বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০২৪
সম্পাদকীয়
যে সুবিচারের দাবি আজ আছড়ে পড়ছে বাংলার প্রতিটি রাস্তায়, প্রতিটি ঘরে, তা যেন ছুঁয়ে গেছে এক অদম্য প্রতিবাদের ভাষা। আমরা ভুলতে পারিনি একটু একটু করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া মেধাবী ডাক্তারি ছাত্রীর সেই ক্ষতবিক্ষত মুখখানা। বাংলা আজ সম্মিলিত অগ্নিপুঞ্জ। সমস্ত বর্ণ, জাতি, রং মিলেমিশে একাকার। সৌজন্যে শুধুমাত্র কিছু নরপিশাচের হাতে অকালে ঝরে যাওয়া একটি ফুলের মত প্রাণ। আমরা আমাদের নূন্যতম সামাজিক নিরাপত্তাটুকু দিয়ে বাঁচাতে পারিনি আমাদের মেয়েকে। পরিবর্তে এই শিল্প-সংস্কৃতির নন্দনকানন তিলোত্তমা কলকাতায় কেড়ে নিয়েছি তার বহুমূল্য প্রাণটুকুই। তাই আজ নিজেরা নিজেদের ক্ষমা করতে বড় কষ্ট। যে শব্দ আজ ধ্বনিত হচ্ছে প্রতিটি রাস্তায়, যে সুবিচারের স্লোগান আজ আছড়ে পড়ছে জেলায় জেলায়, তার তীব্রতা পরিমাপযোগ্য নয়। মনুষ্যত্বের শেষ বিন্দুতে দাঁড়িয়ে আজ আমাদের পরীক্ষা দেওয়ার দিন। আসুন সকলে মিলে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সংকল্প গ্রহণ করি। শাসকের দরজায় আজ সকলে কড়া নাড়ি শুধুমাত্র সুবিচারের দাবিতে। এ আমাদের নাগরিক দায়বদ্ধতা এবং সেই ঝরে যাওয়া প্রাণের প্রতি নিজেদের লজ্জা প্রকাশ করবার তাগিদ। আমরা কবিতার আলোর পক্ষ থেকে এই মাসের ব্লগজিন সংখ্যার বিষয় হিসেবে বেছে নিলাম সেই প্রতিবাদের আওয়াজটুকুই। বাকি সব না হয় পরে হবে। জানিনা এই আওয়াজ গগণভেদী কিনা। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস, আজ সর্বস্তরের এই সম্মিলিত প্রতিবাদ ভয় ধরাবে দুর্বৃত্তায়নের আঁতুড়ঘরে৷ আসুন, আমরা আরও জোটবদ্ধ হই৷ ছড়িয়ে দিন আপনার প্রতিরোধের ফুলকিটুকুই৷ বাকি দাবানল তো কেবল সময়ের অপেক্ষা৷
আমাদের প্রতিবাদটাই হোক আপনার প্রতিবাদ৷ আমাদের ঝলসে ওঠা অক্ষর হোক আপনার শ্লোগানের ভাষা৷ এই সংখ্যাটি শেয়ার করে আপনিও সামিল হন আমাদের সাথে।
আসুন৷ সকলে এই সংখ্যার সমস্ত লেখা নিজেদের প্রতিবাদের স্বর হিসাবে গ্রহণ করি ও সমবেত কণ্ঠে বলি, "We want Justice"...
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
সম্পাদক, কবিতার আলো
কবিতাভিত্তিক (কবিতা বিভাগ)
মিউজিয়াম
শ্যামল জানা
ধর্ষণ করে মেরে ফেলার আগে
শেষ যে চিৎকারটি নাবালিকার মুখ থেকে বেরিয়েছিল,
সেটি নোংরা জলকাদা মেখে একাকী পড়েছিল
একটি নির্জন জলাশয়ের ধারে!
আমি তাকে কুড়িয়ে বাড়ি নিয়ে আসি;
কেচে, ইস্ত্রি করে, ভালো করে বাঁধিয়ে,
আমার ড্রইংরুমে টাঙিয়ে রাখি সেই চিৎকার...
তারপর থেকে প্রত্যেক দিন, আমার পূর্ব-পুরুষেরা নয়,
আমার পূর্ব-নারীরা একজন একজন করে,
আলাদা আলাদা ভাবে
আমার ড্রইংরুমে আসতে শুরু করেন!
আর, প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা করে
একইভাবে জিজ্ঞেস করেন—
এ চিৎকার তুমি কোথায় পেয়েছো?
এ তো আমার চিৎকার...
শেষ যে চিৎকারটি নাবালিকার মুখ থেকে বেরিয়েছিল,
সেটি নোংরা জলকাদা মেখে একাকী পড়েছিল
একটি নির্জন জলাশয়ের ধারে!
আমি তাকে কুড়িয়ে বাড়ি নিয়ে আসি;
কেচে, ইস্ত্রি করে, ভালো করে বাঁধিয়ে,
আমার ড্রইংরুমে টাঙিয়ে রাখি সেই চিৎকার...
তারপর থেকে প্রত্যেক দিন, আমার পূর্ব-পুরুষেরা নয়,
আমার পূর্ব-নারীরা একজন একজন করে,
আলাদা আলাদা ভাবে
আমার ড্রইংরুমে আসতে শুরু করেন!
আর, প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা করে
একইভাবে জিজ্ঞেস করেন—
এ চিৎকার তুমি কোথায় পেয়েছো?
এ তো আমার চিৎকার...
কবিতাভিত্তিক (কবিতা বিভাগ)
নিরাপত্তা
সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়
যদি তুমি খাবার না পাও
আমি তোমাকে খাবার দেব
দুদিন, দুমাস
এমনকি চাইলে দু বছর ।
যদি তুমি পোষাক না পাও
আমি তোমাকে কম্বল দেব
একটা, দুটো
এমনকি চাইলে দশটাও।
যদি তোমার থাকার
জায়গা না থাকে
আমি তোমাকে আমার বাড়ির নিচে থাকতে দিতে পারি
একদিন, দুদিন
এমনকী টুকটাক কাজের বেতনে
অনেক অনেক বছর।
আমি তোমাকে এভাবে
অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান
সব দিতে পারি।
তুমি যতটা ভেবেছ তার চেয়েও বেশি।
এবার তুমি কি ভাবছ আমি তোমার শিক্ষা নিয়ে কিছুই বলব না?
দাঁড়াও, আমি তোমাকে
খাতা বই এমনকি রঙ পেন্সিলও কিনে দিতে পারি
যা দিয়ে তুমি আঁকবে পাহাড়, পাখি, সূর্যোদয়।
কিন্তু তোমাকে যদি কেউ
রাতের মতো
এসে হত্যা করে
যদি কেউ তোমার যোনির ভেতর
সাঁড়াশি ঢুকিয়ে
বার করে আনে তোমার নাড়িভুঁড়ি,
তোমার লাশের উপর গেঁথে দেয় চকচকে সব পতাকা,
আমার কাছে আর কিছুই আশা করো না দেশ।
আমার কাছে
উদ্বৃত্ত কোনও নিরাপত্তা নেই।
আমি তোমাকে খাবার দেব
দুদিন, দুমাস
এমনকি চাইলে দু বছর ।
যদি তুমি পোষাক না পাও
আমি তোমাকে কম্বল দেব
একটা, দুটো
এমনকি চাইলে দশটাও।
যদি তোমার থাকার
জায়গা না থাকে
আমি তোমাকে আমার বাড়ির নিচে থাকতে দিতে পারি
একদিন, দুদিন
এমনকী টুকটাক কাজের বেতনে
অনেক অনেক বছর।
আমি তোমাকে এভাবে
অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান
সব দিতে পারি।
তুমি যতটা ভেবেছ তার চেয়েও বেশি।
এবার তুমি কি ভাবছ আমি তোমার শিক্ষা নিয়ে কিছুই বলব না?
দাঁড়াও, আমি তোমাকে
খাতা বই এমনকি রঙ পেন্সিলও কিনে দিতে পারি
যা দিয়ে তুমি আঁকবে পাহাড়, পাখি, সূর্যোদয়।
কিন্তু তোমাকে যদি কেউ
রাতের মতো
এসে হত্যা করে
যদি কেউ তোমার যোনির ভেতর
সাঁড়াশি ঢুকিয়ে
বার করে আনে তোমার নাড়িভুঁড়ি,
তোমার লাশের উপর গেঁথে দেয় চকচকে সব পতাকা,
আমার কাছে আর কিছুই আশা করো না দেশ।
আমার কাছে
উদ্বৃত্ত কোনও নিরাপত্তা নেই।
কবিতাভিত্তিক (কবিতা বিভাগ)
নাঝিলম ত্রিবেদী
নিরাপত্তাহীনতা দিয়ে গড়েছ সমস্ত শরীর
অন্ধকারে মিশে যাব তেমন উপায় রাখনি তো
ভ্রূণহত্যার দায় মাথা পেতে নিয়েছি এই দেখো
তবু আমি মেয়ে হয়ে মেয়ে হয়ে উঠছি ক্রমাগত
যৌনতাসর্বস্ব আমি সম্ভোগের উন্মোচন শুধু
পাঁচজনে ছিঁড়ে খাবে এটাই তো সমাজ দস্তুর
বাজারে বিকোচ্ছি সব মেয়েরাই কুশপুত্তলি
নিজেকে পুড়িয়ে সেই আগুনেই পরীক্ষা হোক
শরীরে বিপন্ন আমি, মনে নই বিকলাঙ্গ ক্লীব
যোনির আঁধার দিয়ে গড়ে তুলি সমাজ সংসার
আমাকে বস্ত্র তুমি দিও না কৃষ্ণ শুধু শোনো---
কামনা করলে ওই লিঙ্গ আমি টেনে ছিঁড়ে দেব!
অন্ধকারে মিশে যাব তেমন উপায় রাখনি তো
ভ্রূণহত্যার দায় মাথা পেতে নিয়েছি এই দেখো
তবু আমি মেয়ে হয়ে মেয়ে হয়ে উঠছি ক্রমাগত
যৌনতাসর্বস্ব আমি সম্ভোগের উন্মোচন শুধু
পাঁচজনে ছিঁড়ে খাবে এটাই তো সমাজ দস্তুর
বাজারে বিকোচ্ছি সব মেয়েরাই কুশপুত্তলি
নিজেকে পুড়িয়ে সেই আগুনেই পরীক্ষা হোক
শরীরে বিপন্ন আমি, মনে নই বিকলাঙ্গ ক্লীব
যোনির আঁধার দিয়ে গড়ে তুলি সমাজ সংসার
আমাকে বস্ত্র তুমি দিও না কৃষ্ণ শুধু শোনো---
কামনা করলে ওই লিঙ্গ আমি টেনে ছিঁড়ে দেব!
কবিতাভিত্তিক (কবিতা বিভাগ)
শুয়োর নিধন যজ্ঞরাহুল গুহ
গা ঘিনঘিনে অসহ্য পোকামাকড়ের বাস
দূর্গন্ধ - জমে থাকা পচা নর্দমার জল - শুয়োরের দাপাদাপি
আর খোলা বাজারে বিক্রি হওয়া স্বপ্নদের নিচু হওয়া মাথা
আমাদের চারদিকে এখন সবকিছু বড় অসহায়
আর তার মধ্যে ভয়ে ভয়ে বেঁচে থাকাটাই অভ্যেস
আর এইরকম এক বিধবা রাত্রে
একটি গোলাপের মৃত্যু হয়
কয়েকটি শুয়োর তার এক একটি পাপড়ি ছিঁড়ে নেয়
নস্ট করে তার সবকিছু
তারপর জুতোর নিচে পিষে মেরে ফেলে
অসহায়তার মধ্যেও আমরা শিউরে উঠি
পায়ে পায়ে বেরিয়ে আসি রাস্তায় -
কোনোভাবে মনে পড়ে যায় আমি - ”মানুষ”
এইসব শুয়োরদের সঙ্গে লড়াই করেই আমি মানুষ
আমার মশালের আলো
আমার কপালের চিন্তার ভাঁজ
আমার উদ্দাত্ত কন্ঠে গান
আমার ধরে থাকা অন্য আর একটি হাত
এইসব অস্ত্র দিয়ে গত লক্ষ লক্ষ বছর ধরে
আমি শুয়োরদের শিকার করেছি
আমার অসহায়তার অন্ধকার এখন
মশালের আলোতে উজ্জ্বল
এই আগুনে সিদ্ধ হোক শুয়োরের খোঁয়াড়
কবিতাভিত্তিক (কবিতা বিভাগ)
জনতার হকের লড়াই
পিনাকী দত্ত গুপ্ত
কার দিকে তুলবো আঙুল?
কার হাতে পড়াই শিকল?
দেখি মুখ আয়নাতে আজ,
দেখি হৃদযন্ত্র বিকল!
দেখি আজ শেয়াল কুকুর,
দু-আনার ন্যাংটো সেপাই,
হাতে তার ন্যায়ের ধ্বজা...
মন চায় জ্যান্ত কোপাই!
রাজা তোর স্পর্ধা কত?
রাণী তোর কিসের বড়াই?
দেখ, আজ বাংলা লড়ে
জনতার হকের লড়াই!
কবিতাভিত্তিক (কবিতা বিভাগ)
ক্ষত
বিকাশ ভট্টাচার্য
অমর্ত্য শবধন্যার
এই রাত্রি ক্ষতচিহ্নিত
সুশ্রুত কন্যার।
এই রাত্রির চোখ ফেটে রুধি
দম ফাটে নিশ্বাসের
আলো জ্বালবার ভালবার ছেঁড়ে
বিলাসকলার লালসে।
শুধু রক্ত মেঠোরক্তের
স্নানজলে ভরা দহে
ভেসে ওঠা হৃদিপদ্মের
লাশগুলো প্রত্যহের।
এই রাত্রি পথযাত্রীর
রাতজাগা করিডোর
এই রাত্রি মুছে দেবে ক্ষত
অনীকে আয়ুধে সত্বর।
কবিতাভিত্তিক (কবিতা বিভাগ)
মিছিলের পথ
নন্দিনী সেনগুপ্ত
মিছিলের পথ নদী পেরিয়েছে আজ
তুমি কি বেঁধেছ প্রতিশ্রুতির সেতু?
ভুলভ্রান্তির প্রাচীর ভাঙার আওয়াজ
ঢেকে দেয় মিছে কথা সাজাবার হেতু।
#
কত কথা কবি সাজাবে খাতার পাতায়
অক্ষরমালা মিছিল ছাপিয়ে চলে।
মানুষ মানুষ ঢাকবে কি কবিতায়?
মশালের মত শিরোনামে আলো জ্বলে।
#
কবি তুমি আজ কলমটা রাখো তুলে
মশালের মত জ্বলুক তোমার শোক।
অপেক্ষা থাক পঙক্তিগুলোর চোখে,
আজ রাত্রির মিছিলেই দেখা হোক।
তুমি কি বেঁধেছ প্রতিশ্রুতির সেতু?
ভুলভ্রান্তির প্রাচীর ভাঙার আওয়াজ
ঢেকে দেয় মিছে কথা সাজাবার হেতু।
#
কত কথা কবি সাজাবে খাতার পাতায়
অক্ষরমালা মিছিল ছাপিয়ে চলে।
মানুষ মানুষ ঢাকবে কি কবিতায়?
মশালের মত শিরোনামে আলো জ্বলে।
#
কবি তুমি আজ কলমটা রাখো তুলে
মশালের মত জ্বলুক তোমার শোক।
অপেক্ষা থাক পঙক্তিগুলোর চোখে,
আজ রাত্রির মিছিলেই দেখা হোক।
কবিতাভিত্তিক (কবিতা বিভাগ)
হোক প্রতিরোধজয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
অন্ধকার ঘন হলে চেনা গাছও রাক্ষস হয় --
সূত্র বদলায়
চেনা ছায়া,ডালপালা,পাতার বিস্তার
দাঁত-নখ-হাত
সাঁড়াশির মুখ ও কামড়,সবই অচেনা
সেই হাসিমুখ,অক্সিজেন,সাক্ষীভাব,সমব্যথা...
সব মিথ্যা ? সত্য তবে অন্ধকার ? সত্য তবে অবিশ্বাস ?
সত্য দেখি কবচকুণ্ডল !
কার কাছে রাখবে প্রত্যয় ?
অনাবিল হাসি বিজ্ঞাপনী দাঁত আবেগী সুগন্ধ
উদারতা ভাব... সেগুলোই অন্ধকারে কমোডো ড্রাগন
যার কাছে স্বজাতি স্বজন নেই,ফুল বলে কিছু নেই,
শুধুই খাবার
অবচেতনার বনে খাদকের বাস
যুক্তিহীন লজ্জাহীন প্রেমহীন হায়নার দল
আর কতদিন ফুলের বাগানে জ্বালাবে আগুন ?
এখন সময় সমবেত প্রতিরোধ,বিরুদ্ধ স্লোগানে
হোক সগর্জন তীব্র প্রতিবাদ
প্রতিবাদ তীব্র হলে পুড়ে যায় ধর্ষকাম রাক্ষসের দল
কবিতাভিত্তিক (কবিতা বিভাগ)
হাজার খিদে, একটি জিভ
পিয়াংকী
তুমি ধর্মভীরু বলে
আমি হাতে তুলে নিয়েছি ব্যাবিলনের ঝুলন্ত শরীর
এসো ত্রিবেণীসঙ্গমে
এসো গেঁথে দিই বর্শা
তিরস্কার শেষে পড়ে থাকুক যৌথ সাপচুরি
অন্ধকার তোমাকে সাহস দিয়েছে
সম্মতি দিয়েছে দাউদাউ শরীরের
শোক আর ক্ষতজলে যখন স্নান করছি...
বুকের ওপর লবনাক্ত পুরুষের অক্ষম বীর্য
এসো বদ্বীপ নিয়ে যাও।
ছুরি চালানো শিখেছ?
ঘোষণা করো জেহাদ
নব্বই ডিগ্রিতে পা আর একশো আশিতে দেহ
অবিক্রিত পালক পাখনা আমার
ছেঁড়া জামা, উলঙ্গ অত্যাচার
তোমরা তো জানো না কী অসম্ভব চিৎকারে আমি ডেকেছিলাম প্রত্যেককে
বাঁচার আর্জি। হাহাকার
শোনোনি, কারণ তোমাদের ঘুম ছিল
ঘুমে সুখের স্বপ্ন ছিল
আমি একা নিঃসঙ্গ অসহায়...
উল্লাস নিয়ে ক'দিনই বা পেট ভরবে তোমার
খিদেকে বীর্য দিয়ে প্রতিস্থাপিত করলে দিনশেষে পড়ে থাকবে -- জমাট রক্ত
এর চেয়ে বরং এসো রক্তাক্ত করো
জখমের রঙে ভরিয়ে ফেলো আমার যৌনপথ
অপেক্ষা করো,প্রকৃতি সুদসহ ফেরৎ দেয় যাবতীয়...
আমি আমার জাস্টিস চাই না
আমি চাই-
ভাতের বদলে তোমাকে অগুনতি শরীর দিক ঈশ্বর
কবিতাভিত্তিক (কবিতা বিভাগ)
প্রতিবাদের কবিতা
অমিতাভ সরকার
লক্ষ কোটি আগুন যখন
ছবির ভিতর এক জায়গায়
সবার মনের বিষাদ জ্বালা
অন্যায়েরই পথ আগলায়
মানুষ আগে- মা মেয়ে যা হোক
কণ্ঠে কষ্ট হুহুঙ্কার
সামনে আসুক আসল সত্যি
মিথ্যা প্রলাপ কী দরকার
সবাই এখন ভীষণ ক্ষেপে
'রণং দেহি' যুদ্ধ চাই
সুবিচারের আশায় মানুষ
আর কতদিন হামবড়াই
যার যা শক্তি অস্ত্র সেটাই
আরওই জোরে আওয়াজ দিন
ফুল ঘাঁটা তো অনেক হলো
আজ মরলে কাল দু-দিন।
কবিতাভিত্তিক (কবিতা বিভাগ)
প্রতিবার এক-একটি মেয়ে
রহিত ঘোষাল
শুধু কি একজন মরেছে
আমরা সবাই জীবিত...
ঠিক জানো একটি মেয়ে,
প্রতিবার এক-একটি মেয়ে
কখনো পাহাড়ে, কখনো থানায়
কখনো জলে-নর্দমায়
অকালে ঝরে পড়েছে,
ঠিক জানো একটি ঘটনা
ঘটেছে-ঘটে চলেছে,
নীল সে রক্ত চোখে দেখা যায়
চোখে দেখা যায় না
এই দ্বৈত ভূমিকায়
আমাদের রেখে ওরা চলে যায়
তারপর ঘুম-খিদে মরে যায়
আমরা মরি না
ঠিক জানো আমরা মরি না
কবিতাভিত্তিক (কবিতা বিভাগ)
গমক্ষেত
জয়িতা বসাক
ফসলের ছেঁড়া শীষে শেষ চুম্বন রেখে যায়...
শিশিরের ফোঁটারা ভারী হয়ে নেমে আসে
রাতের নরম দু'গাল বেয়ে চুপিসারে...
ক্ষয়াটে একফালি জ্যোৎস্নার মাঝে মুখবুজে
রোজ পড়ে থাকে পরীদের অজস্র চিৎকার;
অন্ধকার ছিঁড়ে নেয় ডানা, ভেঙে দেয় মেরুদণ্ড
নক্ষত্র আলোয় মৃত শ্বাস ওড়ে, একান্ত গোপনে...
শুধু গর্ভবতী ক্ষেত জানে এ লজ্জার ইতিকথা...
প্রতিটি শস্যদানা, মাতৃগর্ভে বসে শোনে আর্তনাদ;
আজ, যে কোনো রুটির প্রতিটি টুকরো থেকে
একটা একটানা যন্ত্রণা, অব্যক্ত কান্না শুনতে পাই,
খিদের থালায় গড়িয়ে নামে রক্তক্ষরণের ইতিহাস...
কবিতাভিত্তিক (কবিতা বিভাগ)
চিকিৎসা
অম্লান বাগচী
ওরা আমার কোন কথাই শুনলো না। আমি বারবার
বলা সত্ত্বেও ফিরিয়ে দিতে চাইলো আমাকে।
আমার কোন পরীক্ষায় ন্যূনতম উৎসাহ দেখালো না
দেখলো না আমার নাড়ি টিপে। ব্লাড প্রেশারের কোন
সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলো না।
আমি দেখাতে চাইলাম রিপোর্ট
হাতে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলো
আমার সমস্যার কথা শুনতে ওদের কেন এত অস্থিরতা!
আমি বুঝতে পারছিলাম আমি সুস্থ নেই। বুঝতে
পারছিলাম আমার মেডিক্যাল অ্যাসিসটেন্সের খুব
দরকার। অথচ ওরা আমাকে তাড়ানোর জন্য
মরিয়া হয়ে উঠেছিল।
আমি জানি, ওদের মুখ দেখা যায় না। ওদের অদৃশ্য
গতিবিধি ধরা পড়ে না কোন সি.সি.টি.ভি. ক্যামেরায়।
অথচ ওদেরই খুব দরকার ছিল আমার।
একটা প্রশ্নের অসুখ যে আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছিলো...
ওদের জিজ্ঞাসা করে ওদের কাছেই জানতে হ'তো ----
আসলে কার চিকিৎসার প্রয়োজন?
বলা সত্ত্বেও ফিরিয়ে দিতে চাইলো আমাকে।
আমার কোন পরীক্ষায় ন্যূনতম উৎসাহ দেখালো না
দেখলো না আমার নাড়ি টিপে। ব্লাড প্রেশারের কোন
সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলো না।
আমি দেখাতে চাইলাম রিপোর্ট
হাতে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলো
আমার সমস্যার কথা শুনতে ওদের কেন এত অস্থিরতা!
আমি বুঝতে পারছিলাম আমি সুস্থ নেই। বুঝতে
পারছিলাম আমার মেডিক্যাল অ্যাসিসটেন্সের খুব
দরকার। অথচ ওরা আমাকে তাড়ানোর জন্য
মরিয়া হয়ে উঠেছিল।
আমি জানি, ওদের মুখ দেখা যায় না। ওদের অদৃশ্য
গতিবিধি ধরা পড়ে না কোন সি.সি.টি.ভি. ক্যামেরায়।
অথচ ওদেরই খুব দরকার ছিল আমার।
একটা প্রশ্নের অসুখ যে আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছিলো...
ওদের জিজ্ঞাসা করে ওদের কাছেই জানতে হ'তো ----
আসলে কার চিকিৎসার প্রয়োজন?
কবিতাভিত্তিক (কবিতা বিভাগ)
রূপকথার গল্পপার্থপ্রতিম সেনগুপ্ত
গল্প লিখছি রূপকথার
রাক্ষসদের ভরা দেশ।
কন্যাশিশু, নারী শরীর,
চিবিয়ে খাচ্ছে নির্বিশেষ।
আমার গল্পে দিনের বেলায়
নিকষ কালো অন্ধকার,
মোমের আলো হচ্ছে ফিকে,
ভীড় জমছে রাত পোকার।
ভাবছো এবার আসবে বুঝি
দারুণ বীর এক রাজকুমার,
রাক্ষসদের মারবে ধরে,
যুদ্ধ হবে ধুন্ধুমার।
সত্যি বলছি আমিও চাই,
কিন্তু তাকে আনবে কে?
কালি আমার ফুরিয়ে গেছে,
গল্প লেখা বন্ধ যে!
কবিতাভিত্তিক (কবিতা বিভাগ)
তিলোত্তমা
শ্রাবন্তী বিশ্বাস
সভ্যতার প্রদীপ নিভে গেছে-
নিঃশ্বাসে অবিশ্বাসী বিষ!
যতদূর গলা যায় চিৎকার করো,
ধর্ষকের আয়না আঙুল তুলুক।
ওরা,স্টেথোস্কোপ দিল স্তব্ধ করে-
রাতের আড়ালে অসুর সাজ...
যে মেয়েটির ফেরার কথা ঘরে,
সেমিনার হলে লাশ।
পূর্বাভাস কি কিছুই ছিল না–
শয়তানের আঁকা নকশায় ?
হয়তো ছিল বুকচাপা–
ষড়যন্ত্রের আভাস।
হিংসা লোলুপ নখের আঁচড়
ছেপেছো পূর্ণ শরীরে ।
পাশবিক যে হত্যালীলায়
রক্তপানি দু'চোখে ।
যৌনতা ভরা উদ্দামতায়
সব সীমা করল পার।
মানুষের বেশে খুনি ঘুরছে
আমাদেরই সমাজে।
যতবার তোমরা রাক্ষসরূপে,
ছিন্ন করো সম্ভ্রম
রাতের আঁধার সজাগ হলো
প্রতিবাদীর মোম...
উন্মুখ রাজপথে নির্যাতিতার মিছিল,
বিচারের বাণী গুনছে প্রহর
শাস্তি ক্ষমাহীন।
কবিতাভিত্তিক (কবিতা বিভাগ)
রাত দখলে সব নারীরা
সবুজ বাসিন্দা (সুপম রায়)
সস্তা ভীষণ নারীর শরীর
যা খুশি তা করাই তো যায়,
হোক প্রতিবাদ রাত্রি জুড়ে
দখল করুক সব নারীরাই।
প্রমাণ লোপাট, গল্প ভিন্ন,
শরীর পড়ে লাশের ঘরে,
ধর্ষণ করে বলাই তো যায়
আত্মহত্যা কিসের তরে?
ভরসা কোথায় রাখবে মানুষ -
সরকার, পুলিশ, আইনী খাতায়?
হোক প্রতিবাদ শহর জুড়ে
রাত্রি জাগুগ সব নারীরাই।
১৪ই আগস্ট সাক্ষী থাকুক,
রাত দখলে সব নারীরা।
দেশটা সবার এমনটা হোক
শাস্তি পাক সব খুনীরা।
কবিতাভিত্তিক (কবিতা বিভাগ)
খোলাবাজারি রাত
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
আজ ঘুমোনোর রাত নয়
ছিন্নভিন্ন যোনী অর্জন থেকে নিজের বিবৃতি প্রস্তুতি
একনিষ্ঠ জড়ো করা ঘুম বিকিয়ে যাচ্ছে জলের দরে
জমানো আদরের স্বপ্নে বিক্রয়মূল্য
দাবী করিনি আমি।
সবটুকু নিঃশেষ হবার পর খোলাবাজারে সাজিয়ে রেখেছি রাতের মোড়ক।
প্রদর্শনীতে দাঁড়ানোর শ্রেষ্ঠ সময় সকাল
তাই আজীবন সঞ্চয় করেছি অতিরিক্ত চাদরের কোণ।
না, আজ ঘুমোনোর রাত নয়
নিজেকে আষ্টেপৃষ্টে পুড়িয়ে নেবার রাত
সমস্ত স্বপ্ন ফুরিয়ে যাবার পর
পণ্য হিসাবে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখব দগদগে পোড়া ঘা।
এরপর আর ঘুম আসেনি ছিটেফোঁটা
লাভক্ষতির অংকে খোলাবাজারি রাতকেই আমি একক ধরে এগিয়ে গেছি বাকি পথ।
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
আজ ঘুমোনোর রাত নয়
ছিন্নভিন্ন যোনী অর্জন থেকে নিজের বিবৃতি প্রস্তুতি
একনিষ্ঠ জড়ো করা ঘুম বিকিয়ে যাচ্ছে জলের দরে
জমানো আদরের স্বপ্নে বিক্রয়মূল্য
দাবী করিনি আমি।
সবটুকু নিঃশেষ হবার পর খোলাবাজারে সাজিয়ে রেখেছি রাতের মোড়ক।
প্রদর্শনীতে দাঁড়ানোর শ্রেষ্ঠ সময় সকাল
তাই আজীবন সঞ্চয় করেছি অতিরিক্ত চাদরের কোণ।
না, আজ ঘুমোনোর রাত নয়
নিজেকে আষ্টেপৃষ্টে পুড়িয়ে নেবার রাত
সমস্ত স্বপ্ন ফুরিয়ে যাবার পর
পণ্য হিসাবে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখব দগদগে পোড়া ঘা।
এরপর আর ঘুম আসেনি ছিটেফোঁটা
লাভক্ষতির অংকে খোলাবাজারি রাতকেই আমি একক ধরে এগিয়ে গেছি বাকি পথ।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)
প্রচ্ছদ ঋণঃ- অদিতি সেনগুপ্ত

-
প্রচ্ছদ ঋণঃ- দেবদুত মুখোপাধ্যায় সূচীপত্র ----------------------- প্রচ্ছদ ------------------ দেবদুত মুখোপাধ্যায় সম্পাদকীয় কলাম ------------...