শনিবার, ২০ জুলাই, ২০২৪

ডাকঘর

আজ বিকেলের ডাকে তোমার চিঠি পেলাম 

পার্থ মুখোপাধ্যায় 




প্রিয়মুখ,


"আজ বিকালের ডাকে তোমার চিঠি পেলাম"। এই চিঠির অপেক্ষায় আজ আর কেউ থাকেনা। অতীতে চিঠি লেখার পর প্রত্যুত্তরের জন্য দরজায় অপেক্ষা করত পরিজনেরা। এটা ছিল খুব স্বাভাবিক। যুগ বদলেছে। আমরা বদলেছি। "একটা মেসেজ করে দিও" এখন এটি একটি সাধারণ কথা। তবুও চিঠি লেখার অতীত নিয়ে কখনোও কখনোও মনে হয় এসব কথা। তাই ইচ্ছে হল আজ তোমাকে চিঠির নস্টালজিয়ায় ভিজিয়ে দিই। মূল স্রোতে ফেরা যাক। জানো, কবিগুরু তাঁর জীবনে প্রায় সাড়ে সাত হাজার চিঠি লিখেছিলেন। তাঁর লেখা সাহিত্যের অন‍্যান‍্য বিষয়ের চেয়ে চিঠি বোধহয় কিছু কম হবেনা। একথা স্বয়ং তিনি জানিয়েছিলেন ক্ষিতিমোহন সেন কে। তাঁর চিঠির ধারা বিভিন্ন জনের জন‍্য ছিল বিভিন্ন রকম। তবে নারীদের  কাছে লেখা তাঁর চিঠিগুলো যেন একটু বেশিই পক্ষপাত দুষ্ট। কবি অমিয় চক্রবর্তীর মা অনিন্দিতা দেবীকে লেখা চিঠির মধ্যে কবিগুরু বলেছিলেন "মেয়েদের দুঃখ ও অবমাননায় চিরদিন আমি দুঃখ ও বেদনাবোধ করি"। 

পত্নী মৃণালিনী দেবীকে প্রায় ৩৬ টির মতো চিঠি তিনি লিখেছিলেন। ইতিউতি চিঠি আরোও দুই একটি পাওয়া গেলেও প্রত্যুত্তরে সাতটির বেশি চিঠি পাননি। এক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের অনুযোগ, "বড় হোক, ছোট হোক, ভালো হোক, মন্দ হোক, একখানা করে চিঠি আমাকে রোজ লেখ না কেন, ডাকের সময় চিঠি না পেলে ভারী খালি ঠেকে।" তাঁর দুই কন্যা বেলা ও মীরাকেও কবি চিঠি লিখেছিলেন। জ‍্যেষ্ঠা বেলাকে পাঁচটির মতো চিঠি লিখেছিলেন, অপরদিকে কনিষ্ঠা মীরা দেবীকে লিখেছিলেন ৮১টির মত চিঠি। এর মধ্যে সবচাইতে মর্মস্পর্শী চিঠিটি লিখেছিলেন মীরার একমাত্র পুত্র নীতিন্দ্রনাথের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে। 


"শমী যে রাত্রে গেল তার পরের রাত্রে রেলে আসতে আসতে দেখলুম জ্যোৎস্নায় আকাশ ভেসে যাচ্চে, কোথাও কিছু কম পড়েচে তার লক্ষণ নেই। মন বললে কম পড়েনি— সমস্তর মধ্যে সবই রয়ে গেছে, আমিও তারি মধ্যে। সমস্তর জন‍্য আমার কাজও বাকি রইল। যতদিন আছি সেই কাজের ধারা চলতে থাকবে।" পুত্র শমীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর একথা লিখেছিলেন কবিগুরু।


পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীকে ১১৫ টি চিঠি লিখেছিলেন। ইন্দিরা দেবীকে (তার ভ্রাতুষ্পুত্রী) লেখা চিঠি গুলি 'ছিন্নপত্র' নামে প্রকাশিত হয়েছে। এই চিঠি প্রকাশের জন্য কবিগুরু তাঁর সম্মতিও নিয়েছিলেন। নির্মলা কুমারী মহলানবীশ কে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক চিঠি লিখেছিলেন তিনি। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য নির্মলা কুমারী মহলানবীশ কবিগুরুর মৃত‍্যুরদিন পর্যন্ত তাঁর পাশেই ছিলেন। লেডি রানী মুখার্জিকে লেখা ৫৯টি চিঠি সংকলন যা 'ভানু সিংহের পত্রাবলী' নামেই খ্যাত। অবশ্য সব মিলিয়ে ২০৮ টি চিঠির আদান প্রদান লেডি রানু মুখার্জির সঙ্গে হয়েছিল। 


আসলে এই চিঠির আদান-প্রদানের বহু সূত্র মৃত্যুর পরও দলিল হিসেবে রয়ে যায়। বর্তমানে চিঠির গুরুত্ব কমলেও ব্যক্তিগত স্তরের মেসেজের আদান-প্রদান কখনোও সাধারণ, কখনোও রাজনৈতিক কখনোও বা একান্ত ব্যক্তিগত। সবই রয়ে যায়। হাতে লেখা চিঠির সঙ্গে তুলনা করলে এর রূপ বদল হলেও "জীবন মরণের সীমানা ছাড়িয়ে "-- এই বার্তাগুলিরও কখনোও কখনোও ঐতিহাসিক মূল্য থেকে যায় বৈকি। অসুস্থ অবস্থায় কিছু চিঠি কবিগুরু নিজে হাতে লেখেননি। তাতে চিঠির গুরুত্ব কিছুমাত্র কমে না। বর্তমানের বার্তা আদান-প্রদানের জগতেও এমন বহু তথ্য থেকে যায় তা প্রামাণ্য এবং অন্যের কাছে সুরক্ষিত থাকে। যাকে বলা যেতে পারে #Golden Treasury... 


যাকগে অনেক কথা লিখে ফেললাম। আসলে এই কথাগুলো তোমার সঙ্গে চিঠি লিখেই ভাগ করে নিতে ইচ্ছে হল। এর উত্তরও এমন আকাশ রঙা ইনল‍্যান্ডেই চাই কিন্তু। 


ভালো থেকো, ভালো রেখো।।


ইতি 


পার্থ মুখোপাধ‍্যায়

২টি মন্তব্য:

Kobitar Alo October Sankhya 2025

  প্রচ্ছদ ঋণঃ-  অদিতি সেনগুপ্ত