বুধবার, ৮ মে, ২০২৪

রবীন্দ্রনাথ আর সোশ্যালমিডিয়া | অদিতি সেনগুপ্ত

যদি আজকের এই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় রবিঠাকুর থাকতেন, তাহলে তাঁর উপর এই সোশ্যাল মিডিয়া দাপট কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারতো তাই ভেবেই কাল্পনিক এক কথোপকথন...


স্থানঃ জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির অন্দরমহল।

পাত্র-পাত্রীঃ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাদম্বরী দেবী।


রবীন্দ্রনাথঃ ও নতুন বৌঠান কোথায় গেলে একবার এদিকে এসে দেখো একদম লেটেস্ট ভার্সন আইফোন এনেছি তোমার জন্য। তোমার সেলফোনটা তো ৩জি এক্কেবারে আউটডেটেড।


কাদম্বরীঃ বলি ঠাকুরপো আইফোন তো আনলে তা জিওর সিমটা ভরে দিয়েছো তো নাকি। বিহারী বাবু আজকাল আবার ওনার কবিতার ফেসবুক লাইভ দিতে শুরু করেছে, তারপর ইউটিউবেও আবার ওনার চ্যানেল আছে তাই ডেটা টা একটু বেশীই চাই বাপু আমার।


রবীন্দ্রনাথঃ আরে হ্যাঁ হ্যাঁ জিওর সিম ভরেই একেবারে নিয়ে এসেছি, তাইতো আধার কার্ড সঙ্গে নিয়েই বেরিয়েছিলাম। আর শুধু তাই নয় একেবারে ওয়াই-ফাই কানেকশনের কাজও সারা। যত প্রাণে চায় দেখো বিহারী বাবুর লাইভ! তা...শুধু বিহারীবাবুর কবিতার লাইভ ই দেখা হবে নাকি এই অধমেরটাও একটু আধটু দেখা হবে। ফর ইয়োর কাইন্ড ইনফরমেশন আমার ফেসবুক লাইভ -এর ভিউয়ারস কিন্তু পুরো বিশ্বজোড়া। 


কাদম্বরীঃ আহা চটছো কেন বাপু আমিতো জানি তোমার খ্যাতি জগতজোড়া আর তাইতো তুমি বিশ্বকবি। নোবেল প্রাইজখানা কি আর এমনি এমনি পেয়েছো নাকি। বড় ভালো লাগে জানো মাঝেমধ্যে কখনও যদি বেরোই ট্রাফিক সিগনালেও তোমার গান বাজে। তবে তোমার উপর কিন্তু একটা বিষয়ে আমার ভারী অভিমান হয়েছে।


রবীন্দ্রনাথঃ কি হয়েছে নতুন বৌঠান আবার অভিমান কিসের! 


কাদম্বরীঃ তেমন বড় কিছু ব্যাপার নয় আসলে আগে তোমার সব লেখার প্রথম শ্রোতা বা পাঠিকা ছিলাম আমি, কিন্তু যখন থেকে এই হতচ্ছাড়া ফেসবুকটা এসেছে তখন থেকেই হয় লাইভ নয় পোস্ট হয়ে যায়। হ্যাঁ আমায় তুমি ট্যাগ করো ঠিকই কিন্তু তারসাথে আরো কতজন যে থাকে তার কোনো ঠিক নেই।


রবীন্দ্রনাথঃ আচ্ছা এই কথা ঠিক আছে এবার থেকে তোমার সামনে বসেই লাইভ করবো নয় টাইপ করবো তাহলেই তোমার প্রথম শোনা বা পড়া হয়ে যাবে।


কাদম্বরীঃ যাই বলো ঠাকুরপো আমাদের যৌবনে এতোসব ফেসবুক, টুইটার ওহো সেতো এখন আবার কি যেন ছাই ও হ্যাঁ মনে পড়েছে-- এক্স, তারপর ওই ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এতসব ছিলোনা কিন্তু মনের বাঁধন অনেক দৃঢ় ছিলো। এখন ইন্টারনেটের জাল যতো বিস্তার হচ্ছে ততোই যেন সম্পর্কের জাল সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে।


রবীন্দ্রনাথঃ ঠিকই বলেছো বৌঠান তবে দ‍্যাখো একটা বিষয় ভেবে, এই আধুনিক যুগ বলেই অতখানি আফিম খাওয়ার পরও তোমায় বাঁচিয়ে আনতে পেরেছি। আর তাছাড়া, "আমরা নতুন যৌবনেরই দুত" এটা শুধু আমার রচনা নয় আমি আক্ষরিক অর্থেই নবীনের পূজারী।


কাদম্বরীঃ হুমম, কিন্তু কী লাভ হলো বেঁচে ফিরে! 


কেমন যেন উদাস হয়ে পড়েন কাদম্বরী দেবী।


রবীন্দ্রনাথঃ চিয়ার আপ বৌঠান ওসব ভেবে আর মন খারাপ করতে হবেনা, এখন চলো তোমায় আইফোনের ফিচারসগুলো বুঝিয়ে দি। আরে নতুন দার সঙ্গে একটা ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে ভাব জমাও তো, দেখবে তোমাদের মাঝের সব বরফ গলে যাবে। আর এই আমিতো রইলামই তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড।


প্রস্থান...

৪টি মন্তব্য:

  1. অপূর্ব লিখনশৈলী। শব্দচয়ন। ভাষামাধুর্য্য। মুগ্ধ। কবিপক্ষে রবি প্রণাম।।

    উত্তরমুছুন
  2. অভিনব ভাবনা । সময়ের ব্যবধান ও বিবর্তন মেধাবী শৈলীতে ফুটে উঠেছে ।

    উত্তরমুছুন

  প্রচ্ছদ ঋণঃ-  অদিতি সেনগুপ্ত