াজাল ফসফরাসের
গায়ে লেগে থাকা নিকোটিনের
নীলচে মিথোজেনিক বিষক্রিয়া।
বাগানে একটা পাতা ঝরার বিষন্নতা,
একটা খড়কুটোহীন ভালোবাসা।
এগুলোই হয়তো অনন্ত কোন এক অন্ধকারে,
ডুবে যাওয়া নাবিকের মৃত্যু হয়ে, ঘুমন্ত শিশুর
কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবে।
শুভ হোক মাটি আর জলের হাত ধরাধরি করে,
বৃত্তাকার গর্ভের পথে এগিয়ে চলা।
আমার পেটের অন্তস্থ খিদে ছড়িয়ে পড়ুক,
বাস্তুভিটে, পূর্বপুরুষ আর প্রেমহীন সীলমোহরের দাগে।

------------------ 

ইচ্ছা আছে

প্রিয়াঙ্কা সঞ্জীব দাস

ইচ্ছা আছে একদিন হারিয়ে যাব—
হারিয়ে যাব মেঘেদের রাজ্যে কিনবা বনের গভীরে,
চেয়ে চেয়ে দেখব কেমন করে জন্ম নেয় রংধনু
দেখব কেমন করে অঙ্কুরিত বীজ হয়ে ওঠে মহীরুহ,
দেখব তাদের সৃষ্টিসুখ, আনন্দমুখরিত কৈশোর ও অপরাহ্নের নির্বিবাদী যৌবন।

ইচ্ছা আছে একদিন আবার ফিরে আসব—
এই জনাকীর্ণ নিস্তব্ধতায়, 
এই বোমা বারুদের শ্বাসরুদ্ধকর গলিতে,
এই লোভাতুর অন্ধকারের ছায়ায়,
সেদিন ছড়িয়ে যাব আনন্দের বীজ
শিখিয়ে যাব কবি কিশোরের শেষ স্বপ্নের বাস্তবায়ন 
দুচোখে দেখে যাব স্নেহ— নবোদিত চন্দ্র সূর্যের ছায়ায় ছায়ায়।

------------------ 

শীত বৈচিত্র্য

সুমিতা চৌধুরী

মিহি বরফের মতো কিছু শীত গলে আদুরে পশমিনা শালে,
ফায়ারপ্লেসের উষ্ণতায় মৌতাত পোহায়।
কফির পেয়ালার ধোঁয়ায় গাঢ় আবেগী সন্ধ্যা নামে,
দস্তানা হাতের আঙুলে আঙুল জড়িয়ে প্রেম বাসর সাজায়।

কিছু শীত উপোসী একলা রাতে একটু উষ্ণতার খোঁজে 
চাঁদের কাছেই ব্যার্থ প্রেম যাচে।
নীল ব্যথার আলিঙ্গনে জেগে থাকে ঠায় কতো রাত, 
বারেবারে ক্ষতবিক্ষত হয় আপন মনের ভাঙা আয়নার কাঁচে! 

কিছু শীত ভীষণ করাল দৈন্যতার উদলা ফুটপাথে,
 জীবন মরণের মাঝে সূক্ষ্ম সুতোয় অনিশ্চিত যাপন
জীবন সংগ্রামের কঠোর পাঠ নেয়।
এভাবেই বিভিন্নতায় শীত বসত গড়ে  কিছু লহমাকে করে আপন।। 

------------------ 

শান্তি

সুশান্ত সেন

মানুষ কোথায় গেলে শান্তি পায় ?
কোনো গৃহকোণে নিজ মনে মন্ত্রোচ্চারণে না উপাসনা গৃহে
না নীরবতায় !

নির্দিষ্ট কোনো অঙ্ক ত নেই
দুই আর দুই এ সব সময় যে চার ই হবে
এ বাধ্যবাদকতা শিকেয় তুলে রাখো।

তাই সান্ধ্য বাতাস আর অপরিবর্তিত 
আর্দ্রতা কে অবজ্ঞা কোরো না।
ওরা তোমাকে ঘিরে বইছে।

শান্তি খুঁজে পাওয়া সোজা নয়।

------------------ 

শৃঙ্খল

রাজরুল ইসলাম

আসলে আমি একটি লাইন চ্যুত মিছিলে হাঁটতে চাইছি অনেকক্ষণ.... ঠিক অনেকটা দীর্ঘ যেমন তুমি গুটিয়ে নিয়েছ তোমার আধ পায়ের বেড়ি... না আমি ভাবছি তুমি টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে টেলিফোনে স্বর নিক্ষেপ করছো এলেমেলো ভাবে। আর মৃত কাঁটা আপেলটি হাতে নিয়ে। না এভাবে না বরং একটা কাঁটা বাক্স অনেকগুলি টাকার নোট যেন পাহাড় হয়তো তুমি আজ।



সম্মিলন
------------------



অর্ণব সামন্ত


(১) 

দুপুরে, রাতের চাঁদ


শঙ্খটি বাজায় দুপুরে , রাতের চাঁদকে পেয়ে
শঙ্খটি নম্রনত , শঙ্খটি সোচ্চার 
দুলে দুলে ওঠা ঢেউ সফেন জীবনের 
যাপন স্বর্ণ কুটুরিতে রাখে , ভ্রমর ফুলের বনে 
অকস্মাৎ হড়পা উজান আসে উজিয়ে সুর 
সুর ভাঙে তাল ভাঙে কথা ভাঙে 
তবু সেই ভাঙনের অভূতপূর্ব নির্মাণ রাখো 
মন্থনে মন্থনে গরল অমৃত ফোয়ারা
লক্ষ্মী বাহু টেনে নেয় অলক্ষ্মীর ঝাঁপিতে 
ভূমিকম্প অগ্ন্যুৎপাত লাভা উদ্গীরণ 
স্বর্গসুখ স্বর্গসুখ নরক গুলজার 
আর কত জন্ম পরে একান্ত আমার 
শঙ্খ বাদ্যে যুদ্ধ শুরু ক্ষেত্রে ধর্ম কর্ম 
দমকা হাওয়ায় হারজিৎ সমান সমান 
হত হওয়া কালগুলি সম্মুখে তোমার 
চেখে দ্যাখো চর্বচূষ্যলেহ্যপেয় সম্ভার 
স্নায়ুমেদমজ্জায় লেখো আলো আলো আলো 
শঙ্খটি বাজায় পূরবী কি শান্তি কি শান্তি 
সুধার ভাঙা বাক্যে ভাঙা গানে ভাঙা কবিতায় 
লেখো লেখো লেখো তাকে রাখো হৃদিমধ্যে 
কখন হয়েছে সমুদ্র ভাসান ডিঙি মাঝি জানে না 
তুলে রাখো দেরাজে সুখ , গতজন্ম , পরজন্ম 
ভ্রমর ও হলুদ ফুলের দিনরাত্রি মহাকাব্য রচুক ... !

(২)

সত্য ও সমুদ্রমানবী



সত্য দাঁড়ায় মুখোমুখি একা ডাকাবুকো 
যুদ্ধ শেখায় কৌশলে রমণে রমণে 
রম্য কোষ-স্নায়ু-রক্ত-মেদ-মজ্জা মন্থনে মন্থনে 
সোরা সাইকোসিস সিফিলিস দহনে দহনে 
আহা জ্বালা পোড়া জ্বালা জ্বল জ্বল অগ্নি স্বাহা 
সূর্যের তেজ ঢলে পড়ে ভাবালু চন্দ্রকরতলে 
মারুবেহাগে খরগোশ মুখে নেয় ঘাস মুথাঘাস 
নির্যাস গ্রহণ করে দেয় না কিছুই 
নাহ্ দিয়েছে উজাড় করে উজানে ভাটিতে 
স্রোতস্বিনী মোহনায় সমুদ্র উত্তাল মাতাল 
শব্দের গর্জন বহমান নৈঃশব্দের দিকে 
আদরে আদরে কবুতর বুঝি বা উড়াল দেয় 
সে টের পেয়েছে ভূমিকম্প , সাইক্লোন , বৃষ্টি ধারাপাত 
কাজল পরে আর চোখের নজর বাড়ায় না 
সমুদ্রের ডাগর চোখ পেয়ে যায় সে , দ্রাঘিমাপরির ডানা 
জড়ানো ভাঙা ভাষায় তরতাজা জীবন 
ভাবে জ্যামিতিতে নির্মাণ সম্পূর্ণ করে জ্যামিতির কবিতা 
কবিতার জ্যামিতি তখন মগ্নতা মুগ্ধতায় আগাপাছতলা নিমজ্জমান 
দুরন্ত ভাসানে যাবে অবাধ অবাধ্য হৃদয় নৌকায় 
ফিরেছে নির্ভেজাল অরণ্য ঘরের ভাঙা চালে যুবতীজ্যোৎস্না 
কখনও অক্ষরবৃত্তে , মাত্রাবৃত্তে , স্বরবৃত্তে করে যায় খেলা 
কোষে কোষে চিনে রাখে , স্নায়ুকে স্নায়ু জানে 
বিদ্যুচ্চমকে বিদ্যুচ্চমকে হয়ে যায় সৃজন ও ধ্বংসের পার 
ঘরের ব্যালকনি খোলে , ব্যালকনির ঘর 
দোদুল্যমান জীবনের এক নির্ভার নির্বিকার যাপন‌ 
পদচ্ছাপ যেখানে যেখানে ফ্যালে ভাস্কর্য হয় 
জানি না গ্যালন গ্যালন কবিতা নিয়ে সমুদ্রমানবী 
সংস্কারবিহীনভাবে কিভাবে আলোর সঙ্গম খুঁজে পায় !

(৩)

লালিত্যে সাহিত্যে



সেই তুই লালিত্যে গ্রহণে বুঝিয়েছিলি 
শ্রাবণের ধারাপাতের অগ্নি দাবানলের থেকে ভয়ংকর 
সেই তুই বুঝিয়েছিলি মধ্যদিন ও মধ্যরাতের পার্থক্য 
সেই তুই মধ্যশরীরে অনুভব করিয়েছিলি 
আত্মার সঙ্গে আত্মার সংঘর্ষে পরমাত্মীয় তৃষ্ণা জেগে ওঠে 
যুবতীজ্যোৎস্নার ক্ষুধা জ্যোৎস্না দিয়েই মেটাতে হয় 
সংস্কারের খোলস বদলাতে বদলাতে বদলাতে 
শরীরও পঞ্চভূতে বিলীন হয় জ্যোতিঘন অবয়বের লাস্যে 
সেই প্রথম কথার শরীর ছেনে ছেনে ছেনে 
ভাবনার ভাস্কর্য বানিয়েছিলাম চিলেকোঠায় 
সেই সময় গুলিয়ে গেছিল মাধ্যাকর্ষণের টানে 
আপেল আপতিত নাকি আপেলের টানে মাধ্যাকর্ষণ আপতিত 
সময়ের সুসময় কুসময় বলে কিছু নেই 
তবু সেই সময়কে মোহর করে দ্রাঘিমাংশ করে 
রেখে দেই হৃদয়ের দেরাজে সাত সাত জন্মের হলুদ ফুল 
সেই তুই মল্লারের বুকে দীপক আনিস 
সেই তুই দীপকের গর্ভে মল্লারের বেনো জলের ছলাৎছলাৎ 
ঝঙ্কারে ঝঙ্কারে বিদ্যুচ্চমকও ফিকে ফিকে লাগে 
নীল নীল বিষ মন্থনে মন্থনে অমৃত কিসসার সুখ 
সেই তুই জীবন ছোট ক্যানে ছোট ক্যানে বলে 
খেদকে নিয়ে যাস সাধ্যের বাইরে অনির্বচনীয় মুক্তির প্রসবে !

(৪)

তিশানের নারী



তিশানের নারীর মতন বিকেল আসে 
বাস্তুভিটের ঝাউবনে , প্রান্তরের সবুজ ঘাসে 
বায়বীয় নারী হয়ে ইছামতী উড়াল দিলেই
ভাঙা চালে ভাঙা ঘরে এসে হাজির কিশোরীজোছনা 
রোদ্দুরের ক্রোধ বাড়ে স্রোতস্বিনী প্রশমিত করে 
ফল্গুস্রোতে চুবিয়ে রাখে বেদম ভালোবাসা
অলৌকিক জলযানে চলে যায় জলের গহীনগভীরে 
নিমজ্জনে নিমজ্জনে ডুবুরি তুলে আনে অমল ভাসান
আশ্লেষ ও আবেশের দ্বিপদের তরকারি দিয়ে 
শিউলি সাদা ভাত বাড়ে নারীমাতৃক সভ্যতা তীরে 
সমুদ্র শুকিয়েছে তার তবু জীবন্ত ভিসুভিয়াস 
মগ্নমুগ্ধ করে রাখে লাভার মতন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে জড়িয়ে 
বহমান জীবনে লাবণ্য ফুরালেও আগুন থাকাটা জরুরী 
সেই টেনে নেয় মাধ্যাকর্ষণে , সেই দেয় মুক্তিবেগের ডানা 
সেজানের সাত স্তর খুঁড়ে খুঁড়ে রেমব্রান্টের আলো 
কথ্য সর্বনামে ডাকে হৃদয়ের ঈশ্বরী দরজা খুলে 
ব্যালকনিতে জ্যোৎস্না নামে আড়ি নয় ভাব করতে এসে 
দেরাজে রেখেছে সুখ পরজন্মের জাতককে নিয়ে 
রামধনু কেশে তার সৃজনের বৃষ্টি বিন্দু বিন্দু লেগে 
তখনি জেনেছে সর্বনাশের পরবর্তী সর্বপ্রাপ্তির অমৃতযোগ !

------------------


শিশির আজম


(১)

রান্না করা মাংসের ঘ্রাণ



আগ্নেয়গিরির বেগুনি নীল আভা
এই ঘরে

রাত দেড়টা
পরিস্থিতি বরাবর যেমন থাকে তেমন রান্না করা মাংসের ঘ্রাণ
এখন নেই
তাহলে আসুক বিলায়েত খাঁ
দুটো কথা বলি ওর সঙ্গে
আর এই টেবিল
দেয়ালের টুকরো টুকরো অসম্মত প্রতিচ্ছায়া
ক্যান্ডেলপট
এদেরকে আমি মুঘল মিনিয়েচার থেকে
তুলে এনেছিলাম

এদের
বিষাদ কল্পনা উৎকন্ঠা
এদের নিজেদের হোক
আর আমার

(২)

মেয়েটার একটাই খুঁত



অস্বীকার করবো না ইয়াং মেয়েটা সত্যিই কিউট ইনোসেন্ট আর স্মার্ট
ভাল চাকরি দামী গাড়ি
নুন খায়
আর্ট গ্যালারিতে যায় নিয়মিত
কিন্তু ওর একটাই খুঁত ওর বাড়ির ছাদে কাক বসে না
হ্যা
তোমরা জানো কাক কাকের মাংস খায় না
আর
হাতের দশ আঙুলের রুচি দশ রকম

(৩)

ভাবুন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া কতোটা যন্ত্রণার



উনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী
কিন্তু আমাদের আরও আরও প্রধানমন্ত্রী আছেন
এফবিসিসিআই আমাদের প্রধানমন্ত্রী
সেনাবাহিনী আমাদের প্রধানমন্ত্রী
আমলাতন্ত্রও আমাদের প্রধানমন্ত্রী
এমন কি
বিদেশেও আমাদের প্রধানমন্ত্রী আছেন
হোয়াইট হাউস
সিএনএন
পেন্টাগন
ওয়ার্ল্ড ব্যাংক
এমন কি এখন শি জিনপিংও আমাদের প্রধানমন্ত্রী
হ্যা
আমাদের প্রধানমন্ত্রী এটা জানেন
কিন্তু
আমরা তো উনাকেই প্রধানমন্ত্রী মানি
এটা যদি উনি জানতেন
যদি বিশ্বাস করতেন

(৪)

লুমুম্বার সূর্য



লুমুম্বা খুন হয়ে যাবার পর
ঘামজ্যোতির্ময় সূর্যটার মুখ কালো হয়ে গিয়েছিল
সূর্য
আফ্রিকার
এশিয়ার
প্রাগৈতিহাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের
কেন

জ্যোতির্পদার্থবিদদের নিরলস প্রচেষ্টার কথা আমরা জানি
আর কবিদের কলমে কবিতা নেই
আছে রক্ত আর ছাই
আর ছাতা অর্থ কী এটা কে বোঝাবে ছাতাদের
যা হোক  এর সুরাহা হয়নি

এখন যে সূর্যটাকে আমরা দেখছি পশ্চিমে হেলে পড়েছে
ওটা কিন্তু লুমুম্বারই সূর্য
এখন
এপ্রশ্ন তো তোমরা করতেই পারো
ওটা
ঐ সূর্য
রাতে কোথায় যায়
কার কোলে মাথা রেখে
ঘুমোয়

(৫)

হংকঙে বাড়িঘরগুলো উড়ে উড়ে বেড়ায়



রাতের বেলা
হংকঙে বাড়িঘরগুলো উড়ে উড়ে বেড়ায়
আর সেতু
আর ক্যাফে
আর মেট্রো স্টেশন
উড়ে উড়ে বেড়ায়
আর হংকঙে কারো কোন নাম নেই
তাই কেউ যখন কাউকে খোঁজে
নাম ছাড়াই খোঁজে
আমি ভেবে দেখেছি
নামের আসলে তেমন কাজ নেই
ভাবো
একটা নামের ভিতর আমরা কী পাই
কতোটা পাই

------------------


শিবালোক দাস


(১)

সন্তানসন্ততি



মনে পড়ে ধুলোর স্বাদ মলিন ঘুমে...
রূপ জানো ?
নির্দোষ, শুকনো দিনের
বাতাসে পুরোনো সেলাই,
নিস্তব্ধ পারাপার।

প্রথম আলোর নিরিখে
আমার সন্তানসন্ততি বাঁচে।

কথায় বাকি ঝংকার, শোনো,
রাতের ওপারে মিলিয়েছে ঝর্ণা।

(২)

অতল পাঠশালা



ভস্মীভূত শয়তান পড়েনা উন্মুক্ত পান্ডুলিপি
ভুলেছে সদ্যোজাতের ওল্টানো অন্ধকারে
গোপন পাপ অদ্ভুত...
নেই। দু পাশের পথ বাড়িয়েছে ব্যথা।

নিঃশেষে হাত রেখে অতল পাঠশালা খুলি।

অশনির ঘুমে অন্তর্নিহিত দাবী।
খোলো শব্দ। জোরালো আকর্ষণে
বহুবার ভুল, দাঁড়াও লাল সীমান্তে।

ঘরে ফেরো পাঠ সেরে, রক্ত ছুঁলে ভয় নেই ?

(৩)

অন্যমন



আঘাতে পাহারা। আশ্চর্যময়ী শোনায়
তোরণ আর তরঙ্গের সংলাপ,
আস্ফালনে মৃদু সুফির বদলে বিক্ষিপ্ত
বোধিদ্রুম...

ছন্দপতনে বন্ধ করো দুচোখ।

ভুল। কলঙ্ক খুইয়ে চাঁদ দেখি।

বোবার শাপে মুর্ছিত স্রোতস্বিনী...
মেরুর হিম ক্ষীণ করে।

অন্যমন, পরিচয় দাও, ধুলোময় আমন্ত্রণে।

------------------


গৌতম কুমার গুপ্ত


(১)

স্ব



নিজেকে দেখবার কোন আয়না নেই।অস্বচছ ঘষা কাঁচ।অযত্নে সেটাও নোংরা।অথচ প্রতিবিম্ব চেয়েছি।হৃদয়রেখার, রক্তমাংসের।ছারখার হয়েছে ভালবাসার জলছবি।আলোর নাব্যতায় ডুবতে চেয়েছি।প্রবীণ অন্ধকার ফিরিয়ে দিয়েছে।ওদিকে তটরেখায় শৈবাল চারাগাছ। ছায়া নেই,অবস্হান আছে।সাদৃশ্য কেবল রূপান্তরে।নিভৃতি খুঁজেছি অবকাশের।যদি ছায়া মেলে,জড়িয়ে নেবো চরাচর। প্রতিবেশী সূর্য্য আমার আয়না।প্রখর রৌদ্রে কিংবা মেঘপ্রপাতে।আমি যযাতি হই স্বপ্নভঙ্গে।ভাঙ্গা আয়নায় আমার শবদেহের ব্যবচ্ছেদ।

(২)

মঞ্চ



রেখেছে রূপোলী উষ্ণীষ
             শিরস্ত্রাণে বীরত্ব পালক
কটু আমিষ গন্ধ পাই রাজপুরুষে

তখনই এক লহমায়
রক্ত ছিটকে এলো জামায়
কোন কবন্ধ গড়াগড়ি খেলো রাজপথে

কাটা মুখ থেকে ছুটে গেল
হা হা অন্ধকার
দুঃখ শোক আর থুৎকার

পৃথিবীর এক ঐতিহাসিক মঞ্চ
দর্শকেরাও ছুটে গেল অস্ত্রাগারে
একে একে

উষ্ণীষ লুন্ঠনদৃশ্যে আমিও ছিলাম

(৩)

কোরাস



ভীষন চেনা দিয়ে গেল 
অচেনার গান

আনন্দের উৎসাহে প্রাজ্ঞ হলাম

দুঃখ দিয়ে যা ছিল পুরাণ কথা
মনোনিবেশে ধর্তব্য ছিল কাহিনী
খুলে খুলে বলে গেছে পৃষ্ঠাবিশেষ

তবু কি চেয়ে চেয়ে কাটাবো অকথিত
বরং আজ হোক মুগ্ধকর দিবসযামিনী
নব্য অসুখের আরোগ্যে
নবজন্ম হোক প্রতিজ্ঞার সভ্যজ

অসভ্যের সংজ্ঞাহীন বাচাল পান্ডিত্যে
শুনি শকুনের দেশে কোরাস  যবনিকা

(৪)

প্রেম



তোমার পায়ের চিহ্নে ফুটে ওঠে
ছায়া ঘন অম্বর নীল 

দ্রাঘিমায় দুটি  চোখের আলো
তোমার ঠোঁটের বৃষ্টি

নিজেকে আর অন্তঃসারশূণ্য ভাবি না
কুড়িয়ে রাখি সুরেলা গানের ডালি

রজনীগন্ধায় ভরে যাচ্ছে আমার ফুল 
সুষমা নিয়ে ফিরছে পশমিনা শীত

মনের ছায়াসুন্দরে স্বতঃই অভীপ্সা নিয়ে
তোমাকে যতোবার দেখি
স্বচ্ছতোয়া আয়নার মতো নেমে আসে
একটি আরব্য রজনীর রূপকাহিনী।

(৫)

বৈধব্যরেখা



দীর্ঘ লজ্জা সেবনের পর রূপালী হয়েছো
দীর্ঘ মননের পর মেধাবী করেছো মগজ
দীর্ঘ দহনের পর প্রজ্ঞাপারমিতা হয়েছো
দীর্ঘ প্রজাপতি উড়ানের পর পরিণীতা হয়েছো

দীর্ঘ হননের পর একটি মৃত্যু উপার্জন করে নেবো
দীর্ঘ রক্তপাতের শেষে এক ফোঁটা অশ্রু এলে
মুছে দিও গরল শোকসম্ভাব্য দিনাতিপাত

স্বোপার্জিত আতরসিক্ত রুমালে লেখা আমার নাম
ধীরে ধীরে মুছে যাবে তোমার শ্বেত বৈধব্যরেখায়

(৬)

স্মৃতিসংক্রান্ত



উবু হয়ে থাকলে উসকে দিতে হয় স্মৃতি
ইদানিং চোখ বুজলে স্মরণে আসে না কিছু
ঘুমের অন্ধকারে ভেসে থাকে ছল
মনে পড়ে যায় শরীরের অকপট ভান

অনেকগুলু বিন্দুর জন্ম হয়
কোনটি দুঃখ কোনটি রাগ কোনটি অভিমান
এসব স্মৃতিরই অবুঝ খোলস

একটা একটা করে জমতে থাকে উপকরণ
তারপর কোনদিন আগুন হয়ে ছাই হয়
ভস্মাধারে শুধু জেগে থাকে অনড় বিবেক

(৭)

মন



বাঙ্ময় দু একটি পালল থেকে
অশরীরী প্রত্নখচিত স্নায়ু ছি্ড়লাম
পালকের মৃদু অথবা সোল্লাসে
উষ্ণ শীতলে দেহকোষ ঘুমিয়ে পড়ল

প্রবহমান স্বচ্ছসলিলা ইজেলে খেলে গেল
সেইসব পাখিদের দৃশ্য সম্ভোগ নৌকাযাপন
নামান্তরে কাকলি চঞ্চুবিলাস হল

বিক্ষোভ অবসাদ প্রাঞ্জল নয়
স্মৃতিরেখায় ধরে রাখল নষ্ট ও নর্ম
আ্যালবামে আমিত্ব ধূলিময় কেন না
 অসচ্ছল অভিলাষ সম্পন্ন হল

(৮)

স্বৈর



এক পোঁদা বিড়িতে চুমুক দিয়ে
গালাগাল করছে ভাসান পল্লীর ফটকে
দেশকে ওড়াচ্ছে রগচটা মেজাজে
তাম্র ধোঁয়া স্বরলিপির আগুনে
জ্বালা করছে চোখের অ আ
আর বুদ্বুদে মদের স্বপ্ন গিলছে
খিল্লি করছে প্রেম আর বিপ্লব
রক্ত এতো সস্তা হয় গেল!
নদের নিমাই চিতিয়ে পড়ে থাকছে লাশ হয়ে
ভারতবর্ষের মাথা টিপছে স্বৈরতান্ত্রিক মাতাল
বাকরুদ্ধ হয়ে দিব্যি তাস পিটোচ্ছে
জোড়া মন্দিরের চাতালে
বকগুলি ঠুকরে নিচ্ছে ভগ্নাংশ মাছের চোখ

(৯)

একটি কবিতা উৎসব থেকে ফিরে



এই শরীর অ-বিশিষ্ট ছাই হবে একদিন
বিশিষ্ট নই হাতে নেই পাপড়িগুচ্ছ
           ঝাউয়ের সবুজ পালকও
দূর থেকে দেখি মঞ্চজুড়ে সূর্য হয়েছে কেউ কেউ
তারা সবাই নক্ষত্রপুঞ্জ আলোকিত অভ্যাসে

বিশেষ্য করেছে তাদের বিশেষণের আয়োজনে
চেয়ে চেয়ে দেখি স্মিতমুখ 
      সৌম্যকান্তি নিয়নে
আমি এককে দূরে একজন সর্বনামে থাকি
পদ প্রকরণে নেই, পাই কোথা উত্তম আয়ু
হাততালি দিই সবার সাখে ভগ্নাংশ করতল জুড়ে
বলো, কেউ তো চায় তাদের ভঙ্গীটি তুলে দিতে করজোড়ে

(১০)

একটি অ-পূর্বক অকবিতা



চতুর্দশীর রাত।কালো কালো ছায়া। আমাদের নির্ভেজাল দাঁত।কামড়ে সক্ষম আপেলের মাংসে।

বাজির হল্লা তুবড়ির জ্যোৎস্না। স্ফূর্তির অমাবস্যায় মাতালের হর্ন।

এক একটি প্রদীপ রঙিন মায়াময় মাটি।আলো ধরে আছে।উৎসবের গলন্ত মোম ;শোকের অশ্রুজল।

তুমি নেভো না এখন,জ্বেলে রাখো সাহসের আগুন।

দাউদাউ অথবা নিভু আলোর চিরস্থায়ী বন্ধন।

এখানে ফুটে উঠছে আমুদে নাচের পদভার।দ্রুত বদলে যাচ্ছে পোশাকের ঝলক।

ঠায় দাঁড়িয়ে আছি উঠোনের কাদায়।উৎসব দেখতে দেখতে সরে যাচ্ছে আলোর চিরকালীন দ্বেষ

(১১)

তুমি কে?



তুমি কি সন্ত্রাসবাদী?
নইলে কেন বারবার সন্ত্রস্ত করো আমাকে
তোমার ওষ্ঠরঞ্জিত রক্তরাগে।

এতোটাই যুদ্ধবাজ তুমি শিঞ্জিনী বাজিয়ে আসো
প্রবল পৌলমী তুমি বিদীপ্তা হও ক্ষণে ক্ষণে
কখনো নেলপালিশের নখরগরিমায় যুদ্ধদামামা জারি করো
আমি শিউরে থাকি তোমার জিহ্বার মুখর আলোড়নে

তুমি ধ্বস্ত করো নষ্ট করো আমাকে
নেপথ্যে বলে যাই চুপিচুপি সন্ধিপ্রস্তাবে
আমি যে নষ্টই হতে চেয়েছি বারবার

(১২)

অপচয় করো



যা খুশী করো
আমাকে অপচয় করো দু হাতে
অপ্রচুর রসদ আমার ভেতর
মিছি মিছি হবে অবচয় তেলেজলে

যেতে হবে নির্বাসনে অবধারিত
তার চে’ অপচয় হোক তোমার দরাজে

আমার আলো অন্ধকার বিক্রীত অবিক্রীত
যাইই আছে, খরচ করো এই বেলা

তোমাকে দেবো জীবন ইতিবৃত্ত
আমাকে ব্যয়সাপেক্ষ করো পৌণঃপুণিক

এই নাও,আমার ইচ্ছামৃত্যু নাও

(১৩)

ভোকাট্টা



পাওয়া না পাওয়ার কথা বলি না
অধস্তন লাগে ;সামাজিক মুর্খ মনে হয়

মনে বাসা বেঁধে আছে বিকল্প ঈশ্বর
যে কোনাটাই না পাওয়া হলে
চাঁদিয়াল উড়ে আকাশে।

না হোক ভোঁকাট্টা চাঁদমারি 
সূতো ছাড়বার কল্প কাহিনী।

যেটুকু তন্তুরেখা গুটিয়ে আনি
ছন্দে যদি বাজে 
একক আগামী ঘুড়ির উড়ান
লাটাইয়ে অপটু হাতের ইশারায়

ভোকাট্টার হালহকিকত।

------------------


রহিত ঘোষাল


(১)

অন্ধকার অবসাদ



মহাবিশ্বের সমস্ত অন্ধকার অবসাদ যেখানে একীভূত  

হয় সেখানেই আমি পৌঁছে গেছি, সেখানে কোনওদিন কিছু সৃষ্টি হয়নি, বড় বেশি নিস্তরঙ্গ পরিবেশ সেখানে, উদ্দেশ্য ও স্বার্থ খুব একটা কাজে আসে না, 

এই স্থিতাবস্থায় রাস্তায় ধাঁধা লেগে যায়, চালু থাকা অসম্ভব জটিল কঠিন হয়ে পড়ে, ক্রমে জমে যেতে থাকে অস্তিত্ব, বরফের মতো মন কেটে কেটে এগিয়ে যেতে থাকে জাহাজ,নাবিকের লবণাক্ত চিঠি বন্দর খুঁজে পাবে ?

(২)

মার্জনা



প্রথম এবং শেষ চেষ্টার
একদম ধার ঘেঁষে পথ চলেছি
পথ ভীষণ নরম, হয়তোবা অশালীন,
সমস্ত অস্তিত্বটা সকালের খিদে হয়ে আছে,
অত্যাধিক নিজের ভেতরে তাকিয়ে থাকার মতো
এক দীর্ঘকায় বাস্তুসাপ, অর্থহীন অতীত,
শূন্য রেখেছি হাত আপনজনের ছাই 
হাতে তুলে নেবো বলে, বড় বেশি অপরাজিতা ফুল
নিয়েছি সাথে, এই প্রথম এবং শেষের দেবতার বেদী,
আমি ভরিয়ে দিয়ে এসে দেখি,
নীল হয়ে আছে অকালশয্যা,
আমি তো নির্বিকার নিরবতার জড়চিহ্ন 
খুঁজি আজ এই শ্মশানঘাটে,
মহুল উপত্যকায় 

(৩)

খেয়াঘাটের অবচেতন



ওই মনে মুকুল ধরেছে 
এই বৃক্ষে ভ্রূণ 

গণচিতা চুপচাপ গিলে নেয় 
রাতের খানা-গর্ত 

রক্তমাখা ভিটেমাটি ভাঙচুর
মৃত্যু চাঁদ আত্মঘাতী 

সমাধির কাছে রাঙাপাখি 
ইমন কল্যাণ 

কঙ্কালবরণ কায়া একাকী 
সাড়া দেয় না 

ধ্বংসস্তূপের দুয়ারে পড়ন্ত 
যৌবন তেষ্টা



গল্পাণু
------------------



দীনদান

ঈপ্সিতা মাইতি


" ও বাবা, এ যে একেবারে বদ্ধ পাগল! আগের গুলো কানা খোঁড়া যাই হোক না কেন মাথা পরিষ্কার।সব বুঝে শুনে নিয়েছে।দাঁড়া দাঁড়া,তুইও বাদ নয় রে। তোর জন্য এই এনেছি মুড়ি, চিড়ে, কেক, বিস্কুট..  একটা নতুন লুঙ্গিও আছে। খুশি তো? নে বাবা, আশীর্বাদ কর সব, যেন আমাদের ধনভাণ্ডার উপচে পড়ে, তবেই না তোদের দিতে পারব  প্রাণ খুলে... কি হল রে.. আরে... "! "দানসামগ্রী" ছুঁড়ে ফেলে ততক্ষণে আকাশ কাঁপিয়ে হাসতে শুরু করেছে পাগলটা। তার অট্টহাসির দমকে  দাতার অন্তরাত্মা অবধি কেঁপে উঠল। অন্তরের দৈন্যদশা ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে বা লজ্জায় কি? কে জানে...!


------------------


ফ্যাকাশে কমলা

কেয়া নন্দী


কাছের শপিংমলে এক কেজির দামে দেড় কেজি কমলা লেবু দিচ্ছে -- খবরটা পেতেই গিন্নীর বায়ানাক্কা; শেষ হবার আগে যেন নিয়ে আসি। অফিসফেরত সেই অভিমুখে রওনা দিলাম। মলে ঢুকে ফলের বিভাগের কাছাকাছি আসতেই চোখটা আটকে গেল।

কাছে গিয়ে বললাম-- শিউলি না? তুই এখানে?

হেসে -- হ্যাঁ, রে।

ভাবলাম -- ওর তো এখানে থাকার কথা নয়......।

 ফর্সা সুন্দরী শিউলি কলেজে বেশ মেধাবী ছাত্রী ছিল। খুব কমলাপ্রেমী ছিল--- গোটা গোটা লেবু তিন-চার খানা নিমেষে উড়িয়ে দিতো। আমরা ওকে ‘কমলাসুন্দরী’ ডাকতাম। যেদিন হলুদ চাদর গায়ে দিতো, কেউ কেউ ছড়া কাটতো – ‘কমলা চাদরের কমলাসুন্দরী কমলা খেতে খেতে কমলাকান্তের দপ্তর’ পড়ে।

অদৃষ্টের কি পরিহাস ! সেই কমলালেবুর সামনেই আজ তার দিন কাটে।

 রাতে গিন্নী কমলালেবুর পায়েস  দিলে স্বাদটা বড়ই বিবর্ণ লাগে।



স্মৃতির দুয়ারে
------------------



শুরুর সেদিন

মেনকা সামন্ত


"টাইম মারচেস অন বাট মেমোরি স্টেজ"--টেনিসনের সেই বিখ্যাত লাইন আজ মনে পড়ছে খুব।সময় চলে  যায়, কিন্তু কালের কপোল তলে শুভ্র সমুজ্জ্বল হয়ে রয়ে যায় স্মৃতির রাশি মনের কন্দরে কন্দরে।দরজা খুলে উঁকি মারলে মনের ক্যানভাসে ভেসে আসে তারা সারি সারি মেঘমালা হয়ে।আমার স্মৃতির দুয়ারে কড়া নাড়ছেএমনই এক ঘটনা যা শোনাতে চলেছি আজ।বয়স তখন আমার বছর ২৪।আমি শিক্ষকতার চাকরি নিয়ে অবিভক্ত ২৪ পরগনার একটি বালিকা  বিদ্যালয়ে জয়েন করলাম ১৯৮০ সালের পহলা অগাস্ট।গ্রামটি বেশ ছবির মত  সাজানো।আম -কাঁঠাল -লিচু- জামরুল গাছে ঘেরা।শুধু সবুজ আর সবুজ।প্রথম দর্শনেই গ্রামটির প্রেমে পড়ে গেলাম।স্কুলের এইচ. এম.প্রথম দিনে আমাকে নিয়ে গেলেন ক্লাস টেনের ইংলিশ পড়াতে। স্টুডেন্টদের সঙ্গে ইন্ট্রোডিউস করিয়ে দিয়ে উনি ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।প্রথম দিনেই ক্লাস টেন।বুকটা আশংকায় দুরু দুরু করছে। ঠিকঠাক পারব তো পড়াতে!যাই হোক,মনে মনে ঠাকুরকে স্মরণ করে স্টুডেন্টদের অ্যাড্রেস করে প্রাথমিক পরিচয় পর্বটা সেরে নিলাম।টেক্সট বইটা খুলে টিচিং লেসনে যে পোয়েমটা পেলাম সেটা ছিল সেক্সপিয়ারের 'কোয়ালিটি অফ মার্সি'।একটু রিলাক্স ফিল করলাম।কবিতাটা অনার্সে পড়েছিলাম।আমাদের শিক্ষক মশায়ের কাছে যেমন শিখেছিলাম সেভাবেই পড়ানো শুরু করে দিলাম।প্রথমে কবির সম্বন্ধে কিছু বললাম। তারপর কবিতাটা পড়াতে শুরু করলাম। প্রথমে কবিতার সারাংশ লাইন ধরে ধরে বাংলাতে বলে  পরে সেগুলো ইংরেজিতে ট্রান্সলেট করে দিলাম।পড়ানোর পরে মনে হল খুব খারাপ পড়াইনি। কিন্তু হতাশ হলাম স্টুডেন্টদের কাছে যখন ফিডব্যাক নিতে গেলাম।দুটো ছাত্রী দাঁড়িয়ে বলল এতক্ষণ ধরে যা পড়িয়েছি তা তারা কিছুই বোঝেনি। কারণ খুঁজতে গিয়ে তাদের কাছ থেকে যেটা পেলাম ,সেটা আমার কাছে আরও শকিং মনে হল।আমার মেদিনীপুরের বাংলা নাকি তাদের বোধগম্য হয়নি।আমার বলা বাংলা তাদের কাছে এত বেশি ভয়ংকর লেগেছিল,যে ইংরেজি ট্রান্সলেশন এর দিকে তারা কনসেনট্রেট করতে পারেনি।যাই  হোক, সেদিনের মতো ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলাম।এইচ.এম.কে ব্যাপারটা জানালাম না। কিন্তু মনে মনে ঠিক করে নিলাম পরের দিন কি করব। সদ্য ইংলিশে অনার্স পাশ করেছিলাম।তাই ইংলিশে ক্লাস করতে আমার কোন প্রবলেম হবে না এটা বুঝতে পেরেছিলাম। পরের দিন থেকে ক্লাসে একটাও বাংলা কথা বলিনি।সমস্ত টিচিংটাই ইংলিশে দিয়েছি। এরকম ভাবে দিন ১৫ চালিয়েছি।পরে অবশ্য ব্যাপারটা আমি এইচ.এম.কে জানিয়েছিলাম।তিনিও এ ব্যাপারে আমাকে একই পরামর্শ দিয়েছিলেন।দিন ১৫ পরে ওই ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল সঙ্গে আরো দু একজনকে নিয়ে এইচ. এম.এর  কাছে এল।তারা বলল কন্টিনিউয়াস ইংলিশে ক্লাস করার জন্য তাদের বুঝতে একটু অসুবিধা হচ্ছে।কিন্তু ম্যামকে যেহেতু ক্লাসে ওইভাবে বলা হয়েছে, তাই তারা আর ম্যামকে রিকোয়েস্ট করতে পারেনি।ওই ছাত্রীগুলো নাকি আগে থেকে প্ল্যান করেছিল মেদিনীপুরের লোককে মেদিনীপুরে পাঠিয়ে দেবে।প্রথম দিনই এমন ভয় পাইয়ে দেবে যাতে করে দিদিমণি পাততাড়ি গুটিয়ে মেদিনীপুরেই ফিরে যেতে পারেন।কিন্তু ব্যাপারটা যে এমন বুমে রাং হয়ে তাদের কাছে পৌঁছবে  তা তাদের বোধগম্য ছিলনা।যাইহোক,এইচ.এম.এর রিকোয়েস্টে এবং ওই মেয়েদের কথা ভেবে আমি রাজিি হয়েছিলাম ওদের ক্লাস করতে এবং সেই প্রথম দিনের স্টাইলেই।মাত্র পাঁচ বছর ছিলাম ওখানে।কিন্তু, মেয়েরা আমাকেএত শ্রদ্ধা এত ভালোবাসা দিয়েছিল--,ওই ঘটনাটা আসার সময়প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম।কিন্তু বুঝেছি, ভুলে যাইনি। ওটা মনের গভীর গোপনে  তোলা ছিল, যা আজকে এই স্মৃতির দুয়ারে দাঁড়িয়ে উজাড় করে দিলাম।



মুক্তপদ্য
------------------

 
 

জাহান্নামের জটিল সুগন্ধ ও অপরা জাহাজটির ডেল্টা প্রেত রক্ত

নিমাই জানা


কন্ট্রোল প্লাস জেড অনুস্বার রক্তের মতো জেলীময় ১৮ তম বিজাতীয় ব্রহ্ম পদার্থ গুলো মাইক্রোসফট ডিসপ্লে অন্ধকারের রক্তাক্ত দ্রাঘিমায় যে উটগুলো রাতের কুঁজো ভর্তি পৃথিবীর অনঙ্গ দ্রবণ গিলে নেয় তাদের নিচে আর কোন অপার্থিব বস্ত্রালয় থাকে না, বেদানা ছাড়াতে ছাড়াতে গলার ছাল ছাড়াই জুতো তৈরির কাফ সিরাপ দিয়ে

আমি সেই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একটি পদার্থবিদ্যার নহৌশ, বজ্রপাত শব্দের তৃতীয় সৎকারকামী অনুচেতনার জীবাত্মা দ্রব্যের নিউট্রনীয় সালফার মেশানো বারুদের দুধ যার ভেতর মুখ ঢুকিয়ে নয়ানজুলির চামড়া ছাড়িয়ে রক্তকে শুকোতে দিচ্ছি অতিস্রাব যৌগিক পদার্থের মতো, নিজেই হি হি করে হাসতে হাসতে বিছানা পাতি বাঘের হাড় চিবোই আর সতেজ উনুনে রান্না করি নিজের অবৈধ নারীর ভুঁড়ি।
পৃথিবীতে পিতা এসে বাবা সেজে বসে, বাবা ও নক্ষত্রের হাড়, হাড়টি মৃত গাভীটির মতো মহাকাশের দুন্দুভি বাজানো দুগ্ধবতী অনৈচ্ছিক রসায়নের জলপ্রপাত রেখা ধরে নেমে শ্মশানের মুখ পুড়িয়ে দিচ্ছে হাফ গ্লাসের শীতল রক্তের বরফ জমা কেবিন ভর্তি টক জলের নেলপালিশ ইঙ্গিতে,নিজের রক্তের কাছে ক্যারোটিনের নৌবন্দর রাখি, আরক্ষা বিভাগের নিকোটিন পাতাবাহারগুলো মৌসুমী ফলের মতো রক্তের পিত্তথলির মতো উপগ্রহের শীতল যকৃতের মতো নিস্তব্ধ রাতে পাখনা মেলে মৎস্যজীবীর গর্তে ঢুকে আপাদমস্তক মন্থন করছে কল্কি অবতারের দ্বাদশ ব্রাহ্মণ প্রতিনিধিদের মতো, প্রাচীন জঙ্ঘায় বারুদের স্থাপত্য আছে বলে এতো আখরোট বাগানে অশ্লীল হত্যার ক্যালকুলাস শুয়ে থাকে চিতার নরম কাঠে
সুস্বাদু রক্ত পরীক্ষার দোকানের প্যাথলজিস্টটি কোন দিন শর্করা বিভাগের চশমা কালারের পায়খানা ভর্তি স্ট্রেচার থেকে নেমে রগরগে বালি মাখানো কুমিরের যৌবনপ্রবৃত্তি দেখে না বলে আলতামিরার নিচে এখনো মৃত বাঁশি বাজিয়ে এম্বুলেন্সটি ফুলের মতো ষষ্ঠদশ নব বৃন্দাবনের দিকে হেঁটে হেঁটে যায়। হাওয়ায় উড়তে থাকে রক্তাল্পতার গণিত , জমা রক্তের স্লেট তৈরীর কারখানায় মৃত হাড়ের উপরে গজিয়ে ওঠে পিতামহের ছত্রাক, ছত্রাক ও পিতাকে খুঁজে বেড়ায় নক্ষত্র পাহারা দেওয়ার জন্য লোহার হাতুড়ি দিয়ে তৈরি মাদার টিংচার তৈরি হয় গণিকালয়ের বেকিং প্রেতের হোমিওপ্যাথ সেবনে,

এক্রেলিক নারীটি কম্পিউটেড টেমোগ্রাফিক মনোলগ উৎপাদনের ক্যানভাস থেকে ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে বোতলে গুঁজে রেখেছে এক একটি ব্রেসিয়ারের হুক , সব পিত কালারের কামিজ বোতাম থেকে নষ্ট ছাই মার্কা তেল ভক্ষবিহীন কুকুরগুলো ক্ষতস্থানে জিভ দিয়ে চাটছে অর্থশাস্ত্রের নগর , প্রতিবন্ধী জাহাজটির কমিউনিটি হলের এ ওয়ান মার্কা থ্রি এক্স বরফের হার্ড কোর পণ্যের চ্যবনপ্রাস ওড়াচ্ছে রক্ততঞ্চক নরকের পারফিউম দিয়ে , একটা নষ্ট শ্বাসনালী হবে হে ধ্বংস হে বিনোদ হে দেবতন্ত্র হে নরকের পুরোহিত, চিতাটি এখনো অন্তত ৪০ টি মৃতদেহ খুঁজছে।




অরাজনৈতিক ভ্রম (ধারাবাহিক)
------------------------------------



ভ্রম (পর্ব-৩)

চিরঞ্জীব হালদার


আজকাল যা হয় ।মূল্যবোধের কেহ ধারধারে না।
সবাই যে যার রসে আর নিজের নিয়ে মশগুল।
আপনি অন্যের জন্য কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করছেন
ভুলেও কৃতজ্ঞতা দেখাবেই না।স্বীকার করা তো দুর্কি বাত। একবার এক মজার ঘটনা ঘটলো বাসে।
সিনিয়ার সিটিজেন সিট খালি থাকলেও পারত পক্ষে বসিনা। যদিনা তেমন কোন অসুবিধা থাকে।আমার সামনে এক কম বয়সী মহিলা। সঙ্গের ব্যাগপত্তরে নাজেহাল। ঠিক মত কিছুতেই দাঁড়াতে পারছেনা। আমি জায়গা দিলাম।বাসে মাঝারি ভিড়। ফুরফুরে কম বয়সী চালক বেশ স্পিড তুলছে।যা সচরাচর বিরল এই মহানগরে।সেদিন এক সুস্থ সমর্থ ব্য়স্ক বাসে লোক উঠেই সিট দাবি করলো।যদিও দেখতে পাচ্ছে মহিলার হাতে গুচ্ছের ব্যাগ আর বাচ্চা। লোকটি মহিলাকে উঠিয়ে বসবেন। গজ গজ করছেন নিজের মনে ভালোমত। তার প্রতিক্রিয়া চোখে মুখে ঠিকরে বের হচ্ছে।আমি থাকতে না পেরে বললাম - 'থাকনা দাদা, সঙ্গে বাচ্চা । অসুবিধা আছে । তাই।-'
ভদ্রলোকটি বেমক্কা বলে ফেললেন - 'আপনি নাক গলান কেন। চুপ থাকতে শেখেন নি।' ততক্ষণে
আমার মটকা বেশ গরম হতে শুরু করেছে।
অরাজনৈতিক ফিডব্যাক কিভাবে ফেরৎ দেব ভাবছি।আর দেখছি মহিলাটি বেশ অসহায় আমার দিকে তাকাচ্ছে।
আমি জোরের সাথে বললাম- 'ইনি আমার সঙ্গে আছেন, ইনি বসবেন।'
'সিনিয়ার সিটিজেন এর সিট এ বসে আছে উঠবে না মানে।'আবার বললাম ইনি আমার সিট এ বসবেন ই।
আমি ওনাকে বসতে দিয়েছি'।
একটা জিনিস দেখবেন কান্ডাকটাররা সাধারণত
প্যাসেঞ্জারদের ব্যাপারে নাক গলান না।
দূর থেকে মজা দেখেন। খুব বেশি কিছু  না হলে নাক গলায় না। তার আগে নিরাপদে উপভোগ করে আরোহীদের তর্কাতর্কি।
তো আমি আবার বললাম - 'আমার সঙ্গে আছেন আমি বসতে দিয়েছি।'
' আপনি বসতে দেওয়ার কে হে মশাই।'
'আপনি যে ভাষায় উঠতে বলছেন আমি সেই ভাষায়   ওনাকে  বসতে বলতে পারি।'
আপনার কি রাইট আছে।
আমি বললাম ~ আপনি যে রাইট দেখাচ্ছেন আমিও সেটাই দেখাচ্ছি।
হঠাৎ দুম করে বলে বসলেন - কই তো দেখি আপনি কি ভাবে  সিনিয়ার'।
-আমি তো আর জন্ম সময় পত্র হাতে নিয়ে ঘুরছিনা।
আর আপনাকেই বা দেখাবো কেন।
আমি হঠাৎ বলে উঠি -আপনি যে ব্য়স্ক তার প্রমান টা বাসার আগে দেখান।  রোগ আপনাকে বুড়িয়ে দিয়েছে বা বাল পাকিয়ে দিয়েছে সেটা কি করে বুঝবো?'
এবার উনি চুপসে যান আর ভাবতে থাকেন আমি ষাট পেরিয়েছি কিনা।
আসলে আমার পরিপার্শ্বিক আপাত কম বয়সী দেখতে এই চেহারা মায়ের সূত্রে।
79 তে মায়ের চুল একটুও পাকেনি। টনটন হেঁটে যেত মাইল কে মাইল।
নির্মেদ টানটান চেহারা।
আমার ও তেমনি। ষাট পেরিয়েছে টেরই পায়নি।
এমন অরাজনৈতিক ভ্রম আর বাদানুবাদ চলতেই থাকবে আমাদের চারপাশে।
আমরা শিকার হবো কখনো। কখনো রক্তাক্ত হবো।কখনো মিথ্যে জয়ের নেশায় মেতে উঠবো।
আমাদের হিপোক্রেশি আর চালিয়াতি গুলো
নাঙ্গা ঘুরে বেড়াবে আমাদের হাত ধরে।
এমন ভ্রমকে আটকানোর কোন দায়ব্দ্ধতার কথা ভাববো না।
কোন প্রতিষেধক আছে কিনা জানা নেই।




আণুপূর্বিক
------------------------------------



মাদার টেরিজা

শংকর ব্রহ্ম


মেরি টেরিজা বোজাঝিউ- (জন্ম: অ্যাগনিস গঞ্জা বোজাঝিউ; আলবেনীয়: ২৬শে আগস্ট , ১৯১০ সাল।) যিনি মাদার টেরিজা বা তেরেসা নামে অধিক পরিচিত, ছিলেন একজন আলবেনীয়-বংশোদ্ভুত ভারতীয় ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী এবং ধর্মপ্রচারক। টেরিজার জন্মস্থান অটোমান সাম্রাজ্যের আলবেনিয়া রাজ্যের স্কপিয়ে,উত্তর মেসিডোনিয়া। আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত তিনি সেখানেই কাটান। ১৯২৮ সালে তিনি আয়ারল্যান্ড হয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ উপনিবেশ ভারতে খ্রিস্টধর্ম প্রচার অভিযানে আসেন। জীবনের বাকি অংশ তিনি ভারতেই থেকে যান।

(তাঁর জীবনী)

মাদার তেরেসা মেমোরিয়াল হাউস, তার জন্মস্থান স্কোপজে অবস্থিত অ্যাগনিস গঞ্জা বোজাঝিউ আলবেনীয় ভাষায় গঞ্জা শব্দের অর্থ গোলাপকুঁড়ি) ১৯১০ সালের ২৬শে আগস্ট উসমানীয় সাম্রাজ্যের ইউস্কুবে (অধুনা উত্তর মেসিডোনিয়ার রাজধানী স্কপিয়ে) জন্মগ্রহণ করেন। তবে ২৬শে আগস্ট জন্ম হলেও তিনি ২৭শে আগস্ট তারিখটিকে তার "প্রকৃত জন্মদিন" মনে করতেন। কারণ ওই তারিখেই তার বাপ্তিস্ম সম্পন্ন হয়েছিল। তিনি ছিলেন নিকোলো ও দ্রানা বয়াজুর কনিষ্ঠ সন্তান। তাদের আদি নিবাস ছিল আলবেনিয়ার শ্‌কড্যর্ অঞ্চলে। তার পিতা আলবেনিয়ার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯১৯ সালে মাত্র আট বছর বয়সে তার পিতৃবিয়োগ হয়। পিতার মৃত্যুর পর তার মা তাকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে লালন-পালন করেন। জোয়ান গ্র্যাফ ক্লুকাস রচিত জীবনী থেকে জানা যায়, ছোট্টো অ্যাগনেস ধর্মপ্রচারকদের জীবন ও কাজকর্মের গল্প শুনতে বড়োই ভালবাসতেন। ১২ বছর বয়সেই তিনি ধর্মীয় সন্ন্যাস জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। ১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করে একজন ধর্মপ্রচারক হিসেবে যোগ দেন সিস্টার্স অফ লোরেটো সংস্থায়। মা আর দিদিদের সঙ্গে আর তার কোনোদিন দেখা হয়নি।

অ্যাগনেস প্রথমে আয়ারল্যান্ডের রথফার্নহ্যামে লোরেটো অ্যাবেতে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা করতে যান। কারণ এই ভাষাই ছিল ভারতে সিস্টার্স অফ লোরেটোর শিক্ষার মাধ্যম। ১৯২৯ সালে ভারতে এসে দার্জিলিঙে নবদীক্ষিত হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৩১ সালের ২৪শে মে তিনি সন্ন্যাসিনী হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ করেন। এই সময় তিনি ধর্মপ্রচারকদের পৃষ্ঠপোষক সন্ত Thérèse de Lisieux –এর নামানুসারে টেরিজা নাম গ্রহণ করেন। ১৯৩৭ সালের ১৪ই মে পূর্ব কলকাতায় একটি লোরেটো কনভেন্ট স্কুলে পড়ানোর সময় তিনি চূড়ান্ত শপথ গ্রহণ করেন।

স্কুলে পড়াতে তার ভাল লাগলেও কলকাতার দারিদ্র্যে তিনি উত্তরোত্তর উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতে লাগলেন। পঞ্চাশের মন্বন্তরে শহরে নেমে আসে অবর্ণনীয় দুঃখ আর মৃত্যু। ১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গাতেও বহু মানুষ মারা যান। এই সব ঘটনা টেরিজার মনে গভীর প্রভাব বিস্তার করে।


দ্য মিশনারিজ অফ চ্যারিটি

(দাতব্য ধর্মপ্রচারক সংঘ)

১৯৫০ সালে কলকাতায় তিনি দ্য মিশনারিজ অফ চ্যারিটি (দাতব্য ধর্মপ্রচারক সংঘ) নামে একটি খ্রিস্ট ধর্মপ্রচারণাসংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১২ সালে এই সংঘের সাথে যুক্ত ছিলেন ৪৫০০ সন্ন্যাসিনী। প্রথমে ভারতে ও পরে সমগ্র বিশ্বে তার এই ধর্মপ্রচারণা কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৬ সালে পোপ ফ্রান্সিস তাকে 'সন্ত' হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন এবং ক্যাথলিক গির্জায় তিনি 'কলকাতার সন্ত টেরিজা' হিসেবে আখ্যায়িত হন।

১৯৬৯ সালে বিবিসিতে সামথিং বিউটিফুল ফর গড শিরোনামে ম্যালকম মাগারিজের প্রামাণ্য তথ্যচিত্র প্রচারিত হলে তার দাতব্য ধর্মপ্রচারণাসংঘের কার্যক্রম পশ্চিমা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় এবং টেরিজার খ্যাতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পরে।তিনি ১৯৭৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার ও ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ভারতরত্ন লাভ করেন। টেরিজার মৃত্যুর সময় বিশ্বের ১২৩টি রাষ্ট্রে মৃত্যুপথ যাত্রী এইডস, কুষ্ঠ ও যক্ষ্মা রোগীদের জন্য চিকিৎসাকেন্দ্র, ভোজনশালা, শিশু ও পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র, অনাথ আশ্রম ও বিদ্যালয়সহ দ্য মিশনারিজ অফ চ্যারিটির ৬১০টি কেন্দ্র বিদ্যমান ছিল।

ততাঁর উত্তরসূরী - সন্ন্যাসিনী নির্মলা যোশি।

মেরি টেরিজা বোজাঝিউ একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব, মৃত্যুর আগে ও পরে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা ও একাধিক রাষ্ট্রের সরকার দ্বারা নন্দিত ও নিন্দিত হয়েছেন। জার্মেইন গ্রিয়ার টেরিজাকে 'ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদী' হিসেবে সমালোচনা করেছেন। ক্রিস্টোফার হিচেন্স, মাইকেল প্যারেন্টি, অরূপ চট্টোপাধ্যায়, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ প্রভৃতি ব্যক্তি ও সংস্থা জন্মনিরোধক এবং গর্ভপাতের বিষয়ে তার আপত্তি, দারিদ্র্যের আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্যে তার বিশ্বাস ও মৃত্যুপথযাত্রীদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করার সমালোচনা করেন। বিভিন্ন মেডিক্যাল জার্নালে তার প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসার নিম্নমানের সমালোচনা করা হয় এবং দানের অর্থের অস্বচ্ছ ব্যয়ের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

(মিশনারিস অফ চ্যারিটি)

১৯৪৬ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর ধর্মীয় নির্জনবাসের জন্য দার্জিলিং যাওয়ার সময় তার মধ্যে এক গভীর উপলব্ধি আসে। এই অভিজ্ঞতাকে পরবর্তীতে "আহ্বানের ভিতরে আরেক আহ্বান" হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। এ নিয়ে তিনি আরও বলেছিলেন,

"কনভেন্ট ত্যাগ করে দরিদ্রদের মাঝে বাস করা এবং তাদের সহায়তা করা আমার জন্য আবশ্যক ছিল। এটা ছিল এক সরাসরি আদেশ। এই আদেশ পালনে ব্যর্থ হওয়ার অর্থ ছিল বিশ্বাস ভেঙে ফেলা”

১৯৪৮ সালে এই মোতাবেক দরিদ্রের মাঝে ধর্মপ্রচার কাজ শুরু করেন। প্রথাগত লোরেটো অভ্যাস ত্যাগ করেন। পোশাক হিসেবে পরিধান করেন নীল পারের একটি সাধারণ সাদা সুতির বস্ত্র। এ সময়ই ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করে বস্তি এলাকায় কাজ শুরু করেন। প্রথমে মতিঝিলে একটি ছোট স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে ক্ষুধার্ত ও নিঃস্বদের ডাকে সাড়া দিতে শুরু করেন। তাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করতে থাকেন। তার এই কার্যক্রম অচিরেই ভারতীয় কর্মকর্তাদের নজরে আসে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও তার কাজের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।

মাদার টেরেসা প্রতিষ্ঠিত নির্মল হৃদয় (২০০৭ সালে)

প্রথম দিকের এই দিনগুলো তার জন্য বেশ কষ্টকর ছিল। এ নিয়ে ডায়রিতে অনেক কিছুই লিখেছেন। সে সময় তার হাতে কোন অর্থ ছিল না। গরিব এবং অনাহারীদের খাবার ও আবাসনের অর্থ জোগাড়ের জন্য তাকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হতো। ধনী ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে হতো। এসব কাজ করতে গিয়ে অনেক সময়ই হতাশা, সন্দেহ ও একাকিত্ব বোধ করেছেন। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে, কনভেন্টের শান্তির জীবনে ফিরে গেলেই বোধহয় ভাল হবে। ডায়রিতে লিখেছিলেন:

"ঈশ্বর চান যে, আমি এক বন্ধনমুক্ত সন্ন্যাসিনীই থাকি, ক্রুশ চিহ্নের দীনতা আমাকে আবৃত করে থাক। আজ একটা ভাল শিক্ষা পেলাম। গরিব লোকদের দারিদ্র্য কত কষ্টকর। যখন বাড়ি খুঁজে বেড়াচ্ছি, হেঁটে হেঁটে আমার গা-হাত-পা ব্যথা হয়ে যেত। আমি ভেবে দেখলাম, বাসস্থান, খাদ্য, সাহায্য কোথায় পাবে, তার চেষ্টাতেই গরিব মানুষদের দেহ এবং আত্মা কী যন্ত্রণা ভোগ করে। তখন প্রবল হয়ে উঠলো লোভ। লরেটোর প্রাসাদোপম গৃহগুলির কথা মনে উদয় হল। কে যেন আমায় লোভ দেখাতে লাগল, 'একবার মুখ ফুটে চাইলেই, সে-সবই আবার ফিরে পাব।' আমার প্রভু, নিজের ইচ্ছায়, তোমার প্রতি প্রেমে, আমি তাই করতে চাই, যা আমাকে দিয়ে তুমি করাতে চাও। এক বিন্দু অশ্রুও আমার চোখ থেকে আমি পড়তে দিলাম না।”

১৯৫০ সালের ৭ই অক্টোবর তেরেসা "ডায়োসিসান ধর্মপ্রচারকদের সংঘ" (বিশপের এলাকার মত সমাবেশ) করার জন্য ভ্যাটিকানের অনুমতি লাভ করেন। এ সমাবেশই পরবর্তীতে মিশনারিস অফ চ্যারিটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

কলকাতায় মাত্র ১৩ জন সদস্যের ছোট্ট অর্ডার হিসেবে চ্যারিটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে এর অধীনে ৪,০০০ এরও বেশি সন্ন্যাসিনী কাজ করছেন। চ্যারিটির অধীনে এতিমখানা ও এইড্‌স আক্রান্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিচালিত হয়। বিশ্বব্যাপী শরণার্থী, অন্ধ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, বয়স্ক, মাদকাসক্ত, দরিদ্র্য, বসতিহীন এবং বন্যা, দুর্ভিক্ষ বা মহামারিতে আক্রান্ত মানুষের সেবায় চ্যারিটির সবাই অক্লান্ত পরীশ্রম করে যাচ্ছেন।

১৯৫২ সালে মাদার তেরেসা কলকাতা নগর কর্তৃপক্ষের দেয়া জমিতে মুমূর্ষুদের জন্য প্রথম আশ্রয় ও সেবা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। ভারতীয় কর্মকর্তাদের সহায়তায় একটি পরিত্যক্ত হিন্দু মন্দিরকে কালিঘাট হোম ফর দ্য ডাইং-এ রূপান্তরিত করেন। এটি ছিল দরিদ্র্যদের জন্য নির্মীত দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র। পরবর্তীতে এই কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে রাখেন নির্মল হৃদয়। এই কেন্দ্রে যারা আশ্রয়ের জন্য আসতেন তাদেরকে চিকিৎসা সুবিধা দেয়া হতো এবং সম্মানের সাথে মৃত্যুবরণের সুযোগ করে দেয়া হয়। এ বিষয় তেরেসা বলেন, "A beautiful death is for people who lived like animals to die like angels — loved and wanted." এর কিছুদিনের মধ্যেই তেরেসা হ্যানসেন রোগে (সাধারণ্যে কুষ্ঠরোগ নামে পরিচিত) আক্রান্তদের জন্য একটি সেবা কেন্দ্র খোলেন যার নাম দেয়া হয় শান্তি নগর। এছাড়া মিশনারিস অফ চ্যারিটির উদ্যোগে কলকাতার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেশ কিছু কুষ্ঠরোগ চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এই কেন্দ্রগুলোতে ঔষধ, ব্যান্ডেজ ও খাদ্য সুবিধা দেয়া হয়।

সংঘের শিশুদের লালন-পালন করতো। এক সময় শিশুর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ায় তেরেসা তাদের জন্য একটি আলাদা হোম তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এই অনুভূতি থেকেই ১৯৫৫ সালে নির্মল শিশু ভবন স্থাপন করেন। এই ভবন ছিল এতিম ও বসতিহীন শিশুদের জন্য এক ধরনের স্বর্গ।

অচিরেই মিশনারিস অফ চ্যারিটি দেশ-বিদেশের বহু দাতা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়। এর ফলে অনেক অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। ১৯৬০-এর দশকের মধ্যে ভারতের সর্বত্র চ্যারিটির অর্থায়ন ও পরিচালনায় প্রচুর দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র, এতিমখানা ও আশ্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতের বাইরে এর প্রথম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে ভেনিজুয়েলায়। মাত্র ৫ জন সন্ন্যাসিনীকে নিয়ে সে কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৬৮ সালে রোম, তানজানিয়া এবং অস্ট্রিয়াতে শাখা খোলা হয়। ১৯৭০-এর দশকে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার কয়েক ডজন দেশে শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সাথে অবশ্য তার দর্শন ও প্রায়োগিক দিক নিয়ে কিছু সমালোচনাও হয়। মাদার তেরেসার বিরুদ্ধে সমালোচকরা খুব কম তথ্যই হাজির করতে পেরেছিলেন। একথা স্বীকার করে নিয়েই ডেভিড স্কট বলেন, “মাদার তেরেসা স্বয়ং দারিদ্র্য বিমোচনের বদলে ব্যক্তি মানুষকে জীবিত রাখার উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।” এছাড়া কষ্টভোগ বিষয়ে তার মনোভাবও সমালোচিত হয়েছে। অ্যালবার্টার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “তিনি মনে করতেন, কষ্টভোগের মাধ্যমে যীশুর কাছাকাছি যাওয়া যায়।” এছাড়া ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল ও দ্য ল্যান্সেট পত্রিকায় তার সেবা কেন্দ্রগুলোর চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। অনেকেই এক হাইপোডার্মিক সূচ একাধিক বার ব্যবহারের কথা বলেছেন। কেন্দ্রগুলোর জীবনযাত্রার নিম্নমানও সমালোচিত হয়েছে। তার উপর সংঘের অ-বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি পদ্ধতিগত রোগ-নিরূপণকে প্রায় অসম্ভব করে তুলেছিল।

(আন্তর্জাতিক কার্যক্রম)

১৯৮২ সালে বৈরুত অবরোধের চূড়ান্ত প্রতিকূল সময়ে মাদার তেরেসা যুদ্ধের একেবারে ফ্রন্ট লাইনের হাসপাতালে আটকে পড়া ৩৭ শিশুকে উদ্ধার করেন। ইসরায়েলী সেনাবাহিনী ও ফিলিস্তিনী গেরিলাদের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধ বিরতি ঘটিয়ে পরিবেশ কিছুটা অনুকূলে এনেছিলেন। এই সুযোগেই রেড ক্রসের সহায়তায় যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চলে যান। বিধ্বস্ত হাসপাতালগুলো থেকে কম বয়সের রোগীদের সরিয়ে আনেন।

সমাজতান্ত্রিক শাসনের সময়ে পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশেই ধর্মপ্রচার কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ১৯৮০-'র দশকে ইউরোপের সে অংশ তুলনামূলক উদার হয়ে উঠে। এ সময়েই মাদার তেরেসা মিশনারিস অফ চ্যারিটির কাজ পূর্ব ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। কয়েক ডজন প্রকল্পের মাধ্যমে তার কাজ শুরু হয়েছিল। এ সময় গর্ভপাত এবং বিবাহবিচ্ছেদ-এর বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের কারণে অনেকে তার সমালোচনা করেন। কিন্তু তেরেসা সব সময় বলতেন, "No matter who says what, you should accept it with a smile and do your own work."

তেরেসা ইথিওপিয়ার ক্ষুধার্তদের কাছে যেতেন, ভ্রমণ করতেন চেরনোবিল বিকিরণে আক্রান্ত অঞ্চলে। আমেরিকার ভূমিকম্পে আক্রান্তদের মাঝে সেবা পৌঁছে দিতেন। ১৯৯১ সালে তেরেসা প্রথমবারের মত মাতৃভূমি তথা আলবেনিয়াতে ফিরে আসেন। এদেশের তিরানা শহরে একটি "মিশনারিস অফ চ্যারিটি ব্রাদার্স হোম" স্থাপন করেন।

১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর ১০০ টিরও বেশি দেশে মোট ৫১৭টি ধর্মপ্রচার অভিযান পরিচালনা করছিলেন। মাত্র ১২ জন সদস্য নিয়ে যে সংঘের যাত্রা শুরু হয়েছিল সময়ের ব্যবধানে তা কয়েক হাজারে পৌঁছোয়। তারা সবাই বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪৫০টি কেন্দ্রে মানবসেবার কাজ করে যাচ্ছিল। গরিবদের মধ্যেও যারা গরিব তাদের মাঝে কাজ করতো এই চ্যারিটি, এখনও করে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চ্যারিটির প্রথম শাখা প্রতিষ্ঠিত হয় নিউ ইয়র্কের ব্রঙ্ক্‌স বরোর দক্ষিণাঞ্চলে। ১৯৮৪ সালের মাঝে যুক্তরাষ্ট্রে চ্যারিটির প্রায় ১৯টি শাখা সক্রিয়ভাবে কাজ করা শুরু করে।

চ্যারিটি দাতব্য কাজের জন্য যে অর্থ পেতো তার ব্যবহার নিয়ে বেশ কয়েকজন সমালোচনা করেছেন। ক্রিস্টোফার হিচেন্স ও স্টার্ন সাময়িকী সমালোচনা করে বলেছে, গরীবদের উন্নয়নের কাজে চ্যারিটিতে যত অর্থ আসে তার কিছু অংশ অন্যান্য কাজেও ব্যয় করা হয়।

(সম্মান ও পুরস্কার প্রাপ্তি)

নোবেল শান্তি পুরস্কার  (১৯৭৯ সাল)
ভারতরত্ন  (১৯৮০ সাল)
প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম (১৯৮৫ সাল)
বালজান পুরস্কার (১৯৭৮ সাল)

কলকাতার রাজা রামমোহন রায় সরণিতে মাদারের মূর্তি আছে।

(সিদ্ধাবস্থা)

১৭ই ডিসেম্বর ২০১৫ সালে ভ্যাটিকান নিশ্চিত করে যে পোপ ফ্রান্সিস মাদার তেরেসার একটি দ্বিতীয় অলৌকিক অবদানকে স্বীকৃতি দিয়েছেন, যেটিতে একাধিক মস্তিষ্কের টিউমার সহ একজন ব্রাজিলিয়ান মানুষের নিরাময় জড়িত। পোপ ফ্রান্সিস ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তে ভ্যাটিকান সিটির সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারে একটি অনুষ্ঠানে তাকে সন্ত উপাধি প্রদান করেন । ১৫ জন সরকারি প্রতিনিধি এবং ইতালি থেকে ১,৫০০ গৃহহীন মানুষ সহ, শত সহস্র মানুষ অনুষ্ঠানের জন্য জড়ো হন। অনুষ্ঠানটি ভ্যাটিকান চ্যানেলে লাইভ টেলিভিশনে এবং অনলাইন দেখানো হয়েছিল; মাদার তেরেসার আদি শহর স্কোপজেতে, তার সিদ্ধাবস্থার একটি সপ্তাহব্যাপী উদ্‌যাপন ঘোষণা করা হয়। ভারতের, কলকাতায় মিশনারিজ অফ চ্যারিটিতে একটি বিশেষ গণ উদ্‌যাপন করা হয়।

(স্বাস্থ্যহানি ও মৃত্যু)

১৯৮৩ সালে পোপ জন পল-২ এর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে রোম সফরের সময় মাদার তেরেসার প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয়। ১৯৮৯ সালে আবার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর তার দেহে কৃত্রিম পেসমেকার স্থাপন করা হয়। ১৯৯১ সালে মেক্সিকোতে থাকার সময় নিউমোনিয়া হওয়ায় হৃদরোগের আরও অবনতি ঘটে। এই পরিস্থিতিতে তিনি মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু চ্যারিটির নানরা গোপন ভোটগ্রহণের পর তেরেসাকে প্রধান থাকার অনুরোধ করে। অগত্যা তেরেসা চ্যারিটির প্রধান হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।

১৯৯৬ সালের এপ্রিলে পড়ে গিয়ে কলার বোন ভেঙে ফেলেন। আগস্টে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। এর পাশাপাশি তার বাম হৃৎপিণ্ডের নিলয়, রক্ত পরিবহনে অক্ষম হয়ে পড়ে। ১৯৯৭ সালের ১৩ই মার্চ মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ থেকে সরে দাড়ান। ৫ই সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

কলকাতার আর্চবিশপ হেনরি সেবাস্তিয়ান ডি'সুজা বলেন, তেরেসা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তিনি এক ধর্মপ্রচারককে এক্‌জোর্সিজ্‌ম করতে বলেছিলেন। কারণ তার ধারণা ছিল, কোন শয়তান তেরেসাকে আক্রমণ করেছে।

মৃত্যুর সময় মাদার তেরেসার মিশনারিস অফ চ্যারিটিতে সিস্টারের সংখ্যা ছিল ৪,০০০ জন এবং এর সাথে ৩০০ জন ব্রাদারহুড সদস্য ছিল। আর স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা ছিল ১০০,০০০ এর উপর। পৃথিবীর ১২৩টি দেশে মোট ৬১০টি কেন্দ্রে ধর্মপ্রচারণার কাজ পরিচালিত হচ্ছিল। এসব কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ছিল এইড্‌স, কুষ্ঠরোগ ও যক্ষ্মা রোগে আক্রান্তদের জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র, সুপ কিচেন, শিশু ও পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র, এতিমখানা ও বিদ্যালয়।

(আধ্যাত্মিক জীবন)

যদিও টেরিজা তার দৈনন্দিন জীবনে নিয়মানুবর্তিতার সাথে খ্রিস্টধর্মের আচার পালন করতেন, তার চিঠিপত্র থেকে জানা যায় তিনি তার জীবনের শেষ পঞ্চাশ বছর অন্তরের অন্তস্থলে ইশ্বরের অস্তিত্ব অনুভব করেননি। ইশ্বরের অনুপস্থিতে হাহাকার প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন যে ঈশ্বর তাকে পরিত্যাগ করেছেন।

"Where is my faith? Even deep down ... there is nothing but emptiness and darkness ... If there be God—please forgive me."

(কোথায় আমার বিশ্বাস? এমনকি হৃদয়ের গভীরে শূন্যতা আর অন্ধকার ছাড়া কিছু নেই। যদি ঈশ্বর তুমি থাকো, আমাকে ক্ষমা করো।)

(মাদার টেরিজার সমালোচনা)

একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে মেরি টেরিজা বোজাঝিউ'র জীবন ও কর্ম তার মৃত্যুর আগে ও পরে বিশ্বের বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা ও একাধিক রাষ্ট্রের সরকার দ্বারা নন্দিত ও নিন্দিত হয়েছে। তার ও তার প্রতিষ্ঠিত দাতব্য ধর্মপ্রচারকদলের ক্রিয়াকলাপ অসংখ্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সমালোচকরা দাতব্য ধর্মপ্রচারকদলের সেবার নিম্নমান, বলপূর্বক ধর্মান্তর ও মৃত্যুপথযাত্রীদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষাদানের নিন্দা জ্ঞাপন করেছে এবং তাদের সাথে উপনিবেশবাদ ও বর্ণবাদের সম্পর্ক পেয়েছে। টেরিজার সঙ্ঘের 'সবকিছুই ছিল খ্রিস্টান হবার শর্তে' – সে খাবার হোক বা শোবার জায়গা হোক। টেরিজা গণযোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত ছিলেন। অনেক সমালোচক মনে করেন, ক্যাথলিক চার্চ খ্রিস্টানধর্ম প্রচার ও সমালোচনার মোকাবেলা করতে তেরেসার ভাবমূর্তি ব্যবহার করেছে। বিশ্ববিখ্যাত চিন্তাবিদ জার্মেইন গ্রিয়ার টেরিজাকে 'ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদী' বলে সমালোচনা করেছেন। অনেকে তাকে উন্মত্ত উগ্রবাদী, মৌলবাদী তথা ভণ্ড বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন যে তিনি নিজের ধর্মীয় আদর্শ তথা ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে দুস্থ-বঞ্চিতদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন।



------------------


মহাকুম্ভ - কলসের ভিতর কি?

নীলম সামন্ত


সনাতনী ধর্মের মানুষের মহাস্নানের তিথি, যেখানে দেশ বিদেশ থেকে নানান মানুষ সহ ভারতের সমস্ত নাগা সন্ন্যাসীদের ভীড় দেখা যায়। ২০২৫ সাল মহাকুম্ভের মহাসূচনা। জানুয়ারি মাসের তেরো তারিখ পৌষ-পূর্ণিমার দিন- আর চলবে মাঘিপূর্ণি ফ্রেব্রুয়ারি মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত। সন্ন্যাসী, সাধু, যোগীদের থেকেও বেশি ভিড় সাধারণ মানুষের৷ এলাহবাদের প্রয়াগ এসবেরই সাক্ষী হয়ে থাকছে।

কুম্ভমেলা প্রধাণত চার প্রকারের হয়৷ প্রতি তিন বছরে একবার করে হয় কুম্ভমেলা, প্রতি ছয় বছরে হয় অর্ধকুম্ভ মেলা, প্রতি বারো বছরে হয় পূর্ণকুম্ভ মেলা। প্রতি একশ' চুয়াল্লিশ বছর পর হয় মহাকুম্ভ মেলা। কুম্ভমেলার সম্পর্কে পুরাণ প্রচলিত কথায় ঢুকে পড়ার আগে বলি কুম্ভ'র অর্থ। না, কুম্ভ'র অর্থ কোন রাশি নয়, কুম্ভ হল কলসি বা কলস বা ঘট। সেই ঘট যার মধ্যে সমুদ্রমন্থনের সময় ধন্বন্তরির হাতে করে উঠেছিল অমৃত। কি এই অমৃত? অমর হওয়ার বিশেষ তরল, নাকি সোমরস? প্রসঙ্গত বলে রাখি অমৃতরস যদি সোমরসও হয় তাহলে সোমরস কিন্তু অ্যালকোহল জাতীয় কোন বিশেষ পানীয় নয়। এবং এই কথা আমার নয়। ঋকবেদে সোম এর কথা উল্লেখ রয়েছে। আমেরিকান লেখক আর, জর্ডন ওয়াসন এর লেখা সাড়া জাগানো বই দ্য ডিভাইন মাশরুম বইতে ছবি সহ উল্লেখ আছে এক আলোকিত মাশরুমের। যা হিমালয়ের পাদদেশে এক প্রকার মাশরুম পাওয়া যায়, রাত্রি হলে এই মাশরুমের গা দিয়ে অদ্ভুত আলো বিচ্ছুরিত হয়। এই বিষয় নিয়ে এবং বইটি নিয়ে অনেক কনফারেন্স হয়েছে, এবং অনেক ভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে এই মাশরুমের রসই সোমরস, যা চিকিৎসা বিজ্ঞান জগতে সাড়া ফেলানো৷ তবে অবশ্যই অমরত্ব লাভ নয়। তবে কেন অমৃত অমরত্ব বিষয়ক তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়৷

যদি অমরত্ব লাভের রস অমৃত নয় তাহলে কেন সেই অমৃত নিয়ে এতো লড়াই?

নানান প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে যে কথা স্পষ্ট হয় আমাদের এক একটা পুরানে এক এক ধরণের ব্যাখ্যা। শিব পুরান থেকে পদ্মপুরান রামায়ণ মহাভারত এবং হরিবংশ, সবেতেই যেভাবেই হোক, অতিরঞ্জিত করে হলেও সমুদ্র মন্থনের ঘটনার উল্লেখ আমরা পাই৷ অর্থাৎ কিছু একটা ঘটেছিল, হয়তো তা কলস মন্থন কিংবা সমুদ্র। হতে পারে কলসকেই বৃহদাকারে সমুদ্রে বর্ণনা করা হয়েছে৷ তবে যেমনই হোক আবারও বলছি মন্থন হয়েছিল। এবং তাতে উঠে এসেছিল নানান বস্ত৷ সমুদ্র মন্থন ধরে এগোলে দেখা যায় মন্থনে প্রথম উঠেছিল ঘি, যা কি না আয়ুর প্রতীক। আয়ু বাড়ায় কিংবা কমায় সেই বিতর্কে না গিয়েও অনায়াসে বলতে পারি ঘি আমাদের শরীরের পক্ষে আসলেই কত উপকারী এবং আমাদের কত রোগ থেকে মুক্ত করে। এভাবেই একের প এক জিনিস ওঠার পর ধন্বন্তরির হাতে এলো অমৃত কলস৷ এই জায়গায় আমার মনে হয় দৃষ্টিপাত অমৃত কলসের দিকে দেওয়ার আগে আমাদের ধন্বন্তরির দিকে দিলে বাকি বিষয়টা সহজ হয়ে ওঠে৷ ছোট্ট একটা প্রশ্ন ধন্বন্তরি কে?

ভারতবর্ষ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বহু যুগ আগে থেকেই অনেক অনেক উন্নত। এবং ভারত থেকেই এই আয়ুর্বেদ চিকিৎসা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এই আয়ুর্বেদ যার হাতে জন্মেছিল তিনিই হলেন ধন্বন্তরি৷ পুরান মতে দেবতাদের ডাক্তার ধন্বন্তরি। বর্তমানেও তাকেই মান দিয়ে কোন ডাক্তার অবিশ্বাস্য সাফল্যের দিকে এগিয়ে গেলে আমরা বলি ধন্বন্তরি ডাক্তার৷ আসলে পুরানের ওই ধন্বন্তরিকেই উদাহরণ হিসেবে নিয়ে আসি। এখন কথা হচ্ছে আয়ুর্বেদের জনকের হাতে অমরত্বের রস উঠল? আবার অমরত্বের রসই যদি ওঠে তবে ডাক্তার ধন্বন্তরির কি প্রয়োজন? একটু তলিয়ে ভাবলেই স্পষ্ট হয়, মন্থনের ফলে আসলেই সমুদ্রতলদেশ থেকে নানান ধরণের আয়ুর্বেদিক ঔষধি উঠে আসে৷ যা পরবর্তীতে চিকিৎসা শাস্ত্রের বিশাল উন্নতির অভিমূখ হয়ে দাঁড়ায়৷ খুব সাধারণ ভাবেই যদি আমরা মন্থনের কথা ভাবি, কলসিতে দুধ দিয়ে মন্থন করলে ফ্যানা ওঠে তারপর মাখন ওঠে। তেমনি সমুদ্র এতো বড় তট মন্থন হল৷ সেখানে তলদেশ থেকে নানান উদ্ভিদ বা অন্য কিছু উঠে আসবে এটাই স্বাভাবিক। মহাভারতের পরবর্তীকালের রচনা হরিবংশ নাড়াঘাঁটা করে আমার এইটুকুই বিজ্ঞান সম্মত মনে হয়েছে। এর পেছনে যদিও আরও একটা যুক্তি আছে, হয়তো বা কাকতালীয়৷ তাও, যেকোনো আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা কেন্দ্রে যদি ভালোভাবে লক্ষ্য করা যায় তাহলে আমরা এমন কোন পাত্র বা হামানদিস্তার মত দেখতে জিনিস পাই যার মধ্যে একটি মন্থন দণ্ড থাকে। আয়ুর্বেদিক ওষুধগুলো ওই মন্থন  দ্বন্দ্বের সাহায্যে এখন ধরে মন্থিত করা হয় এবং পরবর্তীতে তা মধুর সাথে মিশিয়ে খাইয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ বলা যায় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে মন্থন দন্ডের জায়গা উল্লেখযোগ্য৷

এই ব্যাখ্যা ছাড়াও যদি আমরা আরো একটু অন্যরকম ভাবে ভেবে দেখতে চাই তাহলে বলবো কুম্ভ অর্থাৎ কলস কে উল্টে দেখতে। কলস উল্টে দিলে যে আকৃতি তৈরি হয় সেই আকৃতি হল আমাদের গলা সমেত মাথা। খুব একটা ভুল বলছে কি? ছোটবেলার একটি কথা মনে পড়ে, যখন কোন নির্বুদ্ধিতার কাজ করেছি তখনই বাড়ির কোন গরুজন বা শিক্ষক মশাইরা বলতেন "তোর ঘটে কি আছে"। ঘট অর্থে কলসি অর্থে কুম্ভ। সেক্ষেত্রে মাথাকে কুম্ভ হিসেবে উল্লেখ করা যেতেই পারে। সমুদ্র মন্থনের পর হতেই পারে আমাদের মাথা অর্থাৎ বুদ্ধি উঠে এসেছিল। যাকে কাজে লাগিয়ে আমরা ক্রমশ উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছি এবং নিজেদের ছাপ যুগের প্রতিটা ধাপে ভালোভাবে রেখে দিতে সক্ষম হচ্ছি। মানুষ কখনোই অমর নয়, অমর তার কাজ তার সৃষ্টি। আর যে সৃষ্টি যুগের পর যুগ ধরে থেকে যায় সেই সৃষ্টিই কিন্তু স্রষ্টা কে অমরত্ব দিয়ে থাকে। তাহলে সমুদ্র মন্থনে কুম্ভের ভেতর যা উঠেছিল তা অমৃত যদিও হয় তবে তা সঠিকভাবে কাকে প্রতিনিধিত্ব করেছিল?

কোথাও কি মনে হয় না, এই বিপুল আবিষ্কারকেই উদযাপন করতে বহু বছর ধরে কুম্ভ মেলার আয়োজন। আর সেই মহা আয়োজনে সেই সমস্ত সন্ন্যাসীদের আগমন হয় যাদের আমরা সাধারণ জনজীবনে দেখতে পাই না যারা নিভৃতে প্রাচীন আবিষ্কার, জ্ঞান ও নিজেদের জানার উদ্দেশ্যে সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন। তবে কি যারা কুম্ভমেলায় আসেন তাঁরা সকলেই এমন? না তা নয়, গঙ্গায় তো কতই বেনো জল আছে তাও তো গঙ্গাকেই আমরা বিশুদ্ধ জল মানি৷ সাধু সন্ন্যাসীরাও অনেকটা সেরকম।

কুম্ভ মেলা আসলেই সকলের বা জনসাধারণের জন্য নয়। কিন্তু বর্তমানে হুজুগে পৃথিবীবাসী সকলেই রাতারাতি পূন্যস্নানের লোভে ছুটছেন। এভাবেই কি জীবনের পাপ ধুয়ে ষোলকলা পূন্যে পূর্ণ করা যায়?




৩টি মন্তব্য:

  1. কুম্ভ মেলার উপর লেখাটি পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলামলেখিকা কে অনেক ধন্যবাদ

    উত্তরমুছুন
  2. "চলতি পথে কেউ ছিল" তমাল ঘোষের এই কবিতাটি অনেক কথার সমাবেশ।
    ভাবনার ফল্গুধারায়
    বিরহ বেদনা যেন জেগে উঠেছে...
    ভালো লাগলো।

    উত্তরমুছুন

Kobitar Alo April Sankhya 2025

    প্রচ্ছদ ঋণঃ-  পিনাকী রায় (কণিষ্ক)