বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫

Kobitar Alo March Sankhya 2025

  

Kobitar Alo March Sankhya 2025

প্রচ্ছদ ঋণঃ- পিনাকী রায় (কণিষ্ক)


সূচীপত্র
-----------------------



প্রচ্ছদ
------------------
পিনাকী রায় (কণিষ্ক)


সম্পাদকীয় কলাম
-----------------------------
কৌশিক চক্রবর্ত্তী


কবিতা ভিত্তিক
------------------
অভিজিৎ সুর
মধুপর্ণা বসু
মঞ্জীর বাগ
ঋদ্ধি সাহা
সঙ্কর্ষণ
সুবীর কুমার ঘোষ 
গোবিন্দ মোদক
মন কেমনের বসন্ত
অনীশ দাস
শর্মিষ্ঠা মিত্র পাল চৌধুরী


সম্মিলন
------------------
রূপক চট্টোপাধ্যায়


গল্পাণু
------------------
অনীশ দাস
কেয়া নন্দী
মেনকা সামন্ত
বৈশালী সেন
পারমিতা মুখার্জি



সম্পাদকীয় কলাম
-----------------------



প্রথমেই সকলকে জানাই বাসন্তিক শুভেচ্ছা। যে চিন্তাভাবনা নিয়ে আমরা এই সংখ্যাটি সাজাতে চেয়েছিলাম, আপনাদের লেখায় তা রঙে রঙে সেজে উঠেছে। মার্চ মাস মানেই রঙের মাস। আর রং মানেই বসন্ত। তাই এই বসন্তকে মাথায় রেখে আমরা এমাসের সংখ্যাটি একটু অন্যভাবে সাজাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বসন্তের একটি মাত্র শাখাকে নিয়েই আমরা ভাবতে চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম আপনাদের কলমে বৈচিত্রের ডালি। আমরা যেমন অন্ধকার থেকে মিশে যাই আলোর যাত্রাপথে। আবার ঠিক তেমনভাবেই আলো থেকে ডুবে যাই গহীন অন্ধকারে। পথ খুব অচেনা। আর এই সমস্ত অচেনা পথের অভ্যন্তরে আমরা যেন কোথাও নিজেকেই হারিয়ে ফেলি। আসলে আমরা হারিয়ে ফেলতে ভালোবাসি। নিজেকে হারিয়ে ফেলে কখনও নতুন দিশাকে খুঁজে পাই। বসন্ত মানেই তাই নতুন। বসন্ত মানেই প্রকৃতিতে ভালোবাসার রং। রবীন্দ্রনাথ বিশেষভাবে ভালোবেসেছিলেন বসন্তকে। আর সেই বসন্তের মধ্যেই তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন প্রকৃতিকে। ফুলে ফলে আগুনের রং লাগিয়ে তিনি উদযাপন করেছিলেন এই সময়কাল।

বসন্তকে একটু অন্যভাবে ভেবে আমরা এই সংখ্যাটিকে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করতে চেয়েছি। বসন্ত মানেই যেমন রং এবং ফাগুনের মেলবন্ধন, ফুলে ফুলে ভরে ওঠা শাখা। ঠিক তেমনভাবেই বসন্তের আরও অজস্র ব্যাখ্যা। আর আমরা আপনাদের কলমে সেইসব ঝরে পড়া মুক্তগুলোই আহরণ করতে চেয়েছি। রংরুটে চিনে নেওয়া বাসস্টপ আমাদের কাছে যেন নতুন রঙে ধরা দেয়। আর সেই নতুন রঙের আলোয় আমরাও সাজিয়ে তুলেছি মার্চ মাসের কবিতার আলো ওয়েব সংখ্যা। ঠিক ২১ তারিখেই আমরা আপনাদের হাতে তুলে দিলাম এই সংখ্যার ঝকঝকে কিছু লেখা। আমাদের বিশ্বাস রংরুটে হেঁটে গেলেও আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। আমরা বসন্তকে জয় করতেও পারব। আসলে বসন্ত তেমনই এক মহেন্দ্রক্ষণ। শীতকাল পেরিয়ে গ্রীষ্মের দাবদাহে পা দেওয়ার আগে এই সময়টুকু শুধুমাত্র প্রেমে প্রেমে উদযাপন। প্রকৃতির মধ্যে লুকিয়ে থাকে সেইসব অন্য বসন্তের ছোঁয়া। আমাদের কাজ তাকে টেনে বের করে মানুষের সামনে উন্মোচিত করা। তাই অন্য বসন্তের রূপে রংরুটে আমরা সেভাবেই হেঁটে যেতে চলেছি। আকাশের সমস্ত মেঘ কাটিয়ে নক্ষত্রগুলিকে ছুঁয়ে দেখার আনন্দ অপার। বসন্তের অচেনা রঙে তারা যেন নতুন রূপে সেজে ওঠে বারবার। কবিতার আলো তাই সেই রঙেই সাজিয়ে তুলেছে নিজেকে।

বসন্তের এই সংখ্যায় আমরা আপনাদের থেকে প্রচুর সহায়তা পেয়েছি। সমস্ত লেখা থেকে বেছে বেছে কয়েকটি লেখাকে স্থান দেওয়া কখনোই সহজ কাজ নয়। তার মধ্যেও এত লেখা থেকে আমরা কিছু লেখাকে বেছে নিলাম। ভালো বা খারাপের মতো আপেক্ষিক শব্দগুলো আমরা বলি না। আমরা বলি প্রাসঙ্গিকতা। আসলে আমরা যা চাই তা যখন পেয়ে যাই তখন আনন্দ করে তা প্রকাশ করি আমাদের পাতায়। তবে এই সংখ্যায় আমরা কিছু ভালো লেখা পেয়েছি, যা বিষয়ভিত্তিক নয়। তাই বিভিন্ন দিক বিচার করে এবারের ওয়েব সংখ্যাটিতে বেশ কিছু লেখা নির্বাচন করা হলো। এবার এই রংরুটে বসন্তের পথে আপনারাও হাঁটবেন। 
সবশেষে সকলকে শুভ কবিতা দিবসের শুভেচ্ছা জানাই। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো আজকের দিনটিকে (২১শে মার্চ) বিশ্ব কবিতা দিবস হিসাবে স্বীকৃতিদান করেছে। আজ এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমরা সেই সব ভাষাগুলির প্রতি আরও একটু সহানুভূতিশীল হব, যে সকল ভাষা বর্তমানে লুপ্তপ্রায়। কিন্তু এক সময় এই সকল ভাষাতেও সাহিত্যচর্চা হত ব্যাপকভাবে। কোন ভাষা ব্যবহার না হলে তা লুপ্ত হয়ে পড়ে। তাই আমরা কখনোই চাই না পৃথিবী থেকে ব্যবহারের অভাবে কোন ভাষা হারিয়ে যাক। আজ বিশ্ব কবিতা দিবসে তাই সেইসব প্রান্তিক ভাষাগুলির সম্বন্ধে আরেকটু ওয়াকিবহাল হতে আপনাদের কাছে আবেদন করছি। সকলে ভালো থাকবেন। আবার এক মাসের অপেক্ষা। আপাতত ফাগুনের অন্য রঙে রাঙিয়ে নিন নিজেদের৷


কৌশিক চক্রবর্ত্তী
সম্পাদক
কবিতার আলো




কবিতাভিত্তিক
---------------------



শূন্যতা

অভিজিৎ সুর

কথা ছিল একটি হাত কপাল ছোঁবে,
কথা ছিল ঠোঁটের ওপর ঠোঁট রেখে
দীর্ঘ সময় ব্যয় হবে আশ্লেষে,
অন্ধকার ঘেঁটে ঘেঁটে নদীদের সীমানা মুছে ফেলে
শরীরে বইবে উজান।

কৃষ্ণচূড়ার উত্তাপ সহ্য হয় না আর,
তাই খুলে রেখেছি সব সাজ;
দ্যাখো আমার শরীরে থিতিয়ে আছে
অক্ষমতার পলিমাটি,
অবোধ বসন্ত তবু কেন সেখানেই খুঁজে ফেরে
স্খলিত শিথিল কামনার অস্থিমজ্জার ধ্বংসস্তূপ।

আমার জঙ্ঘায় কালপেঁচা উড়ে এসে বসলে,
জানতে ইচ্ছে হয়
নগ্ন শূন্যতায় কতদিন বাঁচে একলা পুরুষ।

------------------ 

এ বসন্ত বাহার

মধুপর্ণা বসু

মন খাঁখাঁ ইস্টিশন, শেষ ট্রেন অপেক্ষার
চোখ হতাশ উড়িয়ে দিয়েছে মিথ্যে-
কবুল সব প্রতিজ্ঞাবাক্য মেঘে উড়ে গেছে, অজানা সংশয়ের বৃশ্চিক বহুকাল ক্লান্তিকর-
পক্ষপাত অবশ্য কাঙ্ক্ষিত সেই মুহূর্তে..
তোমার অনুভব ছুঁতে দেয়না কোন তরঙ্গ,
গহীন অন্ধকারে টলটলে দুচোখ তোমার
গ্রহনে ডুব দেয় ইচ্ছে সুখে।
ভাঙা জ্যোৎস্নায় বসি, ফাঁকা গুমটিঘর;
অপেক্ষা থাকে রাতভর, অথচ কল্পনারঙ
শ্রান্ত আগন্তুকের মতো সত্যি হয়ে ফোটেনা,
ফাল্গুনী চাঁদ আধো ছায়াপথ অতিক্রম

করে কতশত মৃত মেঘের ভেলা।
কয়েকটা গাঢ় শব্দ,তোমার মিশকালো রহস্যে আমার শরীর ডাকেনা,
মরা স্বপ্নেরা নাভিশ্বাস ফেলে,সুখের ফরাস পেতে তারারা নিভে গেছে জেনেও
প্রকৃত সব নগ্ন ফাল্গুন রাত শুধু তোমারই,
গলার কাঁটা হয়ে সেই পরম সুখের যন্ত্রণা।
গুনাহ্‌ ক্লেদ,অপ্রাপ্তির কান্না সুন্‌হেরী 

অতীত স্তব্ধ হয়ে থাকে বসন্ত বাহার কার অপেক্ষায়?
শিমুল পলাশ কাঞ্চনের চপলতা বিরান
স্টেশন পার হয়ে যায় শুধু তোমাকে কিছু  বলবে বলে।

------------------ 

রঙ

মঞ্জীর বাগ

চাঁদ, দোলের চাঁদ. বড় ভয় করে তোমায়

তোমার পূর্ণ গোলক আলোর ছটায় এক 
পাগল বের হয়ে আসে, ঢুকে পড়ে আমার ভেতর
দ্রাক্ষালতার মতো তার চুল;
ঢুকে পড়তে চায় পলাশের বনে; 
 আমি বৃন্দাবনের বৃন্দগান দেখি
আগুনের আঁচ পাই

পোড়া গন্ধে ভরা যমুনা তটে ও ভালো লাগে ভালবাসাবাসি গান,

রাধার পরণের বাস ছিঁড়ে গেছে,
এখনও গান অপেক্ষা করে, 
 সময়ের নদীজলে গানঘ্রাণ ভেসে গেলেও 
পলাশ, আজই হোরি

------------------ 

তবুও বসন্ত

ঋদ্ধি সাহা

বসন্ত এলেও, পলাশ ফুলে আগুন ধরেনি,
রঙিন পোস্টারে ঢাকা আছে পাখিদের গান।
নির্লিপ্ত শহরে কাঁচের জানালায় বসে
তুমি দেখো—হলুদ ট্যাক্সির ছুটে চলা।

ভালোবাসা এখন ভেন্টি কফির কাপে,
মেসেজে জড়ানো আধো-ঘুমের কবিতা।
পিক্সেলের ভিড়ে হাত ধরে রাখা
একটা ইমোজি, বাস্তবের ছোঁয়া নয়।

হাওয়ার মতোই বদলায় গল্পের দৃশ্য,
কেনাকাটার ব্যাগে ভরা অচেনা অনুভূতি।
ফুল ফোটে না, বরং অফারে আসে,
ভালোবাসাও হয়তো ডিসকাউন্টেড।

তবুও বসন্ত… ফেলে আসা বিকেল,
তোমার হাসিতে রয়ে যাওয়া কিছু রোদ।
পুরনো গানের মতো মন ভুলিয়ে দেয়,
প্রেম, ভঙ্গুর তবু সুন্দর।

------------------ 

একাকার

সঙ্কর্ষণ

এই যে লোকটিকে তুমি দেখছো ইনি ক্যাথলিক
আর এই যে লোকটি হেঁটে আসছে এ নাস্তিক।
তুমি ভাবছো আমি তবে কেন পড়ে আছি, 
এখানে একজন ঈশ্বরকে দেখতে পায়না
আর একজন শুনেছি ঈশ্বরকে দেখতে চায়না।

দ্বিপ্রহরে হওয়া উৎসব শেষে যতোখানি ছিলো
"কাকে দেবো, কাকে দেবো" খুঁজে খুঁজে হেটে, 
নিজেকে ভ'রেছি দেখি পুরোই... ঘরের এক 
অন্ধকার কোণে, আমি তো পাইনি তাঁকে
বা হয়তো চাইনি কখনও, তুমি কি বুঝেছো তা? 

যেখানে মিশেছে মোড়, যতোদূর ছুটে গেছে চোখ
না-দেখা রেখার ওপারে তিনিই থাকেন
শুনেছি যা কেউই নাকি অতোদূরে থাকেনি কখনো... 
তোমার ভেতরে আরো জমা কতোশত কথা
সত্যি বলোতো ছুঁয়ে, ছবি শুধু শরীরী কি নয়? 

এই যে লোকটিকে ক্যাথলিক ভাবছো
আর একে? যাকে তুমি ধ'রেছিলে নাস্তিক, 
সকলেই উদ্বৃত্তের খোঁজে নিঃস্ব জীবনে
প্রবল বিশ্বাস নিয়ে চিৎকার ক'রে ওঠে, "নেই নেই নেই"... 

সব কিছু মিলেমিশে বুঝে নিও এইই তো নরক।

এইই তো পথ।

এইই তো খালিচোখে পাগলাগারদ।

------------------ 

রং রুটের বসন্ত

সুবীর কুমার ঘোষ

রং রুটের ধুলোয় এখন বসন্তের ছায়া,
শিমুল পলাশের আভায় মন পাগল,
তপ্ত তারার নিচে রাত ভিজে ওঠে ধোঁয়ায়,
কুয়াশার দেয়ালে আঁকা কিছু ব্যথার আয়না।

সিগন্যালে থেমে থাকে বিকেলের স্রোত,
হাত বাড়ালেই যেন ছুঁয়ে যায় খর রোদ।
চায়ের দোকানে বসে উড়ে যায় গল্প,
কেউ বা হারায়, কেউবা পায় নতুন স্বপ্ন।

মেট্রোর জানালায় মুখ রেখে উদাস চোখ,
আলোর বিজ্ঞাপনে লেখা পুরনো ইতিহাস।
পথিকের ছায়া মিশে যায় রেললাইনের শব্দে,
মনে হয় জীবনটা কেবলই গন্তব্যের কুয়াশা।

রং রুটের বসন্তে রংহীন কিছু ব্যথা,
ফুটপাতের কবির কলমে শব্দের মাতামাতি।
তবুও শহর জুড়ে প্রেমের একটা ধোঁয়া,
বসন্তের রং মেখে হাঁটছে এক পথভোলা।

------------------ 

রং রুটের বসন্ত

গোবিন্দ মোদক

বসন্ত ডাক দেয় পলাশে শিমুলে 
আবিবের রঙে রাঙা কিংশুক ফুলে, 
তবুও তো রংরুটে ঘেঁটু, ভাট ফুল 
অযথাই ছড়িয়েছে এলোমেলো চুল!

বসন্ত ডাক দেয় দখিনা বাতাসে 
কোকিলের কুহুতান শুধু ভেসে আসে, 
তবুও তো রংরুটে আমের মুকুল 
মধুর সুবাসে ভরা ছোটো ছোটো ফুল!

বসন্ত ডাক দেয় রঙেতে আবিরে 
মধুমাস জুড়ে থাকে সাতরঙা ভিড়ে, 
তবুও তো রংরুটে শূন্যতা জাগে 
ইঁটভাটা, শিশুশ্রম কার ভালো লাগে!

বসন্ত ডাক দেয় ভ্রমণের সুরে 
ট্রলিব্যাগ গুছিয়ে যাওয়া কাছে দূরে, 
গোঠে ফেরে মা-হারা রাখাল একা 
কারও চোখে দয়ামায়া যায় নাতো দেখা!

বসন্ত ডাক দেয় নব কিশলয়ে 
ফুলে ঢাকা বনপথ চলে নির্ভয়ে, 
তবুও তো রংরুটে রংহীন কুঁড়ে 
অনাদরে অবহেলে কাঁদে মৃদু সুরে!

বসন্ত ডাক দেয় ঝরা যে পাতায়
বেণীদোলা কিশোরীর রঙিন ছাতায়,
দুখীবুড়ি দেওয়ালেতে দেয় যে ঘুঁটে
বসন্ত একা হাঁটে – তবু রংরুটে!

------------------ 

মন কেমনের বসন্ত

অনীশ দাস

বসন্ত মেলেছে তার রঙিন ডানা !
কোকিলের সুর ছুঁতে চাইছে 
এ - মন,
তবে আমি হারিয়েছি সকল মায়া;
হাতড়াচ্ছি প্রাণের খোলস আপন লয়ে।
যুগ হাসছে আমার কথায় চুপটি করে,
তাকিয়ে আমি আকাশ পারের শুন্যে;
এক ছুটে কেউ ঝলসে দিলো শরীর আমার,
তাকিয়ে দেখি পুরোনো ঘায়ে আঁচড় লাগে।
পথ ভুলেছি জীবন স্রোতে; 
মলয়ের স্পর্শ হায়!
এক দৃষ্টে চেয়ে থাকি অসীমের প্রতি আবছা শব্দের মায়ায়।

------------------ 

বসন্তের বাহার

শর্মিষ্ঠা মিত্র পাল চৌধুরী

শীত ঘুম শেষ করে মেলেছে যে ডানা -
শিমুল-কিংশুকে আজ সাজে সামিয়ানা।
পলাশ চুপিসাড়ে টুপটাপ ঝরে ,
রক্ত আলপনা দেয় সবুজের 'পরে ।।

বসন্তবৌরি,দোয়েল আর ফুলেল সুবাস-
বাতাস বাউল,বনে রঙিন উচ্ছ্বাস।
ফাগুনে আগুন জ্বলে প্রবাল হৃদয় -
ফুটেছে পলাশ পুরনো প্রাচীরের গায় ।।

মনের আগল খোলে বসন্ত এলে -
মালতি মধুপে মোহে কত কথা বলে!
প্রজাপতি ডানা মেলে পাতায় পাতায় ;
কোকিল শিরীষ ডালে মালহার গায় ।।




সম্মিলন
------------------



রূপক চট্টোপাধ্যায়

তিনটি তারার আঙুল


(১)


সাধ্য নাই তোমার প্রেমে পড়ি, 

তোমায় দু এক লাইন লিখব বলে,
ছা-পোষা অক্ষর গুলি জড়ো করি সারাদিন  

ও অক্ষর ফুলের মতো ফুটবে বলে
আমি অপেক্ষার নদী উপুড় করে ধরি

দেখি সব অক্ষর ঘুণপোকা হয়েছে 
আমার কাঠখোট্টা হাড়ের ভেতর আল্লারাখার ধ্বনি 
তোমাকে শোনান হয়না কোনদিন। 

বড়ো ঘড়ির সামনে দাঁড়াই 
কাঁটা হব বলে, সময় মেপে দেবো শিশুর মতো

দেখি সময় পালিয়ে গেছে আমাকে ফেলে
থ্রু ট্রেন। পড়ি মরি উঠে যাবো 
যাই, যেতে যেতেই অরণ্য ফুরিয়ে যায় 

মানব জমিনে দু একটি মরা গাছ হেঁসে আছে
আকাশের দিকে হাজার আঙুল মেলে!

(২)


বিজ্ঞাপন বিরতির পর 
জীবনের বাকি অংশটা নিয়ে 
তোমার সাথে আলোচনায় বসবো।

বিষ্ণুপুর থেকে তুমি টেরাকোটার মূর্তি এনেছিলে
আমি তার থেকে শিল্প চুরি করে
অসুস্থ ফুসফুসে বসিয়েছি।

কয়লা পোড়া
ঠোঁটের হাসির ওপর 
হৈমন্তী বোরোলিন লাগিয়ে দিলাম, যদি চুম্বন পায়! 

বাউণ্ডুলে চিঠির কোন ঠিকানা লিখতে নেই 
তাই আলোচনার শুরুতেই তুমি ঘুমিয়ে পড়লে

আর
বিজ্ঞাপনের বালিকাটি তখনও 
সেলুলয়েড জঙ্গলে পলাশ খুঁজে চলছে বোকার মতো!

()


ওহে, ফাগুন মাসের নাগর 
পারলে পুরুলিয়া জঙ্গলে এসো
পলাশের ফুটন্ত সোহাগে
তোমার পরিচয় গোপন রাখব আমরা!

টিলার চূড়া থেকে শুক্লপক্ষের
ধাতব চাঁদ খুলে তোমার গলায় পরাবো।
যতই পালিয়ে যেতে চাইবে দূরে 
ততই গাঢ় হবে মহুল বনের আড়াল
জঁট পাকাবে জলতিতিরের গান,

 ভবঘুরে জিওমেট্রিতে দিশাহীন হও
ট্রাফিক সিগনাল কানা হয়ে যায় এখানে
জেব্রা ক্রসিং আঁকা অন্তর নেই কোথাও

অযোধ্যা পাহাড়ের গায়ে ঠেস দিয়ে বসে
তুমিও প্রতিধ্বনি শুনবে কালান্তরের! 

()


ঘরমুখো মহিষ দল। পিছু পিছু 
ছ্যাবলামো করে কাটিয়ে দেওয়া
দু'চারটে জীবন।  বিড়ি ধরিয়ে দিচ্ছে এ-ওর টা

এটাই সম্পর্ক, কার্বন কালো ঠোঁটে 
চুম্বন আঁকা নারী আকাশ প্রদীপ নিয়ে ছাদে আসে!

গোপন কথাটি রবেনা গোপনে 
লহু লোহান আকাশের মুখে চাঁদ জ্বেলে
পৃথিবী আবার প্রেম পড়ছে যুূদ্ধবাজ কালপুরুষের। 
যার পায়ের নীচে সাতসতের ঘরবাড়ি
অসুখ বিসুখ, কোন্দল এবং অভাজন ঈশ্বর!  

ভাতের ওপর কুয়াশা সরে গেলে লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে
ডাক পাঠায় নিদমহলের ঘুমন্ত পুরুষটিকে!

()


সন্দেহাতীত ভাবেই আমি ওই পুরুষটিকে চিনি!
যার গায়ের গন্ধে 
আমি গাছ হয়ে থাকি।
নীচে তোমার চিকচিক চোখ, 
চোখের পরিধিতে নীল শার্ট পরা ময়ূরটিকে
আমি কি তীব্র ভাবে চিনি!

ডিপ্রেশনের তাঁবুতে বহুদিন কাটিয়ে 
আর ফিরতে চাইছি না ডাল ভাতের কথায়।

চার দেওয়াল জুড়ে তুমি আলপিন দিয়ে
যে সব হিরন্ময় দিনলিপি গেঁথে রাখো
সবার গায়ের অপরাহ্ন আলো

দীঘা অথবা মাউন্ট আবুর স্মৃতি জুড়িয়ে আসছে
ছন্দহীন হচ্ছে হৃদয় আলাপ,

চলে যাচ্ছি না তবুও। 
ও পুরুষের আগে অদৃশ্য শিং উঁচিয়ে আমিও 
কৃষ্ণসার হব, 
মৃত্যু পর্যন্ত বন্যতায় জেগে থাকবো একা!




গল্পাণু
------------------



প্রতীক্ষা

অনীশ দাস


একটি অতি উজ্জ্বল পরিধেয় গায়ে প্রমীলা দ্বারে। রংয়ের খেলায় মেতে উঠেছে সকলে,চারিদিকে হৈচৈ। বাচ্চা-বড় সকলের সমবেত কলতানে মুখরিত দিগ্বিদিক। অপেক্ষার মায়ায় জড়িয়ে স্মৃতির ডালের ফল উপভোগের আশায় সময় গড়িয়ে যায়। দিনের আলো ক্রমে নিভে আসতে দেখা যায়। বসন্তের লীলার শুরুতে শুষ্ক গাছের ডালে নবপল্লবের ছোঁয়া আর পাখিদের কলকাকলি যেন ঔদাসীন্যতাকে খানিক ম্লান করে। 

দিনশেষে স্বামীর ছবির কাছে দাঁড়িয়ে অভিমানী চোখে চেয়ে নীরবে অশ্রু বিসর্জন করে সে। ধীরে ধীরে ফিরে যায় নিজ ঘরের বদ্ধ শৃঙ্খলের আড়ালে স্বামীর ছবিতে জড়ানো সুগন্ধি পুষ্পমালা উপেক্ষা করে।


সাধপূরণ

কেয়া নন্দী


নগরায়নের ধাক্কায় ঋতুগুলো আর উপলব্ধ হয় না। তবুও সন্ধ্যারাগে ইতিউতি ভেসে আসা কুহুতানে আর কৃষ্ণচূড়ার লাল শিখরটা দেখে রঞ্জনার মনটা আবীরের নেশায় আনচান করে।

মানুষটা ‘আবীর’ হলে কি হবে কোন বসন্তেই রঞ্জনাকে রঞ্জিত করেনি কোন এক ফাগুনী পূর্ণিমায় তার ঠাকুরদাদা অজানা দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন সেই থেকেই শ্বশুরবাড়িতে আবীর-ফাগের প্রবেশ নিষিদ্ধ।

তবে হ্যাঁ, তেল-হলুদ-লঙ্কার মিশেলে একটা দৈনন্দিন রঙে রঞ্জনার হাত ও পরিধেয় নিত্য রঙিন।

দোলে’র দুদিন পর এক বৈষ্ণবী ‘পঞ্চমদোল’ উৎসবের দান নিতে এলে উনি রঞ্জনা’-র কপালে আবীরের তিলক এঁকে দেন। দোল শেষ হলেও পূর্ণিমার চাঁদ তো আর ক্ষয়ে যায়নি। রঞ্জনা ভাবে, তবে কি এবারে ‘রাধারাণী’ স্বয়ং এসেছিলেন...


বিমুখ বসন্ত

মেনকা সামন্ত


বসন্ত ঘুরে ঘুরে আসে। নবীন কিশলয়ে সেজে ওঠে প্রকৃতির প্রাঙ্গণ। হলুদ রাঙা রাধাচূড়া ঢলে পড়ে কৃষ্ণচূড়ার গায়ে। শিমুল -পলাশ- অশোকের রাঙা রঙে রঞ্জিত হয় ধরা। রঙ্গনের থোকা থোকা লাল ফুলে  ভ্রমর,মৌমাছির গুনগুন শোনা যায়।রঙিন পাখায় ভর করে উড়ে বেড়ায় প্রজাপতির দল। অস্ত গোধূলির আকাশে ছড়িয়ে পড়ে আবীর -গুলাল । 

শুধু নীরা র জীবনে আসে না কোন রং। বড্ড ফ্যাকাশে থাকে সব সময়।খুব ইচ্ছে করে তার,সব রং দুহাতে নিয়ে নিজের সর্বাঙ্গে মেখে নিতে।বসন্ত আসে,  বসন্ত যায় -,কিন্তু তার জীবন- মালঞ্চে মধুমাসের হাত ধরে না আসে কোন ও মধুপ, না আসে কোন ও প্রজাপতি।সময়ের স্রোতে সে শুধু ভেসেই চলে  -----।


বসন্ত বাহার

বৈশালী সেন


রং রুটে গাড়ি ঢুকিয়ে দিলে যা হয় তাই ঘটল দ্বৈপায়নের সঙ্গে। ট্রাফিক পুলিশের খপ্পরে পড়ল। বসন্ত উৎসবে দেরি করে গেলে তৃণা ভয়ানক রেগে যাবে। এই অবস্থায় তার কিছু করারও নেই। কিন্তু সে কথা তৃণাকে বোঝাবে কে। যেখানে বাঘিনীর ভয়... সেখানেই বেজে ওঠে দ্বৈপায়নের ফোন।

‘হ্যালো সোনা আমি এখুনি আআ…’কথা শেষ করতে না দিয়ে তৃণা বলে ওঠে, ‘শোন তোকে আর আসতে হবে না। আমি ঋকের সঙ্গে বেরিয়ে যাচ্ছি।’ এবারও দ্বৈপায়নকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দেয় তৃণা। দ্বৈপায়নের চোখের সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে তৃণা থুড়ি গাড়িটা।

ট্রাফিক পুলিশের পোশাকে ওটা কে? ঋতু না! দ্বৈপায়নের কলেজ ক্র্যাশ…এতো রং রুটে বসন্ত বাহার!
আসে কোন ও প্রজাপতি।সময়ের স্রোতে সে শুধু ভেসেই চলে  -----।


^  চেনা রুটে

পারমিতা মুখার্জি


বেশ অনেকক্ষণ বসে নীল ও তিয়াসা বাইরে মূষলধারে বৃষ্টি। সব ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে   চেনা রাস্তায়  এক কোণে  গাড়ি থামিয়েছে  নীল। ঠায় বসে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। সমানে  বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে সাথে বৃষ্টি।
অবশ্য  উপভোগ করছে প্রতিটা মুহূর্ত ওরা, প্রিয়  মানুষ আর প্রিয়  সময় দুটোই  একসাথে পাওয়া  হলো। দুজনের ই। দুজনে দুজনের দিকে  তাকালো,  চেনা , বিশ্বস্ত প্রেমের চাউনি এটা। হাতের  মোবাইল টা রাখলো ড্যাশবোর্ডের উপর  তারপর  নিশ্চিন্তে  ডুব  দিলো  একে অপরের মধ্যে। এখানে প্রেম  আছে, একে অপরের ছোঁয়া  আছে, উষ্ণতা ও আছে কিন্তু অশালীনতা নেই। ওয়াইপার তখন শুধুই উত্তাল ছন্দে দুলছে.....

আজ  ও ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি,  চেনা মানুষ, চেনা গাড়ি,  চেনা জায়গা। বহু বছর আগে  যেখানে  তারা প্রথম  চিনেছিলো একে অপরকে,  ছুঁয়েছিল  দুজনে  দুজনকে , গভীর ভাবে প্রথমবার,  সেই  গলি , সেই  রাস্তা,  সেই মোড়। শুধু হারিয়ে গেছে সেই উষ্ণতা,  কিংবা দুজনেই এগিয়ে  গেছে ভিন্ন ভিন্ন পথে , নিজেদের  গুছিয়ে  নিয়েছে অচেনা বাঁকে। আজ.......... দেখা। বহু  যুগ পর। কিন্তু দুজনের পরিচিতি  একদম  চুপ করে গেছে,  ঠান্ডা  স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেছে আলাপচারিতা ঠিক দুজনের হাত ধরে রাখা  দু ভাঁড় চা এর  মত।  ওয়াইপারে এ তখন হয়ে চলেছে  ফ্ল্যাশব্যাকে তাদের পুরোনো  জীবন, সে ঠিকানা তারা ফেলে এসেছে  পিছনে।
অনেক ক্ষণ  পর  বৃষ্টি  ধরলে নীল শুধু  বলল, " তাহলে এবার যাওয়া যাক?"। তিয়াসা মাথা  নেড়ে  সম্মতি জানালো।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Kobitar Alo April Sankhya 2025

    প্রচ্ছদ ঋণঃ-  পিনাকী রায় (কণিষ্ক)