ডাকঘর লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
ডাকঘর লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শুক্রবার, ২১ জুন, ২০২৪

ডাকঘর | অদিতি সেনগুপ্ত



অর্নিদেশের চিঠি


বাপি,

        জানি এ চিঠি পাঠানোর কোনও ঠিকানা হয় না। কিন্তু কি জানো তো আমি বিশ্বাস করি সন্তান হচ্ছে শিকড়ের মত, মাটির সঙ্গে যার যোগ অনেক গভীরে নিহিত থাকে। তাই আমার এই না পাঠানো চিঠিও তুমি ঠিকই পড়ে ফেলবে এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত। জানোতো মা ইদানিং তোমার ছবির সঙ্গে ঝগড়া করছে! আমিই বলেছি মা কে তোমার যা যা বলতে ইচ্ছে করে তোমার বরকে, তুমি এই ছবির ভদ্রলোককেই বলে দিও নির্দ্বিধায়। আর জানোই তো মা আমার কথা একেবারে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে। কতবার তো এই নিয়েও তোমাদের মধ‍্যে ঝগড়াও বেঁধেছে যে, আমি যদি বলি সূর্য আজকাল পশ্চিমে উঠছে মা সেটাই সত্যি বলে মেনে নেবে। সেদিন শুনছি মা বলছে, "পরের জন্মে কিন্তু আমার এই গোটা পরিবারটাই চাই! একজনেরও বিকল্প চলবে না..."

 

এখনও অনেকেই জানেনা তোমার শারীরিক চলে যাওয়ার খবরটা। যত কম জন জানে ততই আমার ভালো। আসলে কী জানো যারা এখনও জানেনা তোমার শরীরের না থাকার খবরটা, তাদের কাছে তো এখনও তুমি পূর্ণাবয়বে জীবন্ত আর এই ভাবনাটাই আমার ভেতর থেকে তৃপ্তি দেয় যে অনেকের মস্তিষ্কে আজও তুমি একইভাবে ওই ঘরটায় বসে ছাত্র পড়াচ্ছো। আসলে আমার মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষেই তুমি ভীষণভাবে জীবন্ত। 'বাবা' মেয়েদের জীবনে একটা অতিরিক্ত ভালোবাসার জায়গা সেটা বৈজ্ঞানিক সত‍্য। কিন্তু আমার জীবনে মা থাকা সত্ত্বেও তোমার অস্তিত্ব বাবার সঙ্গে সঙ্গে মা হিসেবেও কিছু কম ছিল না। নিজের হাতে পরিপাটি করে সাজিয়ে তুলতে তুমি তোমার আত্মজাকে। এখনও বড় ইচ্ছে করে সেই ছোটবেলার মতো একহাতে গাল টিপে আরেকহাতে চুল আঁচরে দাও তুমি। ছোট থেকেই আমি একটু বেশিই অনুভূতিপ্রবণ। সেই যেবার তোমার কারখানার গেটে তালা ঝুলল, পুজোর সময় একটিবারও বলিনি একটা নতুন জামা কিনে দেবার জন‍্য। আমি ঘুমিয়ে পড়েছি ভেবে তুমি মাকে বলেছিলে, "কত বোঝদার দেখেছো আমার ডোডোতাতাই!" বলতে বলতে তোমার গলার স্বরে এক আশ্চর্য আলো ফুটে উঠেছিল। তুলোয় মোড়ানো আঙুর ফলের মত আগলে রেখেছো সর্বদাই। কিন্তু হিসেব মেলেনি শেষমেশ। এটা বুঝি যে আমার কঠিন জীবন যুদ্ধ তোমাকে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত অহর্নিশ বিদ্ধ করেছে। তবে কী জানো তো বাপি, আগুনের ওপরে হাঁটতে হাঁটতে আজ আর কোনো আঁচই পোড়ায় না আমায়। শুধু দিনের শেষে ঘরে ফেরার উৎসাহটা চলে গেছে। খেতেও ইচ্ছে হয় না তেমন! কী করেই বা হবে বলো, এখন তো কেউ সাত দিনে সাতরকম বাজার করে খাওয়ায় না আমাকে। "মাছটা কেমন ছিল রে" চোখে এই জিজ্ঞাসা নিয়ে, আর কেউ খাওয়ার সময় দরজার কোন থেকে উঁকিও দেয়না। জানি আগামীর চলাটা আরও কঠিন হলো! তবুও আমি থামব না। মনের ভেতরের তুমিটাই আমাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে নিরুদ্দেশের অন্তহীণ যাত্রায়...


নির্ভার হয়ে ভালো থেকো তুমি...


তোমার 

ডোডো-তাতাই

Kobitar Alo April Sankhya 2025

    প্রচ্ছদ ঋণঃ-  পিনাকী রায় (কণিষ্ক)