খুকি ও পাখিওয়ালা
হারাধন ভট্টাচার্য্য।
"পাখি পুষবেন গো,পাখি," হাঁক দেয় পাখিওয়ালা
ডাক শুনে দোতলার গবাক্ষ থেকে দেখে মধুবালা।
"ও পাখিওয়ালা,দাঁড়াও,শুনতে পাচ্ছ,পাখিওয়ালা"/ পাখিওয়ালা চমকে ওঠে,- কে ডাকে কোন্ সে বালা!
পুরনো রাজবাড়ী, সিংহদরজা সামনে ছোট্ট মেয়ে-/ পাখিওয়ালা অবাক চোখে,তারই চোখে রইল চেয়ে,
স্বর্ণচাঁপা গায়ের বরণ, মুখ খানি তার পরীর গড়ন
কোন্ দেবকন্যা,মায়াভরা কাজল কালো দুটি নয়ন।
"ও পাখিওয়ালা, কী কী পাখি দেখাও না একবার "
কাছে গিয়ে পাখিওয়ালা,শোনায় তার পাখি-বাহার।
জয়"এই দেখ টিয়া, চন্দনা, বুলবুলি, ময়না,শ্বেতকবুতর
আর কী পাখি নেবে, তুমি চাইলে খুঁজব তেপান্তর।
"তোমার খাঁচার সব পাখিই নেব,কত দাম বলো চটপট,
দেখ না ওরা নীল আকাশে ওড়ার জন্য করছে ছট্ফট্,/ ডাকছে ওদের নীল আকাশ,ডাকছে ঐ সবুজ বনতল "
বলল খুকি, পাখিওয়ালা শূন্যে তাকায়, চিন্তায় বিহ্বল।
"এ তো অনেক দাম, তুমি কি কিনতে পারবে ও মেয়ে, বিনি পয়সায় একটি পাখিই তোমায় দিলাম তার চেয়ে"
বলেই পাখিওয়ালা চাইল খুকির চোখে।
বলল মধুবালা
"সব পাখির দাম হবে না, দিই যদি এই সোনার বালা?"
"তোমার হাতের সোনার কঙ্কন,আমি নেবে কেমন ক'রে
ওর দাম তো অনেক টাকা,ও খুকি যাও গো ঘরে ফিরে"
বলল পাখিওয়ালা।
"এ বালা লাগে না কোনো কাজে, পাখিগুলোকে দাও গো ছেড়ে, ভীষন কষ্ট খাঁচার মাঝে,/
মাকে ছেড়ে ওরা কি থাকতে পারে, ওদের মা'রা কাঁদে
বলো, তোমায় যদি কেউ ফন্দি ক'রে,বন্দী করে ফাঁদে।"
বলেই খুকি বাড়িয়ে দিল হাতের সোনার বালাখানি ---
ছোট্ট খুকির কোমল কথায় কি ভাবল,বলল,"মামণি
তোমার সোনার বালা আমার পাখির চেয়েও দামি
ওটা তোমারই থাক, ওটা না হয় তোমায় দিলাম আমি,
সব পাখিই তোমায় দিলাম, মুক্ত করো নিজের হাতে উড়িয়ে দাও ওদের নীল আকাশে, ভাসুক আনন্দেতে।/ তোমার জন্য চিরতরে ছেড়ে দিলাম পাখি ধরার কাজ,
তোমার কাছে শিখে নিলাম মুক্তির আনন্দ কি দরাজ!
নীল আকাশে ডানা মেলে পাখিরা গাইল কতো গান
খুকি ও পাখিওয়ালা রইল চেয়ে আনন্দ বিহ্বল প্রাণ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন