সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৪

Kobitar Alo October Sankhya 2024

 


প্রচ্ছদ ঋণঃ- দেবদুত মুখোপাধ্যায়

সূচীপত্র
-----------------------



প্রচ্ছদ
------------------
দেবদুত মুখোপাধ্যায়


সম্পাদকীয় কলাম
-----------------------------

কৌশিক চক্রবর্ত্তী


কবিতা ভিত্তিক
------------------
তৈমুর খান
অর্ণব সামন্ত
ডঃ সুব্রত চৌধুরী 
শর্মিষ্ঠা মিত্র পাল চৌধুরী 
দয়াময় পোদ্দার 
আকরাম রাজা সেখ
উৎপলেন্দু দাস
নিশীথ ষড়ংগী
জীবন সরখেল


সম্মিলন
------------------
অর্ণব সামন্ত


গল্পাণু
------------------
তমেকা ঘোষ


ছোট গল্প
------------------
মেনকা সামন্ত


আনুপূর্বিক
---------------------
অঞ্জনা মজুমদার 
শর্মিষ্ঠা ঘোষ


ব্যক্তিগত গদ্য
------------------
পার্থ সারথি বণিক


অরাজনৈতিক ভ্রম
------------------------------------
রুদ্রাণী মিশ্র



সম্পাদকীয় কলাম
-----------------------


আজ আবার একটি একুশ তারিখ। অর্থাৎ আমাদের অনলাইন ওয়েব সংখ্যা প্রকাশের দিন। সেই প্রথম দিন থেকেই আমরা এই তারিখটিকে পাখির চোখ করে এগিয়েছি। আপনাদের কথা দিয়েছিলাম প্রতিমাসের একুশে আমরা আপনাদের হাতে তুলে দেব এক একটি নতুন ঝকঝকে ওয়েব সংখ্যা। একুশ আমাদের গর্ব। একুশ আমাদের অহংকার। তাই এই একুশকে স্মরণে রেখেই আমাদের পথচলা।

এই অক্টোবরে আমরা আপনাদের হাতে তুলে দিলাম আরো একটি বিশেষ সংখ্যা। প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধের আবহে অনুষ্ঠিত হলো বাঙালির সর্বকালীন সেরা উৎসব দুর্গাপুজো। সবকিছুর মধ্যেই আমরা স্মরণ করলাম দেবী দুর্গাকে। কিন্তু চারপাশ যেন ভারী হয়ে আছে। আনাচে-কানাচে বিষাদের সুর। তিলোত্তমার বিচার আমাদের একমাত্র চাওয়া। উৎসবের আবহেও একপাশে নিরবচ্ছিন্নভাবে বয়ে গেল সেই স্রোত। আলো অন্ধকারের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে আমরাও তাই তৈরি করলাম আরও একটি প্রাসঙ্গিক সংখ্যা।

দুর্গাপুজো এবং তিলোত্তমার মাঝখানে তথাকথিত কোন বিরোধ নেই। কিন্তু উৎসবের উল্লাসকে বর্জন করে আমরা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম সেইসব প্রতিবাদগুলির দিকেই। আমরা চেষ্টা করলাম উৎসবের আবহে মিশে থাকা কিছু প্রতিবাদী কন্ঠস্বরকে প্রকাশ্যে তুলে আনতে। বিগত দুটি সংখ্যার মত এই সংখ্যাতেও আমরা প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধের কলমগুলিকে জড়ো করেছি একত্রে। শুধু পার্থক্য হিসাবে যুক্ত হল উৎসবের প্রেক্ষাপট। আমরা জানি দেবী দুর্গাকে কেন্দ্র করে এক সময় কলকাতায় গড়ে উঠেছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের চোরাস্রোত৷ স্বয়ং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু সিমলা ব্যায়াম সমিতির পুজোয় ছিলেন নিজের দেশচেতনাকে জাগ্রত রেখেই। তাই আজকের আবহে দেবীও প্রতিবাদী। সেকালের বীর পূজোর মতোই আজকের প্রেক্ষাপটেও দেবী দুর্গা সমান প্রাসঙ্গিক। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই এই আবহে প্রতিবাদের স্রোতে নিজেকে ভাসিয়েছেন প্রতিদিন। মহাষ্টমীর সন্ধ্যাতেও কলকাতার রাস্তায় আওয়াজ উঠেছে বিচারের। আবার উৎসবের কার্নিভাল এর সাথে সাথে অন্যপাশে আছড়ে পড়েছে দ্রোহের কার্নিভাল। এই পুজো যেন এক অন্য পুজো। এই পুজো যেন প্রতিবাদের পুজো।

সেই বার্তাটুকুই একত্র করে আমরা এই সংখ্যায় তুলে আনলাম আপনাদের সামনে। আমাদের অভিমুখ খুব স্পষ্ট। ব্যক্তিগতভাবে আমাদের কারও সাথে বিরোধিতা নেই। শুধু ন্যায় বিচারের দাবিতে আমরা সোচ্চার হয়েছি বিগত তিনটি সংখ্যায়।

আপাতত আর কিছু বলবার নেই। অক্টোবর সংখ্যায় যাঁরা কলম ধরলেন তাদের সকলকে আমাদের তরফ থেকে প্রতিবাদী শুভেচ্ছা। বাকি পথটা চলুন একসাথে হাঁটি।

কবিতার আলো পড়ুন এবং অন্যকে পড়ান।


কৌশিক চক্রবর্ত্তী
সম্পাদক
কবিতার আলো



কবিতাভিত্তিক
---------------------



নতুন ফাগুন

তৈমুর খান

এবার নতুন ফাগুন এলো আমাদের ঘরে
 যে কোকিল ডাকেনি এতদিন
 সেও ডাকবে—ডেকে ডেকে করবে ঘোষণা

 আমিও কদম গাছে উঠে শিস দেবো
 ঘাটে ওর কলসি ভেসে যাবে
 অথবা দুলবে কলসির জল সরু মাজা পেয়ে

 এপাশে ওপাশে বাঁশবনে ধূপছায়া পথে
 রাঙা পা হেঁটে যাবে খালি পায়ে 
শুকনো পাতার আওয়াজে বাজবে বাঁশি

 আমার লাজুক কামনাগুলি দুলবে ডালে ডালে
 এবার হাওয়া অন্যরকম বয়ে যাবে
 কেউ আর চেঁচাবে না প্রাচীন কলরবে

 শিহরনগুলি ছড়িয়ে দেবো সব ফুটন্ত ফুলে
 বাক্য ও শব্দের ভ্রমরে গুঞ্জন করবে শুধু
 কোলন আর সেমিকোলনে দাঁড়াবো পথ ঘিরে!

------------------ 

মানুষ বাঁচে আপন ঘরে

ড. সুব্রত চৌধুরী

একা তো বেশ চুপই আছি 
এরম থেকেও ঝরছে দেখি অহংকার  
অট্টালিকায় হাসছে সুখের দাঁত - 
কামড় দিচ্ছে সরস দেহে, নোলায় ঝরছে ভক্তিরস 
একলা হয়ে চুপ করে সব লুটছি দেখে 
দেখি, মাথার ঘিলু শহরমুখী - উড়ছে হোথা পুরস্কার 
থাকছে ঘরে আটপৌরে মাপের ক্ষিদে 
গুনছে কড়ি ভিটেয় বসে পূর্বপুরুষ 
শ্যাওলা ধরা সিংহদুয়ার - শিকেয় দুলছে অঙ্গীকার  

দেখছি সমাজ ঘাড় উঁচিয়ে চোখ নামিয়ে চুপটি করে 
রাস্তাজুড়ে দাঁত খিচুনি সেই একই আছে 
সেই উড়ছে ধ্বজা গাছের শাখায়, নাকের ডগায় 
কানের কাছে তীব্র আরও বস্তা-ভরা অঙ্গীকার 
সেই লাইন দেওয়া শীর্ণপরা শরীরগুলো বদলে গেছে 
মনের ভেতর গুছিয়ে রাখা মানুষ হয়ে 

তবু অবাক হচ্ছি দেখে - 
যখন ছুটছে দেখি নিঃস্ব মানুষ জিতবে বলে 
কোথাও ভিজছে স্মৃতির বৃষ্টি হয়ে বজ্র হাতে 
কোথাও নদীর মোহে গড়ছে প্লাবন উপত্যকায় 
আবার শূন্য হাতেই ভরছে কলস প্রাণের স্রোতে 
চোখ মুছে অতীত ভুলে ভোরের সাথে গন্ধ মেখে 
হাঁটছে আবার উমার আঁচল ধরে   
সহসা বালুর চরে জাগছে দেখি খেলার সাথী 
তাই দেখে নতুন জামায় মৃত্যু লুকায় লজ্জা পেয়ে 

গুম হয়ে বুঝতে পারি 
বুঝতে পারি, মানুষ বাঁচে নতুন করে 
চুপটি করে ভিতর হতে আপন ঘরে ...

------------------ 

অন্য শরৎ

শর্মিষ্ঠা মিত্র পাল চৌধুরী

এ শরতে কোন শিউলি ফোটেনি...
পদ্ম তুলতে গিয়ে দেখি;
মৃত জলাশয় শ্যাওলায় ভরে গেছে!
দীর্ঘদিনের শীত ঘুম ভেঙে;
হঠাৎ করে শহরটা আবিষ্কার করেছে - কলকব্জাগুলো কে বা কারা যেন খুলে নিয়ে চলে গেছে!
সারারাত ধরে চলছে;
মশাল জ্বেলে মেরামতির কাজ!
ঘুণ পোকাদের মারার কাজ!!
কারিগরদের অনেক দায় ...
জ্যান্ত উমাদের পিঠে ডানা বসাতে হবে যে!
শরীর পুড়ে যায় ,কিন্তু শরতের রোদ পোড়ানো যায় না -
তাই আজ মায়ের বোধন হবে রক্তকরবী দিয়ে।
মৃত্যুর শাস্ত্রীয় সংগীত আগমনী হয়ে ভাসছে বাতাসে...

------------------ 

উৎ-শব 

দয়াময় পোদ্দার

তিনজন লোক অন্ধকারে বাস করে
তিনজন লোক, কারো সঙ্গে কারো দেখা হয় কালে-ভদ্রে।
তিনজন লোক একটি কথা-ই ভাবে 
তিনজন লোক একটি চিন্তা-সুতোয় জুড়ে যায়।

একটি মেয়ে হাজার বিরুদ্ধ-স্রোত পেরিয়ে ঘরে ফেরে 
একটি মেয়ে জামাটি খুলে একটি মেয়েকে হ্যাঙারে ঝুলিয়ে রাখে।
একটি মেয়ে কলে মুখ ধুয়ে ধোয়া জলে একটি মেয়েকে রেখে আসে।
একটি মেয়ে শুকনো গলায় ভাত আটকে গেলে একটি মেয়ে জল খায়।

তিনজন লোক একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে রক্ত ধোয় তিনশজনে 
তিনজন লোক একটি হত্যা করে প্রমান মোছে তিনশজনে

একটি মেয়ে বাঁচতে চেয়ে লড়াই করে হাজার মেয়ে 
একটি মেয়ে হাত-পা ছোড়ে আত্মচিৎকারে হাজার মেয়ে 

তিনজন লোক পুড়িয়ে ফেলে একটি মেয়ের হাজার শব!

------------------ 

ভাত এবং মা

আকরাম রাজা সেখ

ঠেলাঠেলি করে ভাত পেটে যায়।
কেউ যেন ভাতের কবর দিয়েছে!
ভাত !ভাত!ভাত!
প্রতিটা বাড়ির মায়েরা ভাত দিতে চাই না।
 মায়ের ছেলেরা শুধু ভাত খায়...
ভাত‌ও গঠন করে না সমাজ।
ভাতে প্রমাণ মায়ের শিক্ষা কেমন হতে পারে...

------------------ 

অন্য পুজোর কথা

উৎপলেন্দু দাস

ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষ করতে কেউ কেউ হেঁটে গেছে অনেক দূর  
দেখেছে অগোচরে সাজানো চরাচরে কি অপরূপ মায়া
জড় চেতন জুড়ে অনন্ত শক্তির নিরবচ্ছিন্ন খেলা
আলোর আকাশে ফিরে ফিরে আসে মুগ্ধ রাতের ছায়া।

অথচ দেবালয়ে ধুপধুনোর দূষণ দীপশিখার কালি
কত বিধিনিষেধের বেড়াজাল জমাট বাঁধে অবহেলায়
দেবতার মূর্তি সতত নিশ্চল নিশ্চুপ
চারধারে অনীশ্বরদের সগর্জন ঢেউ বাতাসে ভেসে যায়।

তবুও মানুষ খোঁজে না ঈশ্বর অকপট প্রকৃতির মুক্তাঙ্গনে
ভুলে থাকে কোথায় যেন তাকিয়ে
অন্তরের শূন্যতা পূরণে মাথা ঠোকে সিঁড়িতে চৌকাঠে
মেলে যদি আশীর্বাদ দেবতার সুরম্য আলয়ে।

প্রকৃতির উদার পরশ মহাকাশের অনন্ত ব্যাপ্তি
না দেখে মানুষরা হেঁটে যায় নিরন্তর জীবন মরণে
অন্তরস্থিত ঈশ্বরকে ফেলে তমসার ঘন আঁধারে
বার বার ছুটে যায় মাটি পাথরের দেবতার চরণে।

অজ্ঞান অবিদ্যা অহংকার মস্তিস্কে বিষ ছড়ায়
হৃদয়ের অরণ্যে ঝরে পড়ে বাদামি পাতা রাশি রাশি
ঈশ্বরের বাণীর ফেরিওয়ালারা গলিতে গলিতে করে ফিরি
মানুষের অন্তরে হায় বাজে না চৈতন্যের অচিন বাঁশি।

------------------ 

আলো

নিশীথ ষড়ংগী

দুঃখের আলো জ্বেলে তোমাকে অন্ধকারে দেখি
অতিদূর গ্রামপথ, নিঃশব্দের বাড়িঘর যেন চিরচেনা
তবুও অচেনা লাগে, দুপাশে ছড়িয়ে আছে স্পর্শের 
ইশারা...

যে দুটি আশ্চর্য তারা 
কতোকাল স্তব্ধ হয়ে 
দাঁড়িয়েছে, মুঠোভর্তি আকাশসীমানা

দুদণ্ড নির্জন তার হাত থেকে চেয়ে নিয়ে অপলক থাকি...

আলো তো ভেতরে জ্বলে,আলো তো গভীর গুহামুখ
তুমি তার প্রচ্ছদের সামান্য অসুখ

তোমার শুশ্রূষা আজ বড়ো বেশি আত্মহত্যাকামী 

দুঃখের নিষ্কম্প শিখা জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে তুমি লিখে রাখো প্রতিটি আগামী...

------------------ 

অন্যপুজো

জীবন সরখেল

শিশির স্নেহে তৃপ্ত সবুজ ধানক্ষেত সকাল সূর্যের সাথে রোজ মেলায় চোখ...
সময়ের অভিজ্ঞান পরিমিতিবোধে তৃপ্ত হয় প্রতিবেশ;
গায়ের জোরে ইতিহাস বদলাতে চাওয়া কিছু মানুষের এখনও খসে পড়েনি লেজ!
অভিযোজন আর প্রতিবর্ত ক্রিয়া যেন সমান্তরাল সুরেই গেয়ে যায় বেসুরো গান.....
সভ্যতার বিবমিষায় নিয়ত বদলে যায় নিরন্ন সুখের সংজ্ঞা 
তবু কবিতারা শিউলি সোহাগে কুড়িয়ে নিতে চায় কেবল স্নেহ প্রেম হীরে...
আত্মজাগরণের ধারাবাহিক তাজা সমীরণেই সমৃদ্ধ হয় জগতের আধ্যাত্মিক-আধিভৌতিক-দৈবিক সুখ।
আজও মাঠে ঘাটে রাস্তায় কলকারখানায় পুজো প্যান্ডেলে কাজ করা;ঢাঁক ঢোল ব্যান্ড বাজানো মানুষগুলোর শরীর থেকে ঝরে পড়ে খাঁটি পুজোর মাহাত্ম্য...
ছবিতে দেখাতে চাওয়া হাঁসি মুখের সব ছবিই কিন্তু প্রকৃত পুজোর নাও হতে পারে...



সম্মিলন
------------------



অন্য পুজো,  অন্য কবিতা

অর্ণব সামন্ত


(১)

অন্য পুজো



পথের মধ্যে পথ নেমেছে কি ?

শিশিরে কেন অশ্রু গন্ধ , শিউলিতে কেন কামজ আঁশটে গন্ধ ?

পদ্মপাপড়িগুলি খেয়ে গ্যাছে রাঘববোয়ালেরা 

শস্ত্রহীনা দীনাহীনা শারদীয়া আসছে 
অধিকার , প্রতিবাদ লুঠ হয়ে গ্যাছে বিষাক্ত বাতাসে 

ধুপধূনোয় বারুদের গন্ধ , স্তব্ধতায় লাগাতার কান্না 
ঢাকের বাদ্যিতে বেজে উঠছে হাড়হিমকরা আর্তনাদ 

অন্য পুজোয় অন্য কবিতা নিজেই রচিত হচ্ছে !

(২)

স্লোগান নিরন্তর



ল্যাম্পপোস্টের আলোকে টুকরো টুকরো করে 
পথের মধ্যে পথ রচনা 
প্রতিবাদ , প্রতিরোধ মাউথ অর্গানের মতো বাজে 

চাঁদের আলোতে স্নিগ্ধতা নেই 
যেন অন্ধকার এসে নাগরিক মুখে কলঙ্ক এঁকেছে 

রাতদখল রাতদখল অধিকারের 
দিনবদলের সূচিপত্র তবে ?

আগুনে পুড়ে যাচ্ছে সমস্ত 
শান্তিজীবন ছন্দজীবন আলোজীবন অধিকারজীবন 

ঝলসে যাচ্ছে পান্ডুলিপি রুটির বদলে 
ঝলসে যাচ্ছে রুটি পান্ডুলিপির বদলে 

আজ পথের মধ্যে পথ রচনার জমায়েতকালীন রাত্রি 
আর নিরন্তর স্লোগান প্রতিবাদের , অধিকারের 
চড়াই উতরাই আগুনে পা দিয়ে 
গন্তব্যে এগোচ্ছে জনারণ্য ...

(৩)

প্রতিবাদ মুখর  দিনরাত্রি



কাঁদতে কাঁদতে আমাদের চোখের সমস্ত জল শুকিয়েছে 
এখন তোমার জন্য শুধু রক্ত পড়ছে রক্ত
আর চতুর্দিকে জ্বলে উঠছে 
বিদ্রোহ , বিপ্লব , প্রতিবাদ , প্রতিরোধের আগুন 
কোলকাতা আজ কল্লোলিনী হয়েছে 
তবুও তিলোত্তমা হারিয়েছে অন্ধকারে , গভীর অন্ধকারে 
তাই প্রাণহীন শূন্যতার কালো মেঘ ঘিরেছে চতুর্দিক 
উৎসবে ফেরে না মন , ফেরে উৎশবে 
জনগণবিবেক জাগে রাতভাঙা ভোরে 
শিউলির মতো ফুটে ওঠে তার আলোর ক্রোধ 
বদলে বদলে দিতে চায় সময়ের রঙ 
যতদিন না বিপ্লবভাঙা গানে আমাদের সমস্ত ভেসে যায় 
রয়েল বেঙ্গল টাইগার , বিষধর সাপের চেয়েও ভয়ঙ্কর 
ভয়ভাঙা মানুষের দল 
সাহস সংক্রমিত হতে হতে রাতদখল পথদখল 
বিপ্লব প্লাবনে ভেসে যায় সমস্ত অন্ধকার জটিলতা কুটিলতা  
প্রতিবাদ মুখর ক্রোধ আলোর অক্ষরে লেখে অধিকার , সুবিচার 
প্রতিবাদে আবাহন করে স্বরবর্ণ  
যা স্থাপন করবে রাতদখলের বিশ্বাস , দিনবদলের আশ্বাস



গল্পাণু
------------------



উমা

তমেকা ঘোষ


এতদিন তো শুধু পচা গোলাপের গন্ধই ধেয়ে আসতো ছোট্ট জানলাটা দিয়ে । আজ হঠাৎ কি হল? কৌতূহলী উমা একটানে জানলাটা পুরোটা খুলে দিতেই  একরাশ শিউলিগন্ধ যেন গতজন্ম থেকে ভেসে এলো । জানালার পাশে অযত্নে বেড়ে ওঠা গাছটায় প্রথম ফুল এসেছে । কি সুন্দর, পবিত্র লাগছে ওকে ! অনেকদিন পর আকাশ দেখার চেষ্টা করল উমা । ওইতো ওই একচিলতে নীল আকাশটাতে খেলে বেড়াচ্ছে একফালি সাদা মেঘ । এমন দিনেই তো ঝিলের ধারে কাশবনে উঠতো ঢেউ , মোড়ল বাড়িতে বেজে উঠত ঢাকের বাদ্যি, নদীর ঘাটে নৌকো থেকে নামত শহরের যাত্রার দল । উমা, রমা দুই বোন উঠোনে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকত কখন বাবা ফিরবে, হাতে কাগজের মোড়ক, নতুন জামা.... আহঃ সেই নতুন ফ্রকের গন্ধটা  উমা এখনো অনুভব করে প্রাণের মাঝে, শিউলি গন্ধের সাথে এখন যেন তা মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে ...

--"বলি ও উমা, তোর আক্কেলটা কি শুনি?  কাস্টমার আর কতক্ষন বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে?"

মানুমাসির কর্কশ গলা উজ্জ্বল স্মৃতির আকাশ থেকে এক ধাক্কায় উমাকে নামিয়ে আনল তার অন্ধকার, ছোট্ট স্যাঁতস্যাতে ঘরটায় । চড়া পারফিউমের গন্ধে শিউলিকে কবর দিয়ে রোজগারের আশায় দরজা খুলে দিলো উমা।



ছোট গল্প
------------------

 
 

ঝরা বকুল

মেনকা সামন্ত


তখন সবে ভোরের আলো ফুটেছে।। আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে উঠেছে আকাশবাণী থেকে প্রচারিত বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের জলদ গম্ভীর স্বরের সেই চিরায়ত সুরে---"আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জরি---"ঠিক সেই সময় খবরটা এলো।দেবী-পক্ষের শুরুতেই অকাল বিসর্জন হয়ে গেছে পলাশ তলী গায়ের মিষ্টি মেয়েটার।বকুলের সুবাসে মিশে গেছে নোনা রক্তের ঘ্রান।একদল অসুরের  উদগ্র কামনার পাশবিক অত্যাচারে দলিত-মথিত হয়ে ঝরে গেছে বকুলের ছোট্ট নরম পাপড়ি গুলো।আর কোমল দেহ-বল্লরি বিষাক্ত কীটের দংশনে ক্ষতবিক্ষত।তার পরনের শাড়ি-ব্লাউজ শত ছিন্ন।মিষ্টি সুন্দর মুখটা নখের আঁচড়ে,দাঁতের কামড়ে এত বীভৎস আকার ধারণ করেছিল যে বকুল কে চেনাই যাচ্ছিল না।দেহের বিভিন্ন অংশে, তার গোপনাঙ্গে ছোপ ছোপ কালো কালো রক্তের দাগ।ওর দিকে তাকাতে পারছিল না।গা শিউরে উঠছিল সবার।এমন সময় পাগলিনীর মত ছুটতে ছুটতে সেখানে এলো বকুলের মা দুগ্গা।গলায় ফাঁস লাগিয়ে মেরে ফেলার দাগটা তখনও টাটকা।দুগ্গার আঁচল মাটিতে লুটাচ্ছে,পিঠের উপরে একরাশ কালো চুল যেন সাপিনীর মত দুলছে,আর হাতে একটা টাঙ্গি।হিসহিসে গলায় সে বলল "মোর মেয়াডার যে এই সব্বনাশ  কইরেছে- ,তারে আমি ছাড়বক লাই।টাঙ্গি দিয়ে কুপায়ে তার লাশ টো মু নদীর জলে ভাসাই দিবক।" লোকাল থানার পুলিশ জায়গাটা ঘিরে রেখেছিল।সদর থেকে বড় বাবু  আসার সঙ্গে সঙ্গে চারপাশ থেকে ছুটে এল সমুদ্রের গর্জন  "তু ইযার বিচার কর ক্যানে বড় বাবু।ওই শালো সুপার  আর তার সাগরেদ গুলান এই কাইজ কইরেছে।"বড়বাবু সবাইকে চুপ করতে বললেন।তখন মঙ্গলু সরদার তার কাছে এগিয়ে এসে বলল,,"মোদের বিটিটা রাইতে হাসপাতালে কাইজ করতে যেতে ডরাই তো ।ওই চোর গুলানের সক্কল খপরও বিটিটা জানতে পেরেছিল।তার লেগে  উরা উয়াকে সরাইং দিলেক।"সমস্বরে চিৎকার উঠলো "আমরা সবাই এর বিচার চাই"।বড়বাবু বকুলের দেহটা মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন। আর সবাইকে আশ্বাস দিলন তিনি যথাযথ চেষ্টা করবেন অপরাধীদের খুঁজে বের করার।তারপর তাদের চরমশাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা করবেন।পোস্টমর্টেমের পর বকুলের দেহ সবার সামনে পুলিশের ব্যবস্থাপনায় পুড়িয়ে দেয়া হলো।সকলের একটাই দাবী ছিল অপরাধী র শাস্তি চাই ,চরম শাস্তি।কিন্তু, তারপর কেটে গেল প্রায় পাঁচ -ছটা দিন।গ্রামটা কেমন যেন থমথমে হয়ে গেছে, পূজা মন্ডপ যেন শ্মশানপুরী।সমস্ত আলো খুলে দেয়া হয়েছে।নিরাভরণ দুগ্গা মূর্তি তখন ও বসে আছে এক বিষাদ প্রতিমা হয়ে।শেষমেষ বিচার পাওয়ার আশা ত্যাগ করল তারা।ওই মন্ডপের সামনে সবাই হাজির হলো বিভিন্ন রকমের হাতিয়ার নিয়ে।দুগ্গা প্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে সবাই মিলে শপথ নিল—এর বিচারের ভার তারা নিজের হাতেই তুলে নেবে।মশাল জ্বালিয়ে গায়ের মেয়েরা কাটারি-বঁটি -দা-হাসুয়া -টাঙ্গি-যে যা পারলো তাই নিয়ে থানা ঘেরাও করল।তারপর তাদের অভিযান হল হাসপাতালে।সব রকমের চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত হসপিটাল — সুপার আর ওখানকার থ্রেট কালচারের নেতা অবনী ঘোষাল কে অ্যারেস্ট করল সদর থানার ওসি।সাময়িকভাবে বন্ধ হল গাঁয়ে আন্দোলন।কিন্তু মঙ্গলু সরদার ঘোষণা করলো —যদি তারা তাদের বিটি বকুলের অত্যাচারের সুবিচার না পায়, দোষীরা যদি উপরওয়ালাদের আশীর্বাদের হাত মাথায় নিয়ে জেল থেকে বেরিয়ে আসে,তবে তারা বিচারের ভার নিজের হাতে তুলে নেবে।হাসপাতাল আর থানা জ্বালিয়ে দেবে, আর যাদেরকে তারা সন্দেহ করেছিল,তাদেরকে কেটে কুচিয়ে ক- দিনের আগে আসা বানের জলে ভাসিয়ে দেবে।এর শেষ তারা দেখেই ছাড়বে।এত সহজে তারা অন্যায়কে মেনে নেবে না।পলাশতলীতে পুজো হল অনাড়ম্বরে, সাদামাটা ভাবে।সবাই এর সমবেত প্রার্থনা মায়ের কাছে— মা যেন তাদের সুবিচার পাইয়ে দেন। না হলে এই গাঁয়ের সমস্ত মেয়েরা একদিন জীবন্ত দুগ্গা হয়ে হাতে তুলে নেবে শানিত অস্ত্র।



আনুপূর্বিক
------------------



পুরোনো দিনের পুজো

অঞ্জনা মজুমদার


আমাদের  দেশের বাড়িতে প্রায় ২৩০ বছরের পুরোনো পুজো হয়। মনে পড়ে সেই ছোটবেলায় পুজোর সময় পঞ্চমীর দিন ব্যাগ গুছিয়ে বাবা মা ভাই বোনের সাথে দেশের বাড়ি আড়বালিয়া যাওয়া। আমরা  79C বাসে করে মাটিয়াতে নামতাম। তারপর রিকশা, আগে গরুগাড়ি চড়েও আমাদের বাড়ির সামনে নামতাম। 

প্রথমেই ঠাকুরদালানের দুর্গামাকে প্রণাম করে তারপর ঠাকুমা, জ্যেঠিমা , জ্যেঠুদের প্রণাম। একটা দুটো নারকেল নাড়ু খেয়েই ভাইবোনেরা মিলে গ্রাম পরিক্রমা।

ষষ্ঠীতে মায়ের বোধন হত বেলগাছের তলায়। ষষ্ঠী থেকেই নতুন জামা। খুব নিয়ম মেনে পুজো হত। 
সপ্তমীর সকালে ঢাক আর শঙ্খধ্বনির সাথে গ্রামের কলাবউ এর স্নান। বাবা দাদুর উদাত্ত কন্ঠে মন্ত্রচ্চারণ আর সবাই মিলে অঞ্জলি দেওয়ার স্মৃতি আমার মনে অমলিন। এখন কত কিছু ভুলে যাই, এসব স্মৃতি টাটকা মনে হয়। 
প্রতিদিন পুজোর পরে চন্ডীপাঠের সুর এখনো কানে ভেসে আসে। 
সন্ধ্যার আরতি খুবই দর্শনীয় হত। আমার দাদু আরতির সময় ঢাকের তালে তালে বিশাল পঞ্চপ্রদীপ,  শাখ, চামর ইত্যাদি দুলিয়ে এক অপূর্ব সম্মোহনী দৃশ্য তৈরি হত। গ্রামের মানুষ আরতি দেখতে ভীভ করতেন। 
অষ্টমীর অঞ্জলি আর সন্ধিপুজোও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হত। 
আগে পাঁঠাবলি  হত। কোনও একবার আমাদের এক পিসিমা  বলির পাঁঠাটিকে জড়িয়ে  প্রবল কান্নাকাটি জুড়ে দেন। 
ঠাকুমাও কান্না জুড়ে দেন।  অবশেষে ঠাকুরদাদা প্রাণী বলি বন্ধ করে দেন। সেই থেকে চালকুমড়া,  আখ এসব বলি হয়। আমি কখনো পাঁঠাবলি দেখিনি। 

সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপারটা ছিল ঠাকুর বিসর্জন।
গ্রামের পুকুরে, যেটাকে সরোবর বলা চলে গ্রামের সাত়টি বাড়ির ঠাকুর সবকটাই পুকুরে ভেসে ঘুরতো। ঠাকুর থাকতেন দুটো নৌকার মাঝে বাঁশের ওপরে। সঙ্গে ঢাকি, বাড়ির ছেলেরা নৌকায়। গোধূলিতে বিসর্জনের সময় নৌকা দুটো দুপাশে সরে যেত আর ঠাকুর সোজা হয়েই জলে। গোধূলির আলোয় মায়ের মুখখানি ক্রন্দনরতা মনে হত।
ঠাকুরের সঙ্গে কয়েকজন ভালো সাঁতার জানা ছেলেরাও জলে নামত। বিসর্জন শেষে সাঁতরে পারে আসত। এমন এক দশমীতে জলে নামা ছেলের দলে আমার দুই ছোট ভাইকে দেখে আমি কাঁদতে শুরু করে ছিলাম। কিন্তু আমাকে অবাক করে তারা পাড়ে সাঁতরে এলো। আমি জানতামই না ওরা কবে এত ভালো সাঁতার শিখল। কান্না ভুলে আমি তো অবাক।
বিসর্জন শেষে ঠাকুরদালানে প্রদীপ জ্বলতো সারারাত। আর কলাপাতার ওপর আলতা দিয়ে একশ আট বার দুর্গা নাম লিখতে বসতাম দল বেঁধে। সেই কলাপাতা ঘটের কাছে রেখে সবাইকে প্রণাম, কোলাকুলি। ভারি ভালো লাগতো। সেই দৃশ্য এখন দেখা যায় কিনা জানিনা। 
এরপর নাড়ু, মিষ্টি, ঘুগনি খেয়ে   বাড়ি বিজয়া করা।  সব খাওয়া যেত না। কিন্তু বাড়ি নিয়ে আসতে হতো। পরে খাবার আশ্বাস দিয়ে।  

একাদশীতে মনখারাপ এর কলকাতা ফেরা। এটাই আমার ছেলেবেলার পুজোর স্মৃতি। 
আমাদের ছেলেবেলার পুজোর স্মৃতি। অতি সাধারণ কিন্তু আমার মনের মাঝে রয়ে গেছে। 
পুজো এখনো হয়। কিন্তু নেই সেই পুরোনো মানুষেরা আর নেই। আমারও কত বছর আর সেই দেশের বাড়ি যাওয়া ়হয় না। পুজোতে কলকাতার পুজো দেখাও হয় না। পুজোর ছুটিতে বেড়াতে যাওয়া নিয়ম হয়েছে। তবে আমি পুরোনো সেই পুজোর দিনগুলো হারিয়ে ফেলার জন্য অন্তরে বেদনা অনুভব করি।


------------------ 

ডবল উৎসব

শর্মিষ্ঠা ঘোষ


বারো মাসে তেরো পার্বণের বাঙালির কাছে উৎসব ব্যাপারটাই মজ্জাগত। সে যতই উৎসবে ফিরবে কি ফিরবে না তা নিয়ে বিতর্ক থাক। আসলে সেটাও উৎসবেরই রকমফের মাত্র। বাঙালির উৎসবে না ফেরাতেও  পোশাকের একটা বিশাল ভূমিকা থাকে। সে পোশাক নানা স্লোগানে ছুপিয়ে নেয়। তৈরি হয় মাথার ফেট্টি রিস্ট ব্যান্ড ব‍্যাজ টুপি ছাতা ব্যাগ নানা কিছু। বাজে ঢাক কাঁসর চলে ধুনুচি নৃত্য। দিন দখল রাত দখলে চলে নৃত্য গীত আবৃত্তি মুকাভিনয় পথনাটিকা ছবি আঁকা মূর্তি গড়া  স্ট্রিট আর্ট। শিল্প সংস্কৃতি বিদ্রোহ বাঙালির মিলেমিশে একাকার হয়েছে যুগে যুগেই। এই সেন্স অফ আর্ট বাঙালিকে বরাবরই করেছে স্বতন্ত্র। এই মুহূর্তে রাজ‍্য জুড়ে যা দেখছি শুনছি সেটাও ব্যতিক্রম নয়। শিশু কিশোর আবাল বৃদ্ধ বনিতা  যেভাবে অন্য ধরনের উৎসবে মেতে আছেন সেটাও কিন্তু প্যারালালি অক্সিজেন যোগাচ্ছে ব্যবসায়ীদেরও পরোক্ষ ভাবে । তৈরি হচ্ছে তৃতীয় পরিসরে অনন্ত সম্ভাবনা। অরাজনৈতিক বাঙালির নবজাগরণ। যখন সে খুঁজে পাচ্ছে নিজের কন্ঠ নিজের স্বর।সমগ্রের মধ্যে হারিয়ে ফেলছে নিজেকে। আমিত্বের ইগো বিসর্জন দিয়ে হয়ে উঠছে সর্বজনীন। সে এক প্রাণের মহোৎসব। বাঙালির উৎসব মানেই পূজো সংখ্যার গান। পুজো সাহিত্য। সেই শর্তও পূরণ হয়েছে। লেখা হয়েছে নতুন নতুন গান। এর মধ্যে রিমেক ও আছে। পুরনো সুরে নতুন লিরিক আছে, প্যারোডি আছে,কবিতা আছে ,নতুন লেখা নাটক আছে সময়ের পটভূমিকায়। "বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো /সেইখানে যোগ তোমার সাথে আমারও।" এবং এই ভাবেই সার্থক হয়েছে সেই সাহিত্য সংগীত। সময়কে নিয়ে মানুষকে নিয়ে চলতে শিখেছে যে সাহিত্য তাই তো সর্বজনীন তকমা লাভ করেছে সময়ের ক্যানভাসে। ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। যুগ নির্দেশক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আর যদি অর্থনৈতিক দিক থেকে চিন্তা করি তাহলে তুলি রং ব্রাশ ফিতে মোম মশাল ফেস্টুন ব্যানার ঢাকি মাইক ম্যান টোটো বিভিন্ন হল  সেমিনার বা কনভেনশনে যা ব্যবহার হচ্ছে ডেকোরেটর এই সব কিছুর হুহু বাণিজ্য অবহেলা করবেন না। এটার ভ্যালু কিন্তু মোটেই কম নয়।

সদ্য সদ্য যেভাবে মহালয়া পালিত হলো গোটা পশ্চিমবঙ্গে সেটা অভূতপূর্ব। আমাদের চিরকালীন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সেই চন্ডী পাঠ শুনে জেগে ওঠা তার সাথে অন্য মাত্রা জুড়ে দিল মানুষের নতুন  ধরনের উচ্ছ্বাস। মানুষ মহালয়াকে বাতিল করেনি বরং তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। পিতৃপক্ষের তর্পনের সাথে যোগ হয়েছে বিশ্ব তর্পণ। মানুষ একক থেকে সামগ্রিক হয়েছে। ঘর থেকে বিশ্বে রেখেছে পা। মহালয়ার ভোরে মানুষ এমনিতেও বেড়াতে বেরোয় চিরকাল। নদী তীরে কাশ বনে পাহাড়ি পথে জঙ্গলে দলে দলে বেরিয়ে পড়ে। সেই বেরোনোতে  থাকতো শুধু তার পরিবার। এবারের মহালয়ায় মানুষ ভোরবেলায় নামলো পথে জাগল রাত। একসাথে শুনলো চন্ডী পাঠ। তারপর পথ হাঁটলো সকালে। এবং দিনের পর দিন একসাথে হাঁটতে হাঁটতে অচেনা মুখগুলো আপন হয়ে উঠেছে। মানুষ নতুন বন্ধু পেয়েছে। একের জন্য আরেকজন বাড়িয়ে দিয়েছে জল। পিছিয়ে পড়লে থেমেছে তার জন্য। স্বার্থপর বদনাম ঘুচিয়ে বাঙ্গালী হঠাৎ করেই যেন খুব মানবিক হয়ে গেছে।আর আমাদের বাচ্চাদের এই যে জেনারেশন যাকে আমরা মোবাইল নিয়ে মগ্ন ভেবেছি আত্ম মগ্ন ভেবেছি এতদিন তারা হঠাৎ করেই দেখলাম  খুব বেশি ম্যাচিউরড। এটাও বাঙালির নতুন পাওনা এবারের উৎসবে। সুতরাং বাঙালির এটা ডবল উৎসব।



ব্যক্তিগত গদ্য
------------------



দুগ্গা এলো বাঙালি জীবনে

পার্থ সারথি বণিক


দুগ্গা’ শুনেই ছোটবেলার বন্ধু অনুজের পিসির কথা মনে পড়ছে।  নিত্য অভাবের সংসারে ওর পিসির যে গেদিন চাকরির চিঠি এল, অনুজ বলেছিল: 
কাল থেকে আবার স্কুলে যাব রে; পিসি বলেছে, সব মাইনে দিয়ে দেবে। 

বন্ধুকে আবার বেঞ্চে পাশে পাব,  আমার কী খুশি!  পিসি প্রতিদিন অফিস করে, বাজার করে বাড়ি ফেরে, আমি বসে বসে দেখি। মা কে গিয়ে বলি, মা তুমি কেন অফিস, বাজার করো না? মা বলেছিলেন, দূর পাগল, সবাই কী দুগ্গা হয় নাকি!  

কথাটার মানে কী? চোখ বড়বড় করে ভেবেছিলাম কিছুক্ষণ। সেই ছোট বয়সে কিনারা করতে পারি নি।

জীবনের পথ চলতে চলতে বুঝেছি, সব মেয়েই দুর্গা হয়। জীবনের কোন না কোন ক্ষেত্রে।  আর হয় বলেই সংসারে আলো আসে।  

কিন্তু! বন্ধু, তোমরা কী বিশ্বাস করো, আলো আসবেই? 

আর জি করে, অথবা বাংলাদেশে, গাজা ভূখণ্ডে? জানি, আলো আসবেই, আমরা বিশ্বাস করতে ভালবাসি। কাহিনীর শেষে কবির কলম থেকে বেরিয়ে আসে ‘পোয়েটিক জাস্টিস’। কিন্তু, জীবনে? বিচারের বানী কাঁদে!  গ্রাহাম স্টেইনস, তাঁর স্ত্রী  সন্তান - সবার ঝলসানো দেহ উড়িষ্যার জঙ্গলে আজও পোড়ে, আজও গৌরি লঙ্কেশ বাড়ির দরজার সামনে খুন হয়ে যান কর্নাটকে, হাসিনা- উওর বাংলাদেশে মানুষের দেহ ঝোলে লাইট পোস্টে, জনতার চোখের সামনে। বঞ্চনাবিদ্ধ জীবন  দুর্গার মধ্যেই ‘পোয়েটিক জাস্টিস’ কে খোঁজে।  দুগ্গা এলো, তাই আমাদের ছাপোষা ঘরে কবিতা এল, ‘পোয়েটিক জাস্টিস’ এল।


এ এক অপূর্ব সময়! শরতের এই মরসুম, আকাশে মেঘের গর্জন, বৃষ্টিতে ভাসছে বঙ্গদেশ! 
শহরের বিউটি পার্লারে কিন্তু বসন্ত বিরাজ করেছে , আর আম পতিদেবতার পকেটে শীতের হু হু হাওয়া ! মার্কেটে, মলে শপিং-সুন্দরীদের গিসগিসে লাবন্যপ্রভা; বুড়ো বাবাদের কোমরে হাঁসফাঁস জিনস! কুমোর পাড়ার হৈ হৈ, আর রেস্টুরেন্টে মোচ্ছব।  প্রবাসী মেয়ে ফোনে বলছে, মা আমি আসছি। 

দুর্গা এল সুন্দরবনের নোনা জমি টপকে, বাঁকুড়ার বন্ধ্যা মাটি পেরিয়ে কাশের বনে। আশ্বিনের চাষের মাঠ ছেড়ে যে ছেলেটা কাঁধে ইয়া ঢাক নিয়ে থিম- চর্চিত প্যাণ্ডেলে বসেছে, হাতে কাস্তের বদলে বাজনদারের কাঠি, তারও তো রোজগার চাই। ঘরে দানা পাণি চাই, পাট ভাঙ্গা পোশাক চাই। নইলে উৎসবে মান থাকে না, প্রণয়ে প্রাণ থাকে না!

দুরাত্মা মেঘের পরাজয়ের খবর দিলেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ, বেতারকণ্ঠে। দুগগা অপুর সাথে কাশ বন পেরিয়ে বিভূতিভূষণ আর সত্যজিতের হাত ধরে আমাদের দোরগোড়ায় হাজির হল! 

-তুমি কোথা থেকে এলে?
-জয়নগর থেকে। মা সারারাত অপেক্ষা করেছে। আমার এই নিথর দেহটা আর তো ফিরে যেতে পারবে না! এই দেখ হাতটা ঠাণ্ডা!
আমার অস্বস্তি হলো।
-হাতটা ধরবে না? কেন, মৃত মানুষকে ছোঁবে না? তুমিও তো মৃত। না হলে  প্রতিবাদ করতে!
-প্রতিবাদ! সে তো করেছি। রাস্তায় হেঁটেছি।
-ব্যাস!
-স্লোগান দিয়েছি।
-ব্যাস! কী ছেড়েছো বলো দেখি। নাগরিক খিদে? তুলতুলে ঘুম? মাসের মাইনে? মাখাবার তেল? দ্রৌপদী যেমন চুল বাঁধে নি বহুকাল। তারপর একদিন দুর্যোধনের রক্তে …

আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল এসব শুনতে। ভিতরের ছাপোষাটা কুঁই কুঁই করছিল। 

দুর্গা বলছে শুনলাম: তোমরা স্ত্রী লিঙ্গ নির্মাণ করো, তারপর ভাঙ্গো। রাজসভায় ভাঙ্গো ধানক্ষেতে ভাঙ্গো বাসে ট্রেনে  দক্ষের  যজ্ঞে কন্ব মুনির আশ্রমে সীতার পাতাল প্রবেশের আগে। আমাকে ভেঙে চুরে তোমার জন্ম হয়। 

আমি নতুন করে ভাবছিলাম, আমার আবার জন্ম হচ্ছিল।  নাড়িতে টান পড়ছিল। গর্ভ থেকে কোলে। 

ছিন্ন নাড়ির টান। বিক্ষুব্ধ তরঙ্গ। প্রতিমার বিসর্জন। তবু সিংহাসনা, সিংহ বাহিনী। বাঙ্গালীর অস্তিত্ব, দশদিক থেকে ,মুখরিত করে রাখল  সে ই  দুর্গা। দুর্গাই বাঙ্গালী জীবনের একমাত্র ‘পোয়েটিক জাস্টিস’। সত্য, শিব, আর সুন্দরের প্রতিমূর্তি দুর্গা, আমাদের ঘরের মেয়ে দুগ্গা!  এস মেয়ে হৃদয়াসনে। শক্তিরূপে এস, বাঙালি জীবনে!



অরাজনৈতিক ভ্রম
------------------------------------



উত্তপ্ত  দিনের পূর্বাকাশ

রুদ্রাণী মিশ্র


সকালে রোদ ঝলমলে আকাশ দেখা গেলেও কোনও কোনও দিন কালো মেঘ মুখভার করে ঢেকে রাখে। এখনকার সময়টায় মনে হয়, ওইরকম কালো মেঘে ঢাকা এক মুখভার করা সকাল। জনজীবনে প্রত্যেকেই যেন নিজের পরিবারের সদস্য বিয়োগের ব্যথা অনুভব করছেন। যারা গতানুগতিক চিন্তা করেন না, তারা বলবেন এটা পিতৃতান্ত্রিক সমাজের একটা দিক। কেউ উল্টোদিক থেকে বলতেই পারে, আগে কী পিতৃতন্ত্র ছিল না? না, নাগাল্যান্ডের মত কয়েকটি রাজ্য ছাড়া পৃথিবীর সর্বত্রই, সবসময় পিতৃতান্ত্রিকতা রাজত্ব করছে। কিন্তু এটাও ঠিক, আগেকার সময়ে নানা কুপ্রথা বা কুসংস্কার থাকলেও এই মতবাদের কু দিকটা এত প্রবলভাবে প্রদর্শিত হয়নি। সেটা বোধহয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া সত্তর দশকের নারীদের ছবি দেখলেই বোঝা যায়। তখন তাঁরা বিদ্যাচর্চা থেকে শুরু করে, পোষাক পরিধানেও অনেক স্বাধীন ছিল। এখনকার মত এতটা সমালোচিত হতে হত না।

ধর্ষণ পিতৃতন্ত্রের কুৎসিত প্রকাশ। কিন্তু তিলোত্তমার ঘটনা কেবলমাত্র পিতৃতন্ত্রের কুৎসিত প্রকাশ হিসেবে দেখলে ভুল হবে। ডাক্তার দিদি আসলে যে প্যান্ডোরাজ বক্স খুলে দিয়ে গেছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে আসলে এই মুহূর্তে গোটা ব্যবস্থাটাই ধর্ষিত। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পঞ্চায়েত প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যাপকতম দুর্নীতি ছেয়ে গেছে। এখানে তাই অরাজনৈতিক কথাটা খুব ছেঁদো হয়ে যায়। আমি নিরপেক্ষ ভাবে বলতে পারি, অধুনা শাষকগোষ্ঠী যেভাবে পুজো আচ্চা, মৌলভী ভাতা পুরোহিত ভাতা দিয়ে শাষনযন্ত্র চালাচ্ছিলেন, তাতে তাদের একদিন না একদিন ডুবতে হত ই, এই ডাক্তারদিদি শহীদ হয়ে সেটা করে দিয়ে গেলেন

এখন এদের সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে যে কেবলমাত্র ডোল এবং অনুদানের রাজনীতি দিয়ে এই ভয়ংকর দুর্নীতিকে আড়াল করা যাচ্ছে না। এমনকী চাকরিতে সফল পরীক্ষার্থীরা জানেইনা ফলের তালিকায় তার নাম থাকবে কী না। এমন এক পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গের মত রাজ্যকে দেখতে হবে, তা কেউ কোনওদিন ভাবেনি।
আবাস যোজনার টাকার প্রাপক জানেনা কত শতাংশ কাট মানি দিলে তবে সে ঘর বানানোর টাকা পাবে। 
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী নিশ্চিত নয়, যে ওষুধ বলে তাকে যেটা দেওয়া হচ্ছে আসলে সেটা সত্যি ওষুধ কী না। রেশনের গ্রাহকেরা জানে না কতজন আসল কার্ড হোল্ডার আর কতজন ভুতুড়ে। 
কয়ল, বালি, পাথর, গরু সবই এখন চৌর্য শিল্পের নাড়াচাড়ার বিষয়। সেদিন দেখলাম একটা মিমে লেখা রয়েছে, এক ছিল মৌর্য সাম্রাজ্য আর এখন চৌর্য সাম্রাজ্য।

আর এই নারী মূখ্যমন্ত্রীর রাজত্বকালে তো পিতৃতান্ত্রিকতার অঙ্কুশ শুধুই বড় ও ধারাল হচ্ছে। তাই তত সমাজে নারীদের নিগ্ৰহের লক্ষ্য বানান হচ্ছে। একটার পর একটা ধর্ষণ ঘটে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, পিতৃতান্ত্রিকতা যেহেতু একটা ধারণা তাই পুরুষ, নারী সবাই এর ধারক ও বাহক হতে পারেন। যে পশ্চিমবঙ্গ একসময় একটা উদাহরণের জায়গা বহন করত, সেই পশ্চিমবঙ্গ এখন ধর্ষণ নগরীতে পরিণত হয়েছে। শাষকদলটা এখন এই গ্লোরিয়াস পশ্চিমবঙ্গকে করাপ্ট আর থ্রেট ও রেপের আখড়া বানিয়ে তুলেছে। যা প্রতিটা বাঙালীর কাছে লজ্জাকর বিষয়।

এখানে মাথায় রাখতে হবে, পিতৃতন্ত্র যেমন একজন নারী দ্বারা বাহিত হতে পারে, তেমনি নারীবাদ ও পুরুষ দ্বারা বাহিত হতে পারে। কেন? রামমোহন, বিদ্যাসাগর, শরৎচন্দ্র… এঁরা সবাই তো নারীবাদী পুরুষ ছিলেন। শরৎচন্দ্রের নারীর মূল্য পড়লে এখনও মনে হয়, লেখক সময়ের থেকে কতটা এগিয়ে ছিলেন। একজন পুরুষ হয়েও তিনি কত গভীরভাবে নারীদের অপমান, লাঞ্ছনা, ব্যথা উপলব্ধি করেছেন। আর সেই কথাগুলো যে আজও জ্বলন্ত বাস্তব, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আজও নারী অবহেলার ও ভোগ্যবস্তু রূপেই পরিগণিত হয়ে আসছে। সে যে জায়গাকে নিরাপদ মনে করে। তায়ো তার কাছে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, যেকোনও মুহূর্তে। তারপরেও তার কাছে কৈফিয়ত তলব করা হয়, সে টানা খেটে ওখানে বিশ্রাম নিতে গেল কেন বা, একা থাকার সাহস করল কেন? এই পরিপ্রেক্ষিতে মনে হয়, নারী এখনও  মানুষ হতে পারল না। মাণ্টোর ওই গল্পটা তো নিশ্চয়ই অনেকে পড়েছেন, যেখানে বারাঙ্গনা মেয়েটি কয়েক রাত না ঘুমিয়ে অমানুষের মত খেটে গেছে। শেষে লেখক দেখতে পান সে ইট দিয়ে থেঁতলে দালালটিকে মেরে পাশে অঘোরে ঘুমিয়ে পড়েছে।

হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, নয় অগাস্টের সেই কুখ্যাত ঘটনার কথাই  বলতে চাইছি। একজন গরীব বাপ মায়ের একমাত্র কন্যাসন্তানটি, কতটা নৃশংশভাবে পঞ্চত্ব লাভ করেছে। যার আগামীতে অনেকটাই পথচলা বাকি ছিল। খবর ও অন্যান্য তথ্যসূত্র থেকে যা জানা যাচ্ছে, সেই হাসপাতালে অপরাধ চক্রের জন্য এর আগেও এরকম ছয়টা ‘আত্মহত্যার’ ঘটনা ঘটেছে। এখানেও অপরাধীরা শুধুমাত্র মেয়েটিকে হত্যা করেই ক্ষান্ত দিতে পারত। কিন্তু তারা সে পথে না হেঁটে মেয়েটিকে নির্মমভাবে অত্যাচার করে ও ধর্ষণ করে। তারপর খুন করে। এই চিত্র আমাদের কাছে মোটামুটি স্পষ্ট। এখানে তাই প্রশ্ন এসেই যাচ্ছে মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হল কেন? কারণ একটাই, তার লিঙ্গ নারী। আর নারী যুগ যুগ ধরে তার ইজ্জতের জন্য প্রাণত্যাগও করেছে। অপরদিকে পুরুষটি দোষী হয়েও বুকের ছাতি ফুলিয়ে বেরিয়েছে। যা এখনও ‘সমুজ্জল’

  শুধু এত বড় ঘটনা নয়, অনেক স্ত্রীকেও তাঁর পুরুষ সঙ্গীটি ম্যারিটাল রেপের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এটাই পৌরুষত্ব জাহিরের একমাত্র পথ। এখানেও কিন্তু সেই পৌরুষত্বের নির্মম নির্লজ্জ প্রকাশ দেখা যায়। ঘটনাটির পরিপ্রেক্ষিত হুমায়ুন আজাদের সেই বিখ্যাত বাণীটি উল্লেখ করতে ইচ্ছে করছে। যেখানে তিনি বলেছিলেন, পিতৃতন্ত্রের বাহক পুরুষ থেকে আর  ভয়ঙ্কর এই মতবাদ বিশ্বাসী নারীরা। তবে এর সঙ্গে একথাও সত্যি, নারী কখনও নারীর শত্রু নয়। তাহলে তো বিভূতিভূষণের ডাইনি গল্পটির সুরে বলতে হয়, পুরুষও পুরুষের শত্রু। এভাবে পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতার রাজ্যনায়ক কিন্তু নারী হলেও, হিসেবে সেই গনিতজ্ঞ কে সি নাগের নাতনি হওয়ার ক্ষমতা রাখেন। তিনি তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ যোগ বিয়োগ গুন ভাগ করে ফেলছেন। একমাত্র সন্তানহীনা বাবা, মায়ের কথা আগের মত ভাবতে পারছেন না। কারণ গঙ্গা দিয়ে সময়ের সঙ্গে অনেক জল বাহিত হয়েছে। তিনি এখন আর বিরোধী পক্ষ নন। তাই আবেগের তল্পিতল্পা টালিনালায় ফেলতে দ্বিধা করেননি। এখন সেই আবেগী সমাজসেবিকা থেকে স্বৈরাচরী হয়ে উঠতে বেশি সময় নষ্ট করেননি। তিনি নিজেই এখন সেই পিতৃতন্ত্রের ধারক, যা বিশ্বের কাছে অতীব লজ্জার বিষয়।

রাস্তায় রাস্তায় ছেলে-মেয়েরা স্লোগান দিচ্ছে - 
তিলোত্তমার রক্ত চোখ 
আঁধার রাতের মশাল হোক।

অবশেষে মশাল সত্যি জ্বলে উঠেছে। নাগরিক মনে সাহসের মশাল। দধীচি বজ্র তৈরি করবার জন্য দেবতাদের হাতে নিজের অস্থি দিয়েছিলেন। তিলোত্তমা নিজের প্রাণ তুলে দিয়ে গেছেন জনতার আয়ুধ তৈরি করবার জন্য। যে আয়ুধের নাম 'ফিরে পাওয়া প্রতিরোধের সাহস!'



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Kobitar Alo April Sankhya 2025

    প্রচ্ছদ ঋণঃ-  পিনাকী রায় (কণিষ্ক)