নীরবতার অনুবাদ
কাকলি দাশ বন্দ্যোপাধ্যায় মা ,তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ মা?
ঘুমাও ,মা ঘুমাও ,
কতদিন ঘুমাও নি তুমি !
মা শোন, আমার চেম্বার ঘরটা ভাড়া দিয়ে দিও ,
আমার জমানো টাকাটা দিয়ে তোমার গলার হারটা ছাড়িয়ে এনো ,
বাবার বাড়ি করার স্বপ্নটা আর পূরণ করতে পারলাম না মা আমায় ক্ষমা করো।
মা তুমি শুনছো?
আমার মাথায় একটু বিলি কেটে দেবে
না থাক তুমি ঘুমাও,
সেদিনও গহন রাতের ক্লান্তির পাশে এমন উপুড় হয়ে শুয়ে ছিল তোমার শুশ্রূষা-
সে জানতো গভীর ঘুমচিহ্নের আবাসভূমি পেরোলেই ভোরের ললিত রাগ শোনাবে তার ঘরে ফেরার গান,
কিন্তু অবচেতনে উপাসনার ক্যানভাস থেকে কিছু অপরিশোধিত শব্দের আনাগোনা তার স্বস্তিকে অবরুদ্ধ করেছিল বারবার -
ঠিক তখনই স্বপ্নের পাশে বসে তোমার এই মেয়েটা সলমা চুমকি দিয়ে লজ্জাবস্ত্র বুনতে বুনতে একটা নদী হয়ে বয়ে চলল ছলছল ছলছল...
হঠাৎই প্রেক্ষাপট বদলঃ
সেই মায়াচ্ছন্ন রাতেঃ
নদীর বুকে হঠাৎই হানা দিল কৌশলী দস্যুর বেপরোয়া উমেদারদল...
ষড়যন্ত্রীদের আদিম হাত নারীর মর্যাদা বাস্তুচ্যুত করতেই সারা শরীরে বেজে উঠল সাইরেন,
মস্তিষ্কের সংকেতে রক্তরসে ছড়িয়ে পড়লো এপিনেফরিন,
সেরিব্রাম চিৎকার করে উঠলোঃ
ফাইট মেয়ে ফাইট, ফাইট অর ফ্লাইট।
ততক্ষণে পাকদণ্ডী বেয়ে অগণিত কামপরবশ কীট শরীরের অলিগলির দখল নিয়ে খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে তার ঐশ্বর্য।
গোপন সুড়ঙ্গ আবিষ্কারের পৈশাচিক উল্লাসে বেপরোয়া পৌরুষ ঠোঁট গাল স্তন উরু জঙ্ঘায় বসাচ্ছে স্নেহহীন শ্বাদন্তের তীক্ষ্ণতা।
শ্বাপদদের জিভের লালারস আর রক্তে ভিজে যাচ্ছে উন্মুক্ত যৌবন।
যন্ত্রণায় নীল হওয়া শরীরটার দুটো পা চিরে ধরে, হাত পা মুখ বেঁধে অশ্লীলতার অনুবাদ করতে উন্মত্ত যখন ওরা, তখন শেষবারের মত সব শক্তি এক করে চিৎকার করে মেয়েটা বলেছিল, "এ অন্যায়ের শাস্তি তোরা পাবি"
আর সহ্য করে নি
ওই কালনেমীর দল এই তেজ।
বুকের উপর চেপে বসে এক্কেবারে গলাটা চেপে ধরল একজন অনুগত
আর এক নরপিশাচ তখনই আমার মুখের উপর চেপে বসলো যাতে সব শ্বাসপথ রুদ্ধ করা যায়।
জানো তখনও ধর্ষকাম নরখাদকরা আমার দেহের প্রতিটি অধ্যায় ভোগ করে
চলেছে।
ওরা ভেবেছিল
আমাকে দুর্বল করে
হত্যা করে নামহীন গোত্রহীন বেওয়ারিশ করবে।
ওরা জানতো না আমি আগুনপাখি -ফিনিক্স
একটা আমি-র থেকে
আজ জন্ম নিয়েছে
হাজার হাজার তিলোত্তমা হাজার হাজার অভয়া
তারা তোমার পাশে অসুরদলনী দুর্গার মতো
শয়তানগুলোকে ধরো মা, ওদের ধরো।
ওদের পালাতে দিও না
ছিঁড়ে দাও ওদের কদর্য মুখের উপর সাঁটা মোহন মুখোশ
চোখের জলে নিভিয়ে ফেলো না মা বুকে জ্বলা চিতার ওই আগুন-
দৃঢ়তার মাপকাঠিতে রেখোনা কোনো ক্ষয়।
ওরা সুযোগসন্ধানী, ওৎপেতে আছে যে কোন সময় ভিটের অবসাদ জরিপ করে দুর্যোধনী কায়দায় ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করে
সওদা করবে তোমার দারিদ্রের।
ওরা এলে তোমাদের মেরুদন্ডটা সামলে রেখো মা।