সম্মিলন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
সম্মিলন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০২৪

সম্মিলন / গুচ্ছকবিতা

ধর্ষণ এবং
দেবশ্রী দে

dharshan ebong


১|
 
বিন্দু বিন্দু ঝরে পড়ছে ঘাম
খানিকটা রক্ত-ও কি?

মুখোশের ভেতরে মুখ নাকি মুখের ভেতর...

আমার কাপড় খুলে নিচ্ছে কাল
আমার শরীর খুলে নিচ্ছে কাল

আমার ভেতরে ঢুকে আসছে মুখ
কালের সে মুখ। কালো হচ্ছে ধীরে। কালো হচ্ছে

২|

এই খাদ ব্যক্তিগত

ইচ্ছেমত হাত রাখো। শিশ্ন রাখো। রাখো মাথা
পুরুষ-অবতার। আর কী কী রাখা যায়
খুঁজে দেখো নজরের এপার-ওপার

দাঁত থেকে দাঁতে রাখো পশুর মহিমা
লজ্জা পায়। লজ্জা পায়
বাবা-মা কোথায় রাখো মহাবীর্যবান

এই খাদ ব্যক্তিগত
ইচ্ছেমত নীচে রাখো আগামী তোমার

৩|
 
এত যে আঘাত আর
এত যে কামড় দিলে তবু কি আঘাত
দিতে পেরেছ কোথাও

নিজের আমি-তে কত কেটেছ যে দাগ
প্রতিবার। ইতিহাসে ইতিহাসে
হেসে হেসে উঠেছে সময়

আমাকে শরীর ভেবে যতবার
নগ্ন করেছ। করেছ যে পথে উল্লাস

সে উল্লাস অভিশাপ। সেই পথ আত্মঘাতী লাল

৪|

শেষ তবে। কতখানি খুশি হলে
কতখানি খুশি হলে ভুলে থাকা যায়

ভুলে থাকা যায় দুই চোখের নজর
যেখানে ভালোবাসা। যেইখানে স্নেহ ক্ষণেক্ষণ

এত স্বাদ! এত স্বাদ রক্তে আমার!
ভুলে থাকা যায় সব আলো-উচ্চারণ!

ভুলে থাকা যায় বুঝি! দ্যাখোনি তো তাই
ভিতরে ভিতরে কত নিভছে মানুষ

নিভে যাচ্ছে
নিভে যাচ্ছে
বাতিটি তোমার

৫|

দাঁড়িয়ে থাকবে ক'টি পা'য়

দ্যাখো, ওই জ্বলেছে মশাল
আমার প্রতিটি কোশে লেখা যে বারুদ
নরম জেনেছ, এবার উঠেছে জেগে

দাঁড়িয়ে থাকবে ক'টি পা'য়

যাও, ওই মেয়েটির গায়ে
হাত রাখো। চিনে নাও মেয়েকে তোমার
দেখে নাও কত দীর্ঘ পৌরুষ তখন

দাঁড়িয়ে থাকবে ক'টি পায়

শুক্রবার, ২১ জুন, ২০২৪

সম্মিলন | শিশির আজম



মধ্যবিত্তের কবিতা


আমি চাই আপনি আমার কবিতা পড়ুন আর সন্দেহ করুন কবিতাকে

আমি চাই

আপনারা পড়ুন আমার ঋতুরক্তমাখা কবিতা

তাজা মৃতদেহের পাশে

আমি চাই

আপনারা আমার কবিতার ওপর থুতু ফেলুন

কুচি কুচি কাটুন

জ্বালিয়ে দিন আমার বিষদাঁতের কবিতা

না হলে

অন্তত অস্বীকার করুন যে এটা কবিতা



একুশ


'একুশের ওপর কেন তোমার এতোটা বিশ্বাস,' জিগ্যেস করলাম সুকান্তকে

সুকান্ত

সুকান্ত ভট্টাচার্য

আমার বন্ধু,

'একুশের ওপর কেন তোমার এতো প্যাশান কোলাজ নির্ভরতা?'


'একুশ এক নিষ্কলঙ্ক সকাল,' বললো সুকান্ত,

শুরুরও শুরু আছে

কিন্তু একুশ থেকেই তো আমাদের  সত্যিকার নিজেকে চেনা

নিজের দিকে ফেরা

আর অন্ধকার বিস্ময়ের তন্দ্রা মুছে একুশ এক গণগনে তারুন্য

এক আগ্নেয়গিরি

এক সূর্য

বিপুল তরঙ্গে সব হিংসা কলুষ কীটনাশকের শিশি ধুয়ে

ভাসিয়ে নিয়ে যায়

কেবল রয়ে যায় বিনোদিনী দাসীর হারিয়ে যাওয়া আংটি

কৃষ্ণচূড়া ফুলের রক্ত

কল্যাণ

আর হ্যা ভাল করে দেখো তোমার ভেতরেই  একুশ



এটাই


এটাই তো ঠিক যে মায়ের গর্ভ থেকে টেনে বের করে এনে

একটা কঙ্কালের ভেতর আমাদের ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে

যেখানে কম্পিউটার আছে দর্জিঘর আছে

আর এতো বড় বড় হাসপাতাল

যে ৫/৭টা সূর্যকে অনায়াসে মেঝেতে গড়িয়ে

টেনে এমাথা-ওমাথা করা যেতে পারে

আমাদের আত্মার সামনে

যা আমাদের সঙ্গে সঙ্গে মায়ের গর্ভ থেকে বেরিয়ে এসেছে

এর পরের কাজটা তো ডোম আর ডাক্তাররা মিলে করে দেয়



বেসি স্মিথের বোন


তুমি এক নিগ্রো কন্যা

ধরে নাও

বোন

বেসি স্মিথের


তুমি

খুব দূরে নও


তোমার ভিতরে

আমি


না কি

আমার ভিতরে

তুমি


দেখো একদিন অসুখী তারাগুলো

ফিরবে

আমাদের টেবিলে

আর বধির টেবিলটাও সাহস পাবে

নিজেকে দেখার


মহাদেশের বিশাল বিশাল ক্ষত

আর খুঁত

ভবিষ্যৎ কারুশিল্প

সম্মিলন | রহিত ঘোষাল



দহনীয়


এক অবিরাম ঝড় বৃষ্টির রাত,

সব চোখ ক্লান্তিতে নিভে আছে,

তবে সব আগুন এখন কোথায়,

ব্যথা থৈ থৈ, 

হই হই বিজলী সঞ্চার,

হে গুরুগম্ভীর গর্জন,

তুমি কখনো দগ্ধ রোদের মধ্যে,

কখনো বা বিকেলের ফাঁকা মাঠে, পথেঘাটে,

ক্রোধ ঢেলে দাও,

পানিতে ভেসে যাও শুকনো ঝরা পাতা,

বিস্ফোরণের মধ্যে এক জন্ম, অমরত্ব,

এসো তোমার ফিনফিনে শাড়িটুকু খুলে নেই,

তোমার নাভিকুণ্ডল মরালনিন্দিত,

তুমি তো জানতে আমি কী ভীষণরকম 

দহনীয় ।।



আবহ


কাফনের উপর বৃষ্টি নেমেছে,

গিরিখাত থেকে এসেছে মেঘ,

আমাকে দূর দেশের ট্রেন ধরতে হবে,

অসংশোধিত সময় ছেড়ে

প্রবেশ করতে হবে কালরাত্রির ভেতর,

এই যে ছিনিমিনি খেলা,তৎপুরুষ,

রূপক, ভাসমান হালকা দেহ,

বীজমন্ত্র আবিষ্ট চন্দ্রাংশু,

আমাকে প্রায় দায়শূন্য করে যায়,

পরকীয়া প্রেমের তোড়ার মতো 

তীক্ষ্ণধার ....



মৃত্যুর পাঁচালী


মৃত্যু মৃত্যু মৃত্যু

মৃত্যু মৃত্যু মৃত্যু

এভাবে আর কাউকে ভালবাসতে পারিনি,

তোমাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে

মুখ থুবড়ে পড়েছি, 

                         মহাশ্মশান,

এসো আমি এই জীবন সাজিয়েছি,

                       ঈশ্বর নয়!

ঈশ্বর নয়; তোমাকেই দেবো লবণাক্ত খাদ,

মৃত্যু তুমি আমি একই সূত্রে গাঁথা

মৃত্যু মৃত্যু মৃত্যু মৃত্যু মৃত্যু ।।



কাঁটাগাছ ও গোলাপচারা 


চোখ তুলে দেখি তোমার শরীর-

পাথরমূর্তি, তোমার পায়ের তলায় যে সমুদ্র-

হুটোপাটি, জিভে যে চুম্বন,

বালির খেলাঘরের মধ্যে 

তুলকালাম সঙ্গম, শীতস্পৃহা,

ভারী হয়ে আসে ঘুমে, 

দেয়াল উঠে যায় 

ভাগাভাগি হয়ে যায় জ্বালাপোড়া,

বিনুনি থেকে নেমে আসে মীরার ভজন,

নীচু কলকাতা জল জমলে,

একতলা প্রায় ডুবে যায়-

বাল্মীকি উঠে আসে দোতলায়-

বিদ্যুৎ চলে গেলে আঁজলায় 

করে দিও খতম লাইন, তক্ষকের গুচ্ছ প্রেম,

উশখুশ পাখিটার পোশাক খুলে যায়,

পোশাকের তলায় গ্রাম, ধানখেত, ঝর্না,

উপশিরা হু-হু করে, খৈনির ডিব্বা খালি,

মরণ ঘনিষ্ঠতা এখন ছয়লাপ।।

সম্মিলন | পিয়াংকী



কবিতা এবং বিক্রয়জাত ঝিনুক 


(১)

ভ্রমরের পাশে যদি এসে বসে লাল কাঁকড়া 

বৃষ্টি আর একটি স্বস্তিকচিহ্ন যদি ধুয়ে যায় একসাথে 

তুমি কি কাঁদবে ? 

অবশ্য, কান্নার চেয়েও দরকারী সঠিক  পেইনকিলার


সলিউশনে ডুব দেবার ঠিক আগমুহূর্তে -

সমস্ত অধর্মকে জড়িয়ে অজস্র চুমু খেয়েছ সাবলীল...

 

(২)

সাবলীল  সহজ ? 

অতশত বুঝি না বলে চুপ থাকি। 

ভাঙচুরের থেকে নি:শব্দ ভালো। 

তার চেয়েও ভালো নিস্তার 


ভাগ্যবানের হাতের তালু কিংবা চাঁদের চিহ্ন -

জনসমক্ষে এলে অধার্মিক 

অপবাদ নেই। 

বাদ দিতে শিখলে আসামীও ঈশ্বর...  


(৩)

এযাবৎ কালের সঞ্চিত সর্বমোট  পোখরাজ থেকে যদি খসে পড়ে ঘুঙুরঘর তাহলে  ঠাঁই হয় নিজস্ব নদীতে। গাছের নীচে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে একসময়  মানুষও যে গাছ হয়ে যেতে পারে সেই ধারণাটুকু জনসমক্ষে বিলিয়ে দিয়ে কি আদতেও জন্ম দেয়া যায় প্রসবঘরের দেওয়াল ? পাঁচিলের গায়ে এই যে স্যাঁতস্যাঁতে ভোর আর  মৎস্য সংগ্রহকারীর হাতের ছাপ, এরা সত্যিই কি  মাছ বিক্রির পর নৌকায় করে ভাসিয়ে দেন বর্জ্য আঁশ ? 

উঠে এসো। গুটিবসন্ত গায়ে নাও।


(৪)

... অযুত প্রশ্ন । 

লজ্জাবস্ত্রের উদযাপন । 

রুদ্ররূপ তোমার। তুমি সর্বকালজ্ঞ

জটাতে ভরেছ সুপ্তিস্তব

কপাল জুড়ে অঙ্কতিল


ভিতরে অহরহ দৌড়ে বেড়ায় যে চঞ্চল হরিণটি

সে-ই কি সমগ্র? 

গাঢ় হচ্ছে ত্রাণ

নাছোড় মায়া

অনাদি অসুখ


সমুদ্র প্রয়োজন। হাত পাতো।


(৫)

গায়ের বালি ঝাড়ার মুহূর্ত। যে বাড়তি ফেনাটুকু বা  অতিরিক্ত স্নানজল, বীমা অনুযায়ী এসব দুরারোগ্য ব্যাধি। অভিশপ্ত ঘুম। কাকের পায়ে লেগে থাকা পাপ। কিছুটা দাগীক্ষয় কিছুটা ভষ্ম। চিনলে সঞ্চয় না চিনলে শকুন। সূর্য অস্ত গেল। নিশ্চিন্ত খর্গ। ঘোর গার্হস্থ্য। সংসারী বক।  


প্রকাশ্যে সবাই নাবিক। আর নাবিকের থেকে এক ইঞ্চির দূরত্বে প্রত্যেকেই  অযোনিসম্ভবা...

Kobitar Alo April Sankhya 2025

    প্রচ্ছদ ঋণঃ-  পিনাকী রায় (কণিষ্ক)