শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৪

Kobitar Alo December Sankhya 2024

  

Kobitar Alo December Sankhya 2024

প্রচ্ছদ ঋণঃ- অদিতি সেনগুপ্ত


সূচীপত্র
-----------------------



প্রচ্ছদ
------------------
অদিতি সেনগুপ্ত


সম্পাদকীয় কলাম
-----------------------------
কৌশিক চক্রবর্ত্তী


কবিতা ভিত্তিক
------------------
সুমিতা চৌধুরী
অনীশ দাস
দেবব্রত রায়
শাশ্বত বোস
রাজরুল ইসলাম
জীবন সরখেল
পারমিতা মুখার্জি
আসিফ আলতাফ


সম্মিলন
------------------
বর্ণজিৎ বর্মণ
অর্ণব সামন্ত


স্মৃতির দুয়ারে
------------------
স্বর্ণালী সরদার দাস
সুদীপা বর্মণ রায়


ডাকঘর
------------------
মেনকা সামন্ত
বটু কৃষ্ণ হালদার

অরাজনৈতিক ভ্রম
------------------------------------
চিরঞ্জীব হালদার



সম্পাদকীয় কলাম
-----------------------



শীতের মরশুমে সকলকে কবিতার আলো এই ওয়েব পত্রিকায় স্বাগত জানাই। দেখতে দেখতে আবার আমরা আর একটি একুশ তারিখে পদার্পণ করলাম। প্রতিমাসে এই তারিখটি আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই পত্রিকাটি প্রকাশ হওয়া থেকেই আমরা এই নির্দিষ্ট দিনে আপনাদেরকে একটি করে ঝকঝকে ওয়েব ইস্যু হাতে (পড়ুন মোবাইলে) তুলে দিই। আজ পর্যন্ত সেই প্রথাই চলে আসছে নিয়ম করে। আজ আবার আপনাদের সামনে নিয়ে এলাম কবিতার আলো ডিসেম্বর সংখ্যার ওয়েব ইস্যু। সব থেকে আগে যা বলবার, তা হল এইবার আমরা প্রচুর লেখকদের থেকে ভালোবাসা পেয়েছি। আপনাদের লেখায় আমাদের ইমেল আইডি ভর্তি হয়ে গেছে। তার থেকে বাছাই করতে আমরা প্রায় হিমশিম খেয়েছি। কিন্তু ভালো কবিতা এবং বাছাই করা নিবন্ধ, গল্প ও রচনা আপনাদের সামনে তুলে আনতে আমরা বদ্ধপরিকর। তাই সকল লেখা থেকে বাছাই করে নির্দিষ্ট কিছু লেখাকে এই সংখ্যায় আপনাদের সামনে নিয়ে এলাম। এছাড়াও আপনারা জানেন আমাদের কবিতা ব্যাংকের কথা। আমরা আপনাদের ভালো কবিতাগুলিকে ব্যাংকে সঞ্চয় রাখি। কবিতার আলো কবিতা ব্যাংক ইতিমধ্যেই আপনাদের ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। সেখান থেকেও কবিতা নিয়ে আমরা পরবর্তী ইস্যুগুলিতে প্রকাশ করি। এই শীতকালীন সংখ্যায় আমরা যাঁদের থেকে লেখা পেয়েছি তাঁদেরকে জানাই অনেক ধন্যবাদ। আর যাঁদের লেখা এই সংখ্যায় রাখতে পারলাম না, তাঁরা আবার কবিতা পাঠাবেন নিশ্চয়। আমরা আপনাদের সকলের ভালোবাসা চাই। আর সেই ভালোবাসায় বলিয়ান হয়ে কবিতার আলো একটু একটু করে এগিয়ে চলবে সামনের দিকে। এ আমাদের বিশ্বাস।

আমাদের এই আনন্দযজ্ঞে আপনাদের সকলের নিমন্ত্রণ। শীতকাল সকলের ভালো কাটুক। আনন্দ যেমন নিজে নেবেন, তেমন অন্যের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারাও করে দেবেন। পরিবার এবং পরিজন নিয়ে সকলে সুন্দর দিনযাপন করুন। আমরা ভবিষ্যতে আপনাদের সকলকে নিয়েই পথ হাঁটতে চাই। অন্ধকার যতই আসুক, সকলে হাত ধরে থাকলে আমরা নিশ্চয়ই একদিন এগিয়ে যেতে পারব নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে। কবিতার আলো নতুন সংখ্যা নিজে পড়ুন এবং ফেসবুক ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে সকলকে পড়বার সুযোগ করে দিন। সব শেষে সকলকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানাই। শীতের ছুটি সকলের ভালো কাটুক। সামনেই কলকাতা বইমেলা। হয়তো আপনাদের সকলকে আবার বহুদিন পরে সামনে থেকে দেখবার সুযোগ পাব। সেই অপেক্ষায় আমরা এখন দিন গুনছি। ততদিন সকলে ভালো থাকবেন।


কৌশিক চক্রবর্ত্তী
সম্পাদক
কবিতার আলো



কবিতাভিত্তিক
---------------------



খোঁজ

সুমিতা চৌধুরী

রাতের তারায় জলসায় খুঁজে চলি তোমার মুখ অবিরত
আমার একলা ঝুল বারান্দায়,
কখনো মন চিঠি উড়ে যায় 
এলোমেলো কথা নিয়ে ঐ দূর নীল সীমানায়।

আকাশের গায়ে আঁকি সুখঘর 
রামধনুর রং চুরি করে খানিক,
হঠাৎই ধূসর মেঘেরা ঢেকে দেয় সেই ছবি
লিখে রেখে যায় বৃষ্টিখামে মনখারাপেরই আঙ্গিক।

আকাশের সীমানায় আমারও কি মুখ ফোটে কখনো?
অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে তুমি কি তা দেখো?
খোঁজো কি সেই রঙিন বিকেলগুলো?
আজও কবিতার আখরে ভালোবাসা আঁকো? 

আমার আকাশটা আজ বড়োই অভিমানী,
নোনা জলের বাস্পে গুমোট ভারী।
দখিনা বাতাসটাকে কে যেন করেছে চুরি,
সুখ পায়রাটারও আমার সাথে হয়েছে বেজায় আড়ি। 

বৃষ্টিগুলো আজ কেবলই শীত ছড়ায়,
 রিমঝিম ধ্বনিটা কোথাও নেই বুকের মাঝে।
অঝোর ধারায় বৃষ্টি স্নানে শহর ভেজে আহ্লাদে,
আমার শুধুই বরফ কুঁচি জমে বুকের ভাঁজে।

শীতগুলো আজ সুখপরশের ওম ছাড়াই বাঁচে,
বিবর্ণ রুক্ষতায় প্রহর করে পার। 
আদিগন্ত উৎসবহীন খোলা হাটে পথ হাঁটে,
মনের মাঝেই হাতড়ে ফেরে উত্তাপ তোমার।। 

------------------ 

উদাসী মন

অনীশ দাস

লিমেরিকের অস্বচ্ছ ভাষাতে কবিমন 
ব্যাকুল, তাড়িয়ে বেড়ায় মনের ইচ্ছেরা।
ফুলের কোমল স্পর্শ চিরস্মরণীয়
চাবিকাঠি,
আঁখিপানে চেয়ে গভীরতা
বোঝার ফন্দি ক্রমে বিফল;
স্বপ্নের গণ্ডি দিগ্বিদিক ছড়ায় প্রতিক্ষণ।
সুমধুর বংশী বাদক মন প্রফুল্ল করে,
অমোঘ আকর্ষণে হৃদয় আগুয়ান
পড়ে থাকে লেখার খাতা, 
তাতে শুধু অজানা হরফে লেখা আছে 
' অভীপ্সারা '।

------------------ 

খাণ্ডব পোড়ানো-আঁচ

দেবব্রত রায়

যারা একটা লাশের সামনে দাঁড়িয়ে হিসেব কষে, ক-বার ঠোঁট নাড়লে মাড়িসহ চেয়ারটাই নড়ে যেতে পারে কিংবা, ক-টা বডি পড়লে ব্যালটপেপারের পা কাঁপবে
তারা মানুষের বদলে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এবং নাড়ি ছেড়ার দাঁত ও নখ খোঁজে 

যে পুকুরে জল ঢোকা এবং বেরনোর ঢেকুরটুকু ওঠে না, যে মাটিতে নিঃশ্বাস নেবার বাতাস বয় না, সে দেশে হিন্দু মুসলমান... নয় আসলে, বিপদে আছেন প্রত্যেকটা মানুষ   

গাল থেকে গলার নলি সুড়-সুড়ি দেওয়ার প্রশ্রয় পেলে একটা ক্ষুর যে-কোনো মুহূর্তে   ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়ে উঠতে পারে 

দশ-সেলের টর্চের বদলে পকেটে কয়েক-টুকরো বৈদুর্যমণি নিয়ে বেরিয়েছি 
অথচ রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘর, নদী-সমুদ্র এমনকি, দু-একটা মানুষও নজরে পড়ছে না 

প্লটের পর প্লট দখল নিয়েছে বড় মেজ সেজ... কুয়াশার রেপসিড-তেল জমানো-হুমকি

আজকাল ছাতির পাঁজর আর শিরদাঁড়া ঠুকে সর্ষে তেলের গোঁফতুতো হতেও, জামার আস্তিনে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ারব্রিগেডের নম্বর লিখে রাখতে হয় 
কারণ সর্ষের ভিতরেও শেয়ালকাঁটার একটা হাওমাওখাও শুনতে পাচ্ছি

যাদের স্কুল-সিলেবাসে বোশেখ-জ্যোষ্ঠের খাঁ খাঁ  দুপুর থাকে না, তারা কুয়াশার লাস্ট মিনিট-সাজেশন-বগলে পরীক্ষায় বসে 
                                 আর 
পদ্মার চরায় যে বাউল-নৌকাটি থমকে আছে  তার দাঁড় এবং হালে গঙ্গা, সিন্ধু-র খাণ্ডব পোড়ানো-আঁচ ক্রমশ ফুঁসে উঠছে

------------------ 

চাহিদা ও প্রেমের সমীকরণ 

শাশ্বত বোস

জন্ম থেকে জন্মান্তরে বনভূমিময় দীর্ঘ্যস্থায়ী উদ্ভিদ হয়ে,
বাক্যহীন একটা দিন কাটাবো তোমার সাথে।
সোনালী কলমিলতার মত তোমার উদ্বায়ী খোলা চুলে,
আমার দুহাতের আঙ্গুলগুলো দিয়ে ঘন্টা মিনিটের অঙ্ক কষবো।
বেলাগাম নিম্নচাপের দোহাই দিয়ে, হিমভেজা বৃষ্টিতে শরীর ধুয়ে,
একটা “চাবুক মারো” উষ্ণতায় কেঁপে উঠবো,
তোমার আগুন রঙা চোখের তীব্রতায়।
সেদিন তুমি এমনিভাবে মানুষের মিছিলে
মিশে মিশে থাকবে তো?
পৃথিবীর চাকাটা ঘুরছে। মাটির সাথে মাটি গুলে
সব আবার মাটি হয়ে যায়।
সেদিন তুমি উৎসবে-পর্যটনে, অঘ্রাণের সোনালী ধানে
এমনিভাবে জেগে থাকবে তো?

তোমার মাছরাঙা দুই চোখে ভাষার দূরত্ত্ব মুছে যায়।
খন্ড খন্ড দ্বীপ যেন তোমার নাভি, বুক, চিবুক।
হিসেবের শেষ কষে, আমরা চা বাগানে যাব কিংবা গড়ের মাঠে।
হিমাংকের বহু নিচে, যখন রক্ত আর পিত্তিগলা দাগ লেগে থাকে
কব্জির মোচড়ে, খেয়াঘাট ভরে যায় অজানা মানুষজনে,
বেহেস্তের দরজা বেয়ে অচেনা শোক ছড়িয়ে
পড়ে ক্যালাইডোস্কোপিক রোদের আলোয়।
আগত নভেম্বরের অনাগত শীতের কোলে চাঁদ জেগে আছে,
যেন মৃত মায়ের কোলে নয় ছয় হয়ে যাওয়া মৎস্যকন্যা।
গোখরোর ফণার মত পদ্মফুলে হোঁচট খেয়ে, কাঙালের মত
নদীগর্ভে জামা দিয়ে ফুল কুরোনোয়, তুমি মিশে থাকবে তো?
সামনের ঘোরানো কালো সিঁড়ি বেয়ে,
ন্যাড়া পোড়ার আগুন গায়ে মেখে, স্থির একঝাঁক
গোলা পায়রাদের পাশে নিয়ে,
সেদিন তুমি, আমার কবরে এসে বসবে তো? 

------------------ 

অথচ তবুও

রাজরুল ইসলাম


অথচ তবুও 
সব শেষ হয়ে যাওয়ার পর যারা আছে 
তারা হাসছে খেলছে নাচছে আমার মাথার ভিতর জলের ভিতর 
ডানদিক থেকে বামদিকে ঘুরে ফিরে আমাকে গ্রাস করতে এগিয়ে আসে। 

অথচ তবুও 
আমি পৌঁছে যাই নদীগুলোর ধরে 
কিংবা লাল গাছগুলোর মধ্যে নিথর হয়ে 
আমি সুপারিশ করি যত অভিযোগ।

অথচ তবুও 
শেষ হয়ে যাওয়ার পর যারা থাকে 
আমাকে সংকীর্ণ করে লালা আগুনের ভিতরে 
আমি সব বার্তা পাঠিয়ে দিই শিশুদের হয়ে 
শেষ হয়ে যাওয়ার পর যারা থাকে 
আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে ক্ষয় করে।

অথচ তবুও তো
আমি ভালোবাসি 
মানুষের ভিড়ে 
যত গাড়ি এগিয়ে চলে 
আর আমি আরও মৃত্যুর ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠি। 

অথচ তবুও 
শেষ হয়ে যাওয়ার পর যারা থাকে 
তারা হাসছে খেলছে আর কাঁদছে....


------------------ 

বর্তি

জীবন সরখেল

ব্যাঞ্জন অসঙ্গতির দেওয়াল ছাপিয়ে ক্রমে স্পষ্ট হয় সমুদ্রের শীৎকার ধ্বনি!
পৃথিবীর গুণ-দোষ নিরপেক্ষ স্বজন আবর্তে আজও মুছে যায় কিন্তু সব বিভাজন প্রহেলিকা;
সমন্বয় পাখির ডানায় যেভাবে প্রশমিত হয় মহাদেশীয় দূরত্ব প্রক্ষোভ
ক্লিশে কাঁটাতারে বদলায় কী আদৌ কর্কটক্রান্তি অভিমুখ !
এসো; সবাই মিলে আবারও কবিতায় একটা আলো-ধূলো-মাটিমাখা গভীর সবুজ সকাল বুনি...

------------------ 

তিস্তা নামের মেয়েটা

পারমিতা মুখার্জি

মেয়েটার নামে ছিল  তিস্তা,
অথচ ওর চোখে গভীরতা দেখেছি আমি
তখন তার বয়স খুব বেশী হলে দশ
অথচ  জন্ম জন্মান্তরের দুশ্চিন্তা নিয়েছে  ওই এক রত্তি কচি মুখ
ঠান্ডা দুটি চোখ 

সেদিন  আগুন  জ্বলেছিল বাড়িতে
সেই আগুনেই রাস্তা  ভাগ  হয়ে গেলো মা আর বাবার
তিস্তা  শান্ত নীরব  ভাবে  তবুও  বয়ে চলল
কারণ  নদীর  উত্থান  আছে, গতিপথ ও আছে
কিন্তু  গণ্ডি হয় না
অনিচ্ছাকৃত হলেও  মোহনায়  আহুতি দিতে হয় অস্তিত্বের 

অনেক ছোটবেলায়  একবার তিস্তাকে দেখেছিলাম আমি খুব কাছ থেকে।
ছটফটে,  চঞ্চল  ধারা 
মনে প্রশ্ন ছিল 
বুকে ছন্দ ছিল 
আর ছিল চটুল বিশুদ্ধতা 

সেসব  কবেই  ভেসে  গেছে তার,
অকালে 
সেই যখন  সাধের বাঁধ ভেঙে গেছিলো 
সে তো গল্প কথা  এখন, বহু যুগ আগের কথা 

এখন  তিস্তা  শান্ত
গাঢ় নীল  চোখ 
সেখানে  আর প্রশ্ন খেলে না
শুধুই  অনিশ্চয়তা,  ভয়
ভীষণ ভয় তার---
যদি আবার সামনের বর্ষা প্লাবণ আনে?
যদি আবার তার খড়কুটো হারায়?

------------------ 

কবি ও ঈশ্বর

আসিফ আলতাফ

শব্দের ভিতর মৌনব্রত পালন করেন কবি
আর মৌনতার মধ্যেই গড়ে তোলেন 
শব্দ-ভাস্কর্য

যাপিত জীবনের কোলাহলে
ধ্যানমগ্ন কবি 
ফলাফল
ঈশ্বরের কাছ থেকে
নির্বাণ লাভ

এদিকে ঈশ্বরের সাম্রাজ্যে
চলছে ধর্মযাজকদের বিক্ষাভ—
কবিকে নির্বাণ দেয়া চলবে না
কবিরা নিপাত যাক
নাস্তিকরা  নিপাত যাক

ঈশ্বর ধর্মযাজকদের চেয়ে
কবিদের বেশি ভালোবাসেন
এ কারণে কবিদের প্রতি তাঁর পক্ষপাতিত্ব—
বললেন নেতা গোছের একজন 
ধর্মযাজক 

ঈশ্বর একথা শুনে কিছু বললেন না 
শুধু একটু মুচকি হাসলেন

কেন না ঈশ্বর জানেন
কবিদের কাছে ধংস এবং নির্মাণ সমগোত্রীয়
কিন্তু ধর্মযাজকদের কাছে এর উল্টোটা।



সম্মিলন
------------------



বর্ণজিৎ বর্মণ


(১) 

দুহিতা সংহার


হাওয়া থেকে বাস্তবে
সস্তার জঘন্য হাট বসে
জ্যোৎস্নার কোলে দাগ

নদী বিক্রি করেছে ?
জলের কাছে বিচার 
বনের পশু কারা?

সূর্য থেকে আলো 
দুহিতা কতটা পথ গড়ালো
কুষ্ঠ কুল গাছ ভালো

তুমি আগুন কবে 
সংহারে দংশিবে
লোভাতুর পুরুষ শিরে

(২)

শ্যাম রাত



প্রতিবাদ; শোক; গান পারি 
ভাষা নিস্তব্ধতার ভিতরে
মৃত্যু ভয়; সু-জয় কতদিন, পুথি অভেদ করে

দু মুঠো ভাত ; শ্যাম রাত- অরক্ষিত সুর

আগুন তুমি কবে? জাতিকা হবে! 
ধরায় শুদ্ধ বানান দুহিতা রবে রথ রঙে

(৩)

আকাশের নিচ কার


আকাশের নিচ কার - ব্রজবাশি বলো 
বিষন্ন বাতাসে কেন এত অন্ধ ধুলো

কোথায় বিলুপ্ত হবে নারী ধরাধামে 
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নগরে যে গ্রামে

শীত কাল বর্ষা কাল ধ্বংস লীলা চলে
মেঘ নদী জলে;  আহা !  নিয়ম- শৃঙ্খলে

কে বাঁধিবে শিন্ন তারে? কবি কি পারে না !
ছন্দ মিলে শব্দ খেলে? এ মন্ত্র  জানে না !

ব্যর্থ সব আঁকা,  ব্যর্থ চাঁদ, আলো, গাছ-
ব্যর্থ সোনার মানুষ, আকাশের লাজ 

লুকাবে কোথায় ভানু? বিষ ভরা গান
আমি কন্ঠে ধরি রোজ - ছেঁড়া সুখ টান

রক্ত ঝরে নিশি-দিন ঘটনা রোজকার 
আকাশের নিচ কার? দুহিতা চিৎকার-

(৪)

তীক্ষ্ণ ক্রোধে


অবক্ষয়হীন রাত্রে ক্রোধের সে বসবাস-
জল স্থির বসে; যত্নে খেলছো টেক্কা তাস

বারবার ভাবো তবে, কৌশল পাঞ্জায়
অরুদ্ধ বাক্, মত; ঘন ঘন টান গাঞ্জায়

জলসা হৃৎপিণ্ড জন,  পুরুষ ক্রোধ মন
বিজলী আনন রূপ, আঙ্গুল ধরে শান

উন্মত্ত বীর্য গোপন দাঁত, পাখিরা হারালো কই?
প্রতিজ্ঞা প্রস্তুত করো, জাল কাজে নাই সই

------------------


অর্ণব সামন্ত


(১)

কর্কটক্রান্তি



কর্কটক্রান্তির দুপুরে বৃশ্চিক দংশন করে 
আয় কবুতর আয় জড়ানো আদরে আদরে 
ভগ্নাংশ নিদ্রায় ভগ্নাংশ জাগরণে 
তন্দ্রাঘোরে তন্দ্রাহরণী দ্রাঘিমাংশকে দ্রাঘিমা করে
আয়ু পোড়ে আয়ু পোড়ে তবু উজ্জীবিত শিখা 
মধ্যদিনে মধ্যগগন স্পর্শ করে অবাধ্য অসহ্য দহনে 
চর্বচূষ্যলেহ্যপেয় কোষে কোষে ক্ষুধা মেটায় 
স্নায়ুতে স্নায়ুতে ঝঙ্কার ওঠে, বিদ্যুচ্চমকের ঝাঁকুনি 
স্বাতীনক্ষত্রের জল পড়ে গা'য়, জল যেতে চায় জলের গভীরে 
কিছুই অসম্ভব নয় আর সপ্তভুবন পদতলে মূর্চ্ছাপ্রবণ 
সমাধির থেকে উঠে আসে দুপুর একা একা 
তোর লাবণ্যের ঢেউয়ে ঢেউয়ে, তোর রূপের অরূপে

(২)

বেহালাবাদিকা



একদিন ছিল খরস্রোতা, সুনাব্য 
ষাঁড়াষাড়ির কোটালে প্লাবিত করেছে সমস্ত সংসার 
মিটিয়েছে প্রিয়জন ক্ষুধা, বেড়েছে সাত ব্যঞ্জন 
গেরস্থালিতে মোহমুগ্ধ ভাবব্যঞ্জনায় 
আজ হে ঝড়ের পাখিনি গোধুলির লগ্নে 
বেহালার ছড়ে সুর তুলে লন্ডভন্ড খন্ড করে দিচ্ছ 
যত মেঘ যত স্রোত যত স্বরবিতান 
মজে যাওয়া নদীটির অন্তঃস্থলে ফল্গুস্রোতও নেই 
' নাব্যতা ' শব্দটি হারিয়েছে অভিধান থেকে, শুধু কালো দিগন্তরেখা 
পাখিনি যখন তখন উড়ে যেতে পারে 
নীলকন্ঠ হয়ে অচেনা কৈলাসে, অজানা আকাশে।

(৩)

দ্রাঘিমা সিঁড়ি



পাথরের সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসে অলকানন্দা 
দ্রাঘিমা স্খলিত করে তোড়ে ভাসায় সমস্ত সমুখ 
খরস্রোতা, সুনাব্য নদী হয়ে পাহাড় পর্বত ছাড়িয়ে 
উপত্যকা পথে ছোটে মালভূমে, সমভূমে ...
তারপর সমস্ত ভালোবাসা নিয়ে ঝপাং সমুদ্রে 
সংসারের দু'কূল ভাসি যায় উজানে উজানে 
ভাটিতে গেয়ে ওঠে ভাটিয়ালি জ্বালা জুড়াতে একান্নবর্তীর 
পাগলি এখনও হৃৎকমল ভাসাতে পারে আশ্লেষে উচ্ছ্বাসে 
গোধূলির অস্তরাগে জ্বেলে দিতে পারে 
নুড়ি নুড়ি সংঘর্ষে চকমকি আলো 
দ্রাঘিমাকে ডাকতে পারে স্খলনে, ধারনে 
একেক নদী নাব্যতা স্রোত ধরে রাখে আজীবন 
আর কবিকে দিয়ে যায় অনন্তের পান্ডুলিপি 
ভালোবেসে, সুগভীর ভালোবেসে 
যুবতীজোছনা অমল ভাসানে ডাকে কবিকে।



স্মৃতির দুয়ারে
------------------



স্মৃতির সেদিন- টেলিফোন

স্বর্ণালী সরদার দাস


তুমি আসবে বলে কবিতারা স্বপ্ন আর স্বপ্নেরা কবিতা
আমি ছোট ছোট স্বপ্নদের মাড়িয়ে এগিয়ে যাই তোমার দিকে 
হাত বাড়াই পরম বিশ্বাস আর নির্ভরতায়
বুঝিনি তুমিও অধরা এক স্বপ্নই ছিলে....

বাড়িতে টেলিফোন থাকাটা তখন সত্যিই স্বপ্ন ছিল। বাবা সরকারী চাকুরে হলেও খুব সাদামাঠা ভাবে জীবন কাটাতে অভ্যস্ত ছিলেন, মা ছিলেন ততোধিক সাদামাঠা। আমাদের দুই ভাইবোনকেও মানুষ করেছেন খুবই সাধারণ ভাবে। টেলিফোন তখন প্রয়োজনের তুলনায় বিলাসিতার সামগ্রী বলে ভাবতাম আমরা।জরুরী প্রয়োজনে পাশের বাড়ির নম্বরে ফোন করার কথা বলা  থাকত আত্মীয়স্বজনদের আর  আমাদের ফোনাফুনির জন্য এস টি ডি বুথ কিংবা একটাকার কয়েন ফেলে ফোন ই ছিল ভরসা। 

তখন এস টি ডি বুথে ফোন করতে মিনিটে দু'টাকা বা দেড় টাকা খরচ হত। তাই ফোন করার সময় চোখটা থাকতো ডিজিটাল মনিটর টার উপর,এক মিনিট সময় শেষ হবার আগেই ফোন কাটার সুচারু কৌশল আয়ত্ত হয়েছিল বেশ ভালোমতই।

আমার বাপের বাড়িতে ল্যান্ডফোন এসেছিল খানিকটা আমার জেদের জন্যই। কলেজে পড়ার সময় প্রাইভেট পড়তে যেতাম যাদবপুরে। শিয়ালদা সাউথ লাইনে তো সামান্য ঝড় বৃষ্টি হলেই ট্রেন গন্ডগোল শুরু হয়ে যায়। সেরকম ই একদিন ভয়ংকর দুর্যোগে আটকে পড়ে বাড়ি ফিরতে প্রায় রাত দশটা বেজে গেল। সেদিন বাড়িতে খবর না দেবার জন্য বকুনি খেয়েছিলাম খুব,তবে মাকে সেদিন বলেছিলাম বাড়িতে ফোন না আনলে আমি পাশেরবাড়িতে আর জানাব না। আত্মসম্মানবোধটা বড্ড তীব্র ছিল তখন। মেয়ের মনোভাব বুঝতে পেরে বাবা এর পরেই ফোনের কানেকশন নেবার উদ্যোগ নেন।          

সে ফোন যেদিন এলো সেদিন বাবা প্রচন্ড অসুস্থ, সেদিনই হসপিটালে ভরতি করতে হল, আর পরেরদিন সকালে সেই ল্যান্ডফোনেই বাবার শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর পেয়ে হাসপাতালে দৌড়ালাম, ফিরিয়ে আনতে পারিনি তাঁকে, সেদিনই তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন কোন অমৃতলোকের পথে।

তার পর তো কেটে গেল আরো কতগুলো দিন। এল মোবাইল, বন্ধুদের হাতে নতুন মোবাইল দেখে কেনার সাধ যে জাগেনি,তা বললে মিথ্যাচার করা হবে।তবে জেদ ছিল নিজে চাকরি পেলে তবেই মোবাইল কিনব। তখন তো আর এত সস্তা ছিলনা ফোন করা। তবে অবাক করা ব্যাপারটা হল তখন মাগ্যিগন্ডার বাজারে লোকে ফোনে কথা বলত,আর এখন ফ্রি তে টকটাইম পেয়েও নেট সার্ফিং করতেই বেশী পছন্দ করে।

নিজের মোবাইল না থাকায়  চাকরির আবেদনপত্রে আমার অতি প্রিয় বাংলার দিদিমনির মোবাইল নাম্বারটা দিয়েছিলাম। একদিন খুশির সকালে দিদিমনি ল্যান্ডফোনে ফোন করে জানালেন - স্বর্ণালী, তোমার কনফার্মেশনের মেসেজটা এসে গেছে।  সেদিনটা ভুলিনি আর  ভুলিনি আমার সেই দিদিমনিকে। তাঁর প্রতি রইল আমার আজীবনের কৃতজ্ঞতা।

------------------

ছেলেবেলার গাছেরা

সুদীপা বর্মণ রায়

একটা কাঁটাওলা পাতিলেবুর গাছ ছিল ,কাঠের গেট খুলেই বাঁদিকে। ছোট ছোট ডালপালা উঠে ছাতার মত বিস্তৃত। মনে পড়ে ,বড্ড মনে পড়ে।

তিনটে মানুষরূপী ছোট বাঁদর গাছটা যেখানে দুভাগ হয়ে গেছে, সেখানে গুছিয়ে বসে হাবিজাবি খেলছে। কাঁটা ফুটে যাওয়ার ভয় তাদের  নেই, তাদের বাপমায়ের ও নেই। দিব্যি একগাছ পাতিলেবুর মধ্যে ঠ্যাং ঝুলিয়ে খেলা।
কোন দামী খেলনা কোনদিন চোখেই দেখেনি তারা।
সারাদিন বাঁদরামি করতে, খেনলা কোন কাজেও লাগত না। তবুও উল্লাস  চলত সারাদিন ছুটে ছুটে,তিন ভাইবোনের।

কাঞ্চন গাছের তলায়, উঠোন থেকে মাটি খুঁড়ে টাটকা মিষ্টি তৈরি হচ্ছে ---ল্যাংচা, রসগোল্লা সন্দেশ। সারা হাত পা মাটিভর্তি। জামাকাপড় মাটিমাখা। বাপমায়ের অত দেখার সময় নেই।ভালোই জানে স্নানের সময় বাথরুমের মেঝে বা কলতলায় ফেলে মোটা ঝামা দিয়ে ঘষে তুলবে।তাতে চামড়া উঠে মাংস বেড়িয়ে গেলেও পরোয়া নেই।
ফাল্গুনে বিকশিত একগাছ সাদা সাদা কাঞ্চন ফুল।সৌরভ নেই ,কিন্তু দর্শনেই  মন ভরে যেত।বাড়ির প্রতিষ্ঠিত নারায়ণ সাজবে কাঞ্চনে। রোগা সরু ,কিন্তু ফুল ফোটানোয় কোনই কমতি নেই।
মাঝ উঠোন বরাবর ছাতার মত দাঁড়িয়ে থাকা বাতাবিলেবুর গাছে ফেব্রুয়ারিতে যখন ছোট ছোট সাদা ফুল ফুল আসত ,তখন এক অদ্ভুত সৌরভ মাতোয়ারা হয়ে থাকত সারা উঠোন।
ছাদে  গেলে সুগন্ধে মন অন্য জগতে চলে যেত।ছাদে বসে সেই অদ্ভুত সুন্দর জগতে যাওয়ার স্বাদ আর পাই না।

ফুল ঝরে যাওয়ার  পর কচি কচি বাতাবিলেবুর ভারে গাছ আরো নত হয়ে যেত।
তরুণ কাক ঘন পল্লবিত গাছে যত্ন করে বেঁধে দিত বাসা,প্রতিবছর বসন্তে। সারা উঠোন ভরে যেত ছোট ছোট কাঠি, ডালপালায়। মা কাকিমা ঝাঁট দিতে দিতে পাগল হত। কেন কে জানে, এই মা কাকিমাগুলোর পরিষ্কারের একটা বাতিক থাকে! ছেলেমেয়েরা নোংরা মেখেও কী খুশি। তবুও কখনো ওই কাক দম্পতির উদ্দেশ্যে কটু কথা বলতে শুনিনি। বলবে কেন ? খারাপ কথা সব ছেলেমেয়েদের শাসনের জন্য থাকত।
বরং ওরাও যেন চাইত, মা কাক নির্বিঘ্নে  ডিম পাড়ুক।
একবার মাঠের মত ছাদে বিকেলে দিব্যি তিনজন ছুটে ছুটে খেলছে। হঠাৎ মাথায় এলো, বল খেলার। ছোট একটা বাতাবিলেবু পেড়ে বল খেলা হবে।
যেই গাছের ডালে হাত পড়েছে, তীরের মত  ছুটে এসে ঠোকরাতে গেলো কাক বাবা। ভয়ের চোটে তিন ভাইবোন দৌড় নীচের দিকে।
সন্তানের সুরক্ষায় সবাই একইভাবে সচেতন।
কিছুদিন বাদে, অন্যরকম কচিগলায় "  কা কা " শোনা যেত।বাবা কাক চারিদিক খুঁজে পুষ্টিকর পোকামাকড় খুঁজে বাচ্ছাদের খাওয়াত,
তিন বাঁদর খেলা ফেলা হাঁ করে দেখত ,কাকের পরিবারের কাজকর্ম।
বাচ্ছা কাকের মুখের ভিতরটা লাল ---অদ্ভূত লাগত।
বাতাবিলেবু বড় হলে পাড়া বেপাড়ার ছেলেরা চুরি করতে আসত।

হইহই করে তাদের সাথে ঝগড়া করাও ছিল কি আনন্দের

নির্জন দুপুরে ঘুমটুম মাথায় তুলে বেশ একটা জগঝম্প ব্যাপারস্যাপার হত।

"ও কাকিমা,ও দিদি, অল্প কটাই  নেব ,দাও না ?

দেব না, ভাগ। অল্প বলে গাছ ফাঁক করিস।

আরে না গো বেশি। অল্প নেবো, তোমাদের ও ভাগ দিয়ে যাব.

বেশ কেটে যেত দুপুরটা ঝালঝাল লঙ্কা আর নুন চিনি সহযোগে বাতাবি লেবু। হাসতে হাসতে ঝগড়া করার মজাই আলাদা।

উঠোনে ছিল একটা গন্ধরাজ ফুলের গাছ,যার কান্ডের অর্ধেকটা উই খেয়ে নিয়েছিল। গাছটাকে দেকে মনে হত, খানিকটা অংশ লম্বছেদ করা হয়েছে। তাতে কিন্তু তার কাজের কোন অসুবিধা হত না ---দিব্যি একগাছ সাদা গন্ধরাজ ফুটিয়ে যেত।
বড্ড মনে পড়ে।

আরো আরো আছে কিছু ছোটখাটো জুঁই টগর লঙ্কা-জবা। জড়িয়ে লতিয়ে থাকতে থাকতে কবে যান অবিচ্ছেদ্য হয়ে গেছিল বাড়ির সাথেই।

বাড়ির গাছেরা কিন্তু বাড়িরই সদস্য। আলাদা আলাদা চরিত্র নিয়ে থেকে যায় আমাদের সাথে।



ডাকঘর
------------------

 
 

মেনকা সামন্ত

প্রিয় 'কবিতার আলো',

তুমি যখন প্রথম আমার কাছে এসেছিলে, বিশেষভাবে সক্ষম এই মানুষটির অবসর- কালীন একলা জীবন  বাঙ্ময় হয়ে উঠেছিল। শৈবাল দামে অবরুদ্ধ চরণ নতুন চলার ছন্দ খুঁজে পেয়েছিল। হঠাৎ আলোর ঝলকানি লেগে ঝলমল করে উঠেছিল চিত্ত। তুমি যেন আমার কাছে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ। তোমার মায়ার পরশে আমি ধরতে পেরেছি অনেক অধরা মাধুরীকে।

এক অভিনব আঙ্গিকে,অনন্য পরিবেশনায় নানান দিগন্ত আমার কাছে হয়েছে উন্মোচিত। তোমার আলোর বিচ্ছুরণে আমি আলোকিত। যদিও সব কবিতার আলোকে ঠিকঠাক হৃদয়াঙ্গম করতে পারিনি,তথাপি মনের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে এক ভালো লাগার আবেষ্টনী। প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছি তোমার সবটুকু রস নিয়ে রসসিক্ত হতে। আশা করছি অদূর ভবিষ্যতে তোমার রহস্যের অন্ধকার দূরীভূত করে আমিও একদিন হয়ে উঠবো আলোকিতা। অধুনা তুমি হয়ে উঠেছ আমার আর ও আপন। তোমার উদার প্রশস্ত বক্ষে ঠাঁই মিলেছে আমার। তাই প্রাণে লেগেছে খুশির তুফান। তোমাকে ধন্যবাদ জানাবো না, শুধু জানাই বুক ভরা অনেক অনেক ভালোবাসা। আর এই প্রার্থনা করি, আমার মত অনেক আপাত- ব্রাত্য মানুষের জীবনে অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো হয়ে এসো। আমার প্রিয় 'কবিতার আলো' তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে।

ইতি, 

তোমার কাছের কেউ একজন।

------------------

বটু কৃষ্ণ হালদার

প্রিয় সালমা,

তুমি হাজার মাইল স্টোন পারে থাকলে ও তোমায় খুঁজে নিতাম।কবরে থাকলেও মাটি খুঁড়ে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরতাম। এখন তুমি তার ও উর্ধ্বে।এখন তোমার চোখে সাদা কালো মেঘের মত ভেসে বেড়ায় অন্যমুখ।রোজ রাতে অন্য কারো বুকে মাথা রাখো,অন্য শরীরের গন্ধ,অন্য সুখ। সুখের সংসারে ব্যস্ত। সুখে আছো এটা শুনে পরম শান্তি অনুভব করি।তোমাকে বিরক্ত করতে চাই না। কিন্তু আমার স্বপ্ন গুলোর কেমন অপমৃত্যু ঘটছে দিন দিন। জীবনে একটা শেষ ইচ্ছার কথা বলতে চাই। এখন আমি সুন্দরবনে আছি।সন্ধ্যাতে নৌকায় করে রোজ মাঝ নদীতে ভেসে বেড়াই।কারণ কোলাহল আমার ভালো লাগে না। জানো চারিদিকে নিস্তব্ধ। মাঝিদের  নৌকার আলো গুলো জোনাকির মত ঝিলিক দেয়। জলে পা ডুবিয়ে আমি চিত হয়ে শুয়ে শুয়ে নীল আকাশের তারা দের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। এক স্তব্ধতার রঙিন নেশা জড়িয়ে হাত ছানি দিয়ে ডাকে।তারা গুলো বন্ধু হতে চায়।আমার যন্ত্রণা গুলো ভাগ করে নিতে চায়।ঠিক তখনই অনুভবে তুমি উপুড় হয়ে শুয়ে আছো আমার উপর।তোমার এলোমেলো চুলগুলো বারে বারে উড়ে আমার একাকীত্ব ধ্বংস করে দেয়।আমি আঙুল দিয়ে সরিয়ে দিতেই তুমি আরো গভীরভাবে জড়িয়ে ধর আমাকে। আমার শরীরের উপর তোমার শরীর, ঠোঁটে ঠোঁট।তখনই মনে হয় নিস্তব্ধতা র মাঝে জলের ঢেউ এর ছলাৎ ছলাৎ শব্দ, নৌকায় টিমে টিমের আলো, সো সো শব্দে বয়ে যাওয়া দক্ষিনা বাতাস,ঘন মেঘের কুয়াশা,আর নীল আকাশের তারারা আমাদের ফুলশয্যার খাট সাজিয়ে তুলেছে।তোমার অনিচ্ছার বিরুদ্ধে আমি আরো বেশি করে পাগলের মত ভালোবেসে চলেছি। হঠাৎ মাঝিদের চিৎকারে চোখ খুলে দেখি সব সপ্ন।তবে চারিদিক তোমার চুলের গন্ধ,শরীরের গন্ধ আমাকে গভীর নিস্তব্ধতায় আঁকড়ে ধরে।যদি পারো জীবনের শেষ দিনে,আমার খাটিয়া যেদিন ফুলে ফুলে সাজবে,সারা কপাল জুড়ে চন্দনের ফোঁটা,সবাই যাবে পিছে পিছে,তুমি সেদিন শিউলি তল পেরিয়ে,জল কাদা মাড়িয়ে একবার ছুঁয়ে দেখো।

ইতি,

তোমার বটু কৃষ্ণ



অরাজনৈতিক ভ্রম (ধারাবাহিক)
------------------------------------



ভ্রম (পর্ব-৩)

চিরঞ্জীব হালদার


সকালে ঘুমটা আচমকা ভেঙে গেল। কেন গেল তার কোন কারন নেই।আপনার সংসারে দুধ উল্টালে কি বেড়াল ঢুকে পড়েছে বলে ধরে নেবেন।কড়িবর্গা থেকে তকতকে মেঝে  কোথাও কোন অবাঞ্চিত উপদ্রব নেই। নিয়ম করে ঘড়ির এলার্ম ও বেজে ওঠেনি। পাশে নতুন বিয়ে করা বউ নেই যে যখন তখন ইয়ে পাবে।অথচ ঘুম ভেঙে গেল।তলিয়ে দেখতে গেলে দেখবেন খুব ভিতর থেকে একটা আর্জ জ্বালাতন করছে। আপনি আমল দিচ্ছেন আবার দিচ্ছেন না। সেই ঘুম ভাঙ্গানোর প্রধান কারিকর্তা। তবু এর পিছনে কোন যুথসই ব্যাখা নেই।অনেকগুলো ফ্যালাসি বা সম্ভাবনার মুখ ভেসে উঠবে। যা ব্যাখাতীত।অবশেষে আপনি দেখবেন বেশ সূচিন্তিত ভ্রম আপনার ভেতর জমে আছে।টের পাননি। এমন ভ্রমের কোন যৌক্তিকতা থাকেনা। ভ্রম তার আবার যৌক্তিকতা। আপনি ওয়াশরুমে গেলেন ফ্লাস না করে  ভালো মানুষের মত দিব্যি চলে এলেন।অন্যেরা ভেবে নিলো আপনি প্রচুর নোংরা। গেলো ভূত। অন্যেরা ভাবতে পারে এটা হয়তো আপনার কোন চক্রান্তের অংশ।মওকা খোঁজার দিক।অথবা উল্টোদিকে হয়তো এটা সত্যি তখন জল সাপ্লাই ছিল না। এমন অবস্থার জন্য আপনার কোন হাত নেই।জাস্ট সমাপতন আরকি।আপনার সঙ্গে থাকা চাপা বিরুদ্ধজনের কাছে আপনি সফ্ট টারর্গেট  হয়ে রইলেন।এখানে ভ্রম অজান্তে আপনাকে কাঠগড়ায় ঠেলে রাখলো।এই অবস্থায় ঝেড়ে না কাশলে বিপত্তি। কেহ শুনুক বা না শুনুক আপনার গলা ফাটিয়ে বলা উচিত ছিল আরে জল নেই রিজারভারে। এই না বলার বিপত্তি কোথায় দাঁড়াবে কে বলতে পারে।

একটা বয়েসের পর ভ্রম আপনার পিছু চাড়বে না।আর পিটপিটে ঘরণী সব সময় আপনার দিকে তীর শানিয়ে রাখবে। একের পর এক ভ্রমে আপনি নাজেহাল হতে থাকবেন। হয়তো কলের পাশে ব্রাশ না ধুয়ে কলে খুলে চলে এলেন। জল পড়ছে তো পড়েই যাচ্ছে।প্রয়োজনের  সময়ে  জল নেই। আপনার মূল্যবান সময় খরচ হয়ে যাচ্ছে টয়লেটে। কি বিড়ম্বনা। হতে পারে ওখান থাকে বেরিয়ে আসার পর ঠিক মত গামছা না মেলার জন্য বোটকা গন্ধ হতে পারে। কোন ক্ষমা নেই ।ব উ এই তড়পায় তো সেই তড়পায়।তারপর শুরু হবে চা পর্ব। চা নিলেন।ছিপি  না এটে দিব্ব্যি সরে পড়লেন।তার উপর চিনির কৌটো আলগা।আপনার খবর আছে।শনি কে আটকায়। আপনার ৪০০ টাকার দামি চা বর্ষার আদ্র বাতাস ঢুকে কাওয়ালি শুরু করলো বলে।যাকে বলে ননস্টপ কাওয়ালি।ধীরে সুস্হে বালিশে হেলান দিয়ে রোববারের সকাল উপভোগ করবেন তা নয় আপনার মোবাইল নেট অটোমেটিক ম্যালফাংশন শুরু করেছে।তার উপর সকালের দমড়ানো মোচড়ানো বিছানা বালিশ এন্টি ভাইরাস ছাড়া হরিণাম শুরু করল বলে।

হয়তো এটা থেকে ছাড় পাবেন কেন না আপনার বিছানা গুছানো পত্নীর নাপসন্দ। ও সবই সংসারিক অরাজনৈতিক ভ্রম। ভ্রম আর অপেক্ষিক ভ্রম কখন যে নিজেদের জায়গা বদল করে কে জানে।কালকে যেটা ভ্রম বলে যেটা ধরা হয়নি  মেজাজ আর পারিপার্শ্বিকতার নিরিখে সেটা আজকে ভ্রম। কারণ কখনো উহ্য কখনো আবার নয়।তখন আপাত ভুল চরম ভ্রমের পাকদন্ডিতে ঢুকে পড়েছে।এর পিছনে মস্তিষ্কের কোন ভূমিকা থাকার কথা নেই।আপনি নিতান্ত গোবেচারা। জম্ম ইস্তক আপাদমস্তক  ভুলো মানুষ। কোন গামছা না জড়িয়ে ড্যাং ড্যাং করে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসছেন।মনে হবে আপনি কোন মেন্টাল য়্যাসাইলামের স্থায়ী সদস্য।আপনি না শিশু না কোন নাদান পাগল। বউ হয়ত তখন হাতের হলুদ দাগ ওঠাতে ব্যস্ত সকাল সকাল।মনে হতে পারে ঘরোয়া পরিধেয়টা আপনার সর্ষে খেতে এক উৎপটাং পতঙ্গ হয়ে  জুড়ে বসেছে। কি কান্ড। না বউ এগিয়ে আসবে না ছেলে বা মেয়ে। সমস্যা আপনি আপনি সমাধান। কোন রিপোর্টিং ছাড়াই আপনি খবরের শিরোনামে।কাক কোকিল ভয়ে আপনার ত্রিসীমায় বসবে না।কে বাবা এই সাত সকালে শহীদ হতে চায়।এমন আসাংসারিকের পাল্লায় পড়ে জমিদার মাইয়ার হাড়ে দুব্বো গজাতে আর বাকি রইলো না কিছুই। এ সবই সংসারিক ভ্রমজনিত প্রতি কথন বা অতি কথন ও বলতে পারেন।



1 টি মন্তব্য:

Kobitar Alo April Sankhya 2025

    প্রচ্ছদ ঋণঃ-  পিনাকী রায় (কণিষ্ক)